শহীদ আসলাম হোসাইন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১৭ নভেম্বর ১৯৮৮ | ২৪

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

আশির দশকের শুরু থেকেই ছাত্রশিবিরের ওপর মারাত্মক সব আঘাত হানতে শুরু করে সেক্যুলারিজম আর সমাজতন্ত্রের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি করনেওয়ালা শক্তিগুলো। বিশেষ করে ১৯৮২ সালের পর থেকে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর উদ্যোগে-পৃষ্ঠপোষকতায়-সমর্থনে শিবিরের ওপর সারা দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮; ছয় বছরের ইতিহাস শিবিরের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা-ধৈর্য আর শাহাদাতবরণের ইতিহাস। সামান্য সব ঘটনার সূত্র ধরে সন্ত্রাসীরা শিবিরকে বাংলার জমিন থেকে উৎখাতের হুমকি দিত, কিন্তু একদিকে মানুষের মুক্তি আর কল্যাণ অন্যদিকে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্কের দুর্দম আকাঙ্ক্ষা সবসময়ই শিবিরকর্মীদের রেখেছে অকুতোভয় করে। এই বাংলার জমিন ধীরে ধীরে ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের শিকড়কে টেনে নিয়েছে বুকের গভীরে।

ব্যক্তিগত পরিচয়
ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার বুজিডাঙ্গা গ্রামের এক ধার্মিক পরিবারে শহীদ আসলাম হোসাইন জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের যে কয়জন ভাই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে শহীদ আসলাম হোসাইন হলেন ২৪তম শহীদ।

শিক্ষাজীবন
শহীদ আসলাম হোসাইন শাহাদাতকালীন সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

সাংগঠনিক জীবন
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য শহীদ আসলাম হোসাইন শিবিরের চূড়ান্ত শপথ 'সদস্য শপথ' নিয়েছিলেন এবং তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল লতিফ হল শাখা শিবিরের সভাপতি ছিলেন। তাঁর প্রখর মেধা ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞা দেখে প্রতিপক্ষের শত্রুরা হিংসার আগুনে পুড়ে মরছিল। তারই প্রতিশোধ নিতে তাঁকে এ দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হলো।

শাহাদাতের প্রেক্ষাপট
১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বরের রাত; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের জন্য সেটি ছিল একটি কালো রাত্রি। ওইদিন শামসুজ্জোহা হলের শিবিরের পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে শিবির ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দু’জন কর্মীর মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনা তখনই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তুচ্ছ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ওইদিন গভীর রাতে হত্যা ও ধ্বংসের উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয় সারা হলে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় তারা হত্যা করে দু’জন শিবিরকর্মীকে।

১৭ নভেম্বর রাতে যখন শিবিরকর্মীরা পড়ালেখা শেষ করে নিত্যদিনের মত ঘুমিয়েছিলেন, তখন রাত সাড়ে বারোটার সময় কথিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সন্ত্রাসী বাহিনী দা, ছুরি, কিরিচ, রড, হকিস্টিক ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হলের কক্ষে কক্ষে শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। তারা হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত শিবিরকর্মীদের ওপর। খুনি চক্র একযোগে হামলা চালালো শহীদ আসলাম হোসাইনের কক্ষে, ৩২৯ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙে। আক্রমণে সংজ্ঞা হারান আকতার, শফিক, মুকুল ও আসলাম হোসাইন। বাইরে পুলিশ নিষ্ক্রিয়ভাবে অবস্থান করছিল। খুনিরা আসলাম হোসাইনকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি। তাঁর লাশ চিরতরে গুম করার জন্য কক্ষ থেকে টেনে হেঁচড়ে হল ডাইনিং কক্ষে টেবিলের ওপর রাখল। কিন্তু পরে নিজেরাই লাশ নিয়ে ভয়ার্ত হয়ে পড়ে। খুনিরা সবাই মিলে চেষ্টা করেও ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে লাশ সরাতে পারেনি। পরে হাল ছেড়ে দিয়ে তারা পুলিশের সামনে দিয়েই হল থেকে সদলবলে বেরিয়ে যায়। অন্যান্য হলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পরে আহত সবাইকে মেডিকেল ভর্তি করা হল। ডাক্তার আসলাম হোসাইনকে দেখে মৃত ঘোষণা করলেন। সকাল হতেই আসলাম হোসাইনের শাহাদাতের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। শোকের ছায়া নেমে এলো গোটা ক্যাম্পাস ও মহানগরীতে।

শহীদের পিতার প্রতিক্রিয়া
‘আসলাম ইসলামের পথে শহীদ হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। আমি এক আসলামকে হারিয়ে হাজারো আসলামকে পেয়েছি। আমার দুঃখ নেই, আমি শহীদের পিতা হিসেবে গর্ববোধ করি।’

মায়ের প্রত্যাশা
‘আমার আসলাম যে দ্বীনি কাজের জন্য শাহাদাতবরণ করেছে বর্তমানে আসলামের উত্তরসূরিরা আসলামের বাকি কাজের আঞ্জাম দেবে, তবেই আমি খুশি হব।’

শহীদের বিশেষ উদ্যোগ
যুবকদের সুন্দর চরিত্র গঠন এবং গরিব ও অসহায়দের সহযোগিতা করার জন্য ‘আল-আমীন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন

স্মরণীয় ঘটনা
শহীদ আসলাম হোসাইন নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করতেন, যা দেখে আসলামের পিতা তাঁর মাকে বলেছিলেন, আসলাম কিন্তু আর ফিরবে না (অর্থাৎ শহীদ হয়ে যাবে)। তাই তাঁর পিতা তাঁর শাহাদাতের আগে কবর দেয়ার স্থান ঠিক করে রেখেছিলেন।

একনজরে শহীদ আসলাম হোসাইন
নাম : আসলাম হোসাইন
মায়ের নাম : আনজুমান আরা বেগম
বাবার নাম : ডা. মো: জিন্নাত আলী
ভাই-বোন : ৪ ভাই, ৬ বোন
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : ভাইদের মধ্যে প্রথম, ভাই-বোনের মধ্যে পঞ্চম
জন্মতারিখ : ৪ ফাল্গুন, ১৩৬৭
সাংগঠনিক মান : সদস্য
সর্বশেষ পড়াশোনা : এমএসসি (ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্য ) পরীক্ষার্থী
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের লক্ষ্য : বাংলার জমিনে কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠা করা
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম+ডাক- বুজিডাঙ্গা মুন্দিয়া, উপজেলা- কালিগঞ্জ, জেলা- ঝিনাইদহ
আহত হওয়ার স্থান : ৩২৯ নং কক্ষ, নবাব আব্দুল লতিফ হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আঘাতের ধরন : রড, হকিস্টিক, ছোরা, কুড়াল ও রামদা
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৭ নভেম্বর, ১৯৮৮; রাত ১২টা ৩০ মিনিট

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আসলাম হোসাইন

পিতা

ডাঃ মোঃ জিন্নাত আলী

মাতা

আনজুমান আরা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৪ ভাই, ৬ বোন, ভাইদের মধ্যে বড়

স্থায়ী ঠিকানা

ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার মুন্দিয়ার বুজিডাঙ্গা গ্রাম

সাংগঠনিক মান

সদস্য

সর্বশেষ পড়ালেখা

এম.এস.সি পরীক্ষার্থী, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়