শহীদ মনিরুল ইসলাম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৯৪

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদের পরিচিতি:
পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে ৪র্থ শহীদ মো. মনিরুল ইসলাম ১৯৮২ সালে জন্ম গ্রহন করেন। ১ ভাই ও ৪ বোনের সংসারে দরিদ্র পিতা-মাতা কোন রকম সন্তানের মুখে দুটো খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত ছিলেন। শহীদ মনিরুল নিজে টিউশনি করে এবং সাংগঠনিক সহযোগীতা নিয়ে বি বি এ ২য় বর্ষে পড়ালেখা করতেন।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন:
ঘটনা স্থল শহীদের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে। ১২.১২.১৩ তারিখে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার তথাকথিত অবৈধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক ফাঁসী কার্যকরের প্রতিবাদে ১৫.১২.১৩ তারিখে দেশব্যাপী হরতালের আহবান করে জামায়াতে ইসলামী। কর্মসূচি পালনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৭ টায় থানা সভাপতি মনিরুল ইসলাম নেতা কর্মীদের নিয়ে পাটগ্রাম পৌরসভার সরেয় বাজার রেল লাইনের পার্শ্বে পিকেটিং করার জন্য উপস্থিত হওয়া মাত্রই পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা অপর দিক থেকে এসে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। সংঘর্ষ চলার একপর্যায়ে সকাল ৮.৩০ টায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আহত মনিরুল ইসলামকে পুলিশ রাইফেল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এবং পা দিয়ে লাথি দিয়ে বুক থেকে গলা পর্যন্ত থেতলে দেয়। এ অবস্থায় সকাল ৯ টায় তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরন করেন। পুলিশ লাশ নিয়ে যায় এবং পাটগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে পোষ্টমর্টেমের পরে রাত ৮.৩০ টায় পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। ১৬.১২.১৩ তারিখ সকাল ১০ টায় জানাজা শেষে পাটগ্রাম পৌরসভা কোটতলী ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন বাড়ির পার্শ্বে কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা :
শহীদ মনিরুল ইসলাম ছিলেন জেলা ও থানার জামায়াত,শিবিরের একজন গ্রহনযোগ্য এবং ভালবাসার মত দায়িত্বশীল। প্রায় সব কর্মসূচিতেই তিনিই নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর মাঝে শহীদী আকাংক্ষা ছিল প্রবল। তিনি মোবাইলে ওয়েলকাম টিউন ব্যবহার-“ঈমানের পথে অবিচল থেকে আমার মরণ যেন হয়”, তিনি ফেসবুক ব্যবহার করতেন তার আইডির নাম ছিল “শহীদি তামান্না”। শহীদ হওয়ার দিন সকাল ৮.৩০ টায় তিনি জেলা সভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম ভাইকে ফোন করে বলেন ভাই পুলিশ আজ আমাদেরকে কোন কারন ছাড়াই গুলি করছে আমাদের জন্য দোয়া করেন, আর মাত্র কয়েক মিনিট পরেই তিনি শাহাদতের অমীয় সূধা পান করেন। তিনি সর্বশেষ জেলা বৈঠকে এসে গোসল করার জন্য কলেজ শাখার সাথী নুরুল হক সরকারের সাবান নিতে গিয়ে বলেন- দেন ভ্ইা দেন আর হয়ত কোন দিন সাবান নেব না।

সামগ্রীক ঘটনার বিবরণ :
১২.১২.১৩ তারিখ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার অবৈধ ট্রাইবুনাল কতৃক দেয়া ম"ত্যুদন্ড কার্যকরের প্রতিবাদে ১৫.১২.১৩ তারিখ দেশব্যাপী হরতালের আহবান করে জামায়াতে ইসলামী। ১৫ ডিসেম্বর সকাল ৭ টায় থানা সভাপতি মনিরুল ইসলামের নেত"ত্বে পাটগ্রাম পৌরসভার ৯ নং ওর্য়াডের সরেয় বাজারে রেল লাইনের পার্শ্বে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং ও মিছিলের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সহ পুলিশ ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালায়। এলাকাবাসী সমবেত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৮.৩০ টায় শহীদ মনিরুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলি তার বুকের বাম পার্শে¦ লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায় আর রক্ত ঝরতে থাকে। এ সময় পুলিশ রাইফেল দিয়ে আরো আঘাত করে এবং পা দিয়ে অসংখ্য লাথি মেরে তার বুক থেতলে দেয়। অতপর বিনা চিকিৎসায় পুলিশ তাকে গাড়িতে ফেলে রাখে ফলে সকাল ৯ টায় তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়াও ১০/১৫ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গুরুতর আহত হন। অবশেষে জনগনের তিব্র প্রতিরোধের মুখে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা রফিকুল ইসলাম ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং প্রশাসন ও আওয়ামীলীগকে রা করার চেষ্টা করেন।

সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের বিবরন :
পৌর সেক্রেটারী ও সভাপতি, সরকারী কলেজ সভাপতি, থানা সেক্রেটারী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সর্বশেষ পাটগ্রাম পশ্চিম সাথী শাখার থানা সভাপতি। শহীদ মনিরুল লালমনিরহাট জেলার টর্নেডো শিল্পিগোষ্ঠীর সদস্য থাকা কালিন সময় শিবিরের দাওয়াত পেয়ে ২০০৫ সালে সমর্থক হয়। ২৩.১১.১১ তারিখ সাথী শপথ নেন। তিনি পাঠচক্রের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং সদস্য প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টারত ছিলেন।

শহীদের আপন জনদের কথা :
পিতা: আমার ছেলের জন্য দোয়া করবে আল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন।
মাতা : আমার ছেলে আল্লাহর দ্বীনের জন্য শহীদ হয়েছে তোমরা সাবধানে থেকে তার রেখে যাওয়া কাজ চালিয়ে যাবে।
শহীদের দায়িত্বশীল : আমরা গর্বিত এজন্য যে আমরা এখন শহীদের ভাই। আমাদের প্রিয় থানা সভাপতি শহীদ হওয়ায় মানুষের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই, বরং আল্লাহর কাছে ভাই হত্যার বিচার চাই।
প্রতিবেশী কমিশনার রতন ও আব্দুল মালেক: খুব ভালো ছেলে ছিল মনিরুলল। নিয়মিত মুসুলি, রোজাদার, এবং সৎ মানুষ ছিল।
এলাকাবাসী: গুলি বিদ্ধ থাকা অবস্থায় শহীদ মনিরুল ইসলামকে ভাইকে তুলতে গিয়ে শহীদ হন আব্দুর রহিম। তাঁর বাড়িতে সে দিন সকালে ঠান্ডা ভাত খেয়ে হরতালের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। এলাকার সকলে তার শহীদি মর্যাদা কামনা করেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মনিরুল ইসলাম

পিতা

দ্বীন মজুর কমর উদ্দিন

মাতা

মরিয়াম বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

চার ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র তি

স্থায়ী ঠিকানা

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম পৌরসভার শিলেরডাঙ্গার ৪নং ওয়ার্ড

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

পাটগ্রাম সরকারি কলেজের বি.বি.এ ২য় বর্ষ

শাহাদাতের স্থান

পাটগ্রামে পিকেটিং এর সময়


শহীদ মনিরুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মনিরুল ইসলাম


শহীদ মনিরুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মনিরুল ইসলাম