শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ২৮ জানুয়ারি ১৯৮৬ | ১৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। সৃষ্টির সূচনা থেকে চলে আসছে আলো আঁধারের তীব্র সংঘাত। এই সংঘাতে বারবারই পূর্ণতা পেয়েছে আলো। তারা ত্যাগ ও কুরবানীর মধ্যে সফল হয়েছে। এই কুরবানী ও অমরত্ব নি:সন্দেহে কোন সাধারণ মানুষের ভাগ্যে জোটে না। এই অমরত্বের সিঁড়ি হল শাহাদাত, যা মুমিন জীবনের একান্ত কামনা।

শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশের প্রকৌশল অঙ্গনে ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তিনি।

১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র, কলেজ সভাপতি, সংগঠনের সদস্যপ্রার্থী মাহফুজুল হক চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়নের পরিকল্পিত ও অতর্কিত হামলায় রাঙ্গুনিয়ার রওজার হাটে আহত হন এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি সাতকানিয়ার ছদাহা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন।

জন্ম:
চট্টগ্রাম জেলা দক্ষিণে অবস্থিত সাতকানিয়া থানার ছদাহা ইউনিয়নের কেওচিয়া গ্রামের চৌধুরীর বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ০২ এপ্রিল ১৯৫৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী। তার মায়ের নাম মোসাম্মত মনিরা বেগম এবং পিতার নাম মাওলানা আব্দুর রহিম চৌধুরী। শহীদের পিতা স্থানীয় মসজিদের ইমাম। ৬ ভাই ২ বোনের মধ্যে শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান।

শিক্ষাজীবন:
শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন জঙ্গল পদুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৬৯ সালে তিনি দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল হলে তিনি ১৯৭৩ সালে পুনরায় এইচএসসি পরীক্ষা দেন চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজ থেকে। পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে তিনি ১৯৭৭ সালে বিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন।

১৯৮২-৮৩ সেশনে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ভর্তি হন। শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পূরকৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র হিসেবে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা করছিলেন এবং বিআইটি ২য় বর্ষের এবং সাউথ হলের (বর্তমান শহীদ মুহাম্মদ শাহ্ হলের ২২২নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন)।

সাংগঠনিক জীবন:
১৯৭৭ সালে শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী সাতকানিয়া থানা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে পয়লা ফেব্রুয়ারি তিনি সদস্য প্রার্থী হন। ১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শাখায় যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অফিস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি শাহদাতের আগ পর্যন্ত তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শাহাদাতের ঘটনা:
২৭ জানুয়ারি ১৯৮৬। পশ্চিমের সূর্যটা আকাশের সাথে মিশে গেছে। দিনের আলো নিভু নিভু। একটু পরে আঁধার ঘনিয়ে আসবে। শহীদ মাহফুজুল হক তখনো ব্যস্ত সাংগঠনিক কাজে। আরো দু’একজন শিবিরকর্মীসহ সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন শিবিরের আসন্ন ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দাওয়াত প্রদানে। একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী দাওয়াতী কাজে বাধা দিচ্ছিল। সবকিছু উপেক্ষা করে শহীদ মাহফুজ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছিলেন। মাগরিবের নামাজের আজান হল। শহীদ মাহফুজ তার সঙ্গীদের নিয়ে রাঙ্গুনীয়া থানা মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। কিন্তু মার্কসবাদ আর সমাজতন্ত্রের নামে সাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধ্বজাধারী ছাত্র ইউনিয়ন সন্ত্রাসীরা তাকে ফিরতে দেয়নি। কিরিচ, রামদা, হকিস্টিক, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে মাহফুজুল হক ও তার সঙ্গীদের ওপর অতর্কিত ঝাপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। তাদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন মাহফুজুল হক চৌধুরী। সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। কিরিচের আঘাতে মাথা কেটে যায় এবং হকিস্টিক ও লাঠির আঘাতে মাথাসহ সমস্ত শরীর থেঁতলে যায়। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান মাহফুজ। তার পবিত্র রক্তে রঞ্জিত হয় সবুজ জমিন।

২৮ জানুয়ারি ভোর ৫টা ফজরের আজানের সুর ধ্বনি ভেসে আসছে মসজিদ থেকে। ডাক্তার শেষ বারের মত ঘোষণা করলেন। মাজফুজ আর নেই। সূর্য উদয়ের পূর্বেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন শহীদ মাহফুজ। মূহুর্তের মধ্যে শহীদের সাথীদের আহজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল মাহফুজের শাহাদাতের খরব। শোকের ছায়া নেমে এলো বন্দর নগর চট্টগ্রামে। শহীদের শোকাহত সাথীরা হাসপাতালে ভিড় জমাতে থাকে তাকে একনজর দেখার জন্য। আর শহীদ মাহফুজ স্থান পেলেন ইতিহাসে । অমর হয়ে রইলেন পৃথিবীতে।

আল্লাহর পথে যারা জীবন দিয়েছেন, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। প্রকৃতপক্ষে তারাই জীবিত, তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা নেই। (সুরা আল বাকারা- ১৫৪)

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী

পিতা

মওলানা আব্দুর রহিম চৌধুরী

মাতা

মোসাম্মৎ মনিরা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ৪র্থ

স্থায়ী ঠিকানা

ছদাহা, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সদস্যপ্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

তৃতীয় বর্ষ (সিভিল) বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, তৎকালীন চট্টগ্রাম বিআইটি (বর্তমানে চুয়েট)

শাহাদাতের স্থান

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ


শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী


শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মাহফুজুল হক চৌধুরী