শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ | ১১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

একজন আলেমে দ্বীন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ। তাই বাইন্যাজান সিটি হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হবার পর স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায়। কিন্তু ঘাতকেরা তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। ১৯৮৫ সালের ১১ ডিসেম্বর হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় এক নিষ্ঠুর হামলায় শাহাদাত বরণ করেন শিবিরনেতা মোস্তফা আল মোস্তাফিজ।

সাংগঠনিক জীবন
নেত্রকোনার আটপাড়া থানার বাইন্যাজান গ্রামের শরিয়ত আলীর সুপ্রিয় সন্তান মোস্তাফিজ। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা লাভের পাশাপাশি ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ফলে সহজেই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসলাম কায়েমের দীপ্ত সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজেকে শপথের ‘সাথী’ হিসেবে গড়ে তোলেন।

অপ্রিয় সত্য কথা
ইসলামের সোনালি ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই, মানবতার মুক্তির দিশারি হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁর সারা জীবন ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে ব্যয় করেছেন। অথচ দেশের অন্যতম প্রধান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসা) ইসলামী আন্দোলনের কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মোস্তফা আল মোস্তাফিজ ইসলামী আন্দোলনের কাজ করে যাচ্ছিলেন একাগ্রচিত্তে। তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীদের কাছে ইসলামী জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষায়। তাঁর দাওয়াত ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে লাগল। বৈরী পরিবেশ হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু সংখ্যক ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানার পর বিরূপ আচরণ করে সে সকল ছাত্রদের প্রতি। শাস্তিস্বরূপ অনেককে বহিষ্কার করে এবং আরো অনেককে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ অন্যায় ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেখানকার ছাত্ররা প্রতিবাদী হয়।

যেভাবে শহীদ হন
ছাত্ররা কর্তৃপক্ষের গোঁড়ামির প্রতিবাদ করলে কিছু শিক্ষকের নেতৃত্বে প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। এমনকি ‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজিয়ে দা, কিরিচ, রড, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে প্রতিবাদকারী ছাত্রদের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালানো হয়। এ ঘটনায় আহত হন অনেকে। এই বর্বরতার শিকার হয়ে মোস্তফা আল মোস্তাফিজ শাহাদাত বরণ করেন।

আলেমে দ্বীন হওয়ার মানসে ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ। পাষণ্ডদের আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ‘আলেমে দ্বীন’ হতে পারেননি। কিন্তু আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হতে পেরেছেন নিঃসন্দেহে। বর্বর শিক্ষকরা জ্ঞানের উচ্চ শিখরে আরোহণ করেও মানুষের মুক্তির আন্দোলনে নিজেদের আলোকিত করতে পারেননি। পেরেছেন মোস্তাফিজ, যদিও বয়স ও প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় ছিলেন তাঁদের তুলনায় অনেক কম।

শোকাহত বাবার মৃত্যু
পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষার পাত্র ছিলেন শহীদ মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজের শাহাদাতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন বৃদ্ধ পিতা শরিয়ত আলী। পুত্রশোক ভুলতে তিনি বাড়ি ছেড়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেন। একসময় তিনিও পুত্রের নিকট চলে যান।

একনজরে শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ
নাম : মোস্তফা আল মোস্তাফিজ
মায়ের নাম : মালেকা বেগম
বাবার নাম : শরীয়ত আলী
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- বাইন্যাজান, থানা- আটপাড়া, জেলা- নেত্রকোনা
ভাই-বোন : ১ ভাই, ১ বোন
সাংগঠনিক মান : সাথী
আহত হওয়ার স্থান : হাটহাজারী মাদ্রাসা
আঘাতের ধরন : দা, কিরিচ, রড ও লাঠি
কাদের আঘাতে শহীদ : শিক্ষক
শাহাদাতের তারিখ : ১১ ডিসেম্বর, ১৯৮৫
শাহাদাতের স্থান : হাটহাজারী মাদ্রাসা

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ

পিতা

শরীয়ত আলী

মাতা

মালেকা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

১ ভাই, ১ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

নেত্রকোনার আটপাড়া থানার বানিয়াজানে

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

হাটহাজারী মঈনুল ইসলাম মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

হাটহাজারী মঈনুল ইসলাম মাদরাসা


শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ


শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মোস্তফা আল মোস্তাফিজ