শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান

১২ অক্টোবর ১৯৯৫ - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৯৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদের পরিচিতি:

পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। ১৯৯৫ সালের ১২ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাই বোনের সংসারে পিতা মাতা কোন রকমে সন্তানদের বড় করার স্বপ্ন দেখছিলেন। সন্তানদের মধ্যে ৩ জন স্কুলে আর ২ জন মাদরাসায় লেখা পড়াকরেন। শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান পড়াশোনার পাশাপাশি দ্বীনি কাজে ব্যস্ত ছিলেন এবং তার সাথে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই যোগাড় করতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে তিনি এলাকার সাধারণ ছাত্র ও মানুষের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন। শাহাদাতের সময় তিনি আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন:
ঘটনাস্থল শহীদের নিজ বাড়ী থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে। মিছিলের খবর পেয়ে এলাকার সর্বস্তরের জনতাকে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পায়ে হেঁটে অন্যরা রিক্সা-বাইসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তেমনি খবর পেয়ে শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান বেলা ২:৪৫ টায় কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাই স্কুলে উপস্থিত হন। সেখানে প্রায় ১০০০ এলাকাবাসীর সাথে তিনি উল্লেখিত কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।

১৪ই ডিসেম্বর বিকাল ৪ টার সময় তিনি বসুরহাট কেজি স্কুল রোডে অবস্থিত খাঁন সুপার মার্কেটের সামনে গুলিবিদ্ধ হলে তাঁকে নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এরপর হাসপাতাল থেকে শহীদের লাশ রাত ৮:৩০ টার সময় তাঁর নিজ বাড়ীতে আনা হয়। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রাত ১১ টায় জানাযা শেষে বাড়ীর পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শাহাদাতের পূর্বের ঘটনা:
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান শাহাদাতের পূর্বে তাঁর সাথীদেরকে বলতেন, মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন “শহীদেরা মৃত্যুবরণ করে না, তারা জীবিত থাকে কিন্তু মানুষ তা বোঝে না।” সুতরাং আমি শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। কারণ শহীদদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। শাহাদাতের দিন সকালেও শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান সকল জনশক্তিকে মিছিলে অংশগ্রহণ করার দাওয়াতী কাজ করে দুপুরের খাবার খেয়ে কর্মসূচীরস্থলে উপস্থিত হয়। যাওয়ার সময় মা তাকে বলেছিলেন তুমি গোসল করো, সে বললো আমি মিছিল থেকে এসে গোসল করব। তার কথায় ঠিক হল মিছিল থেকে আসার পর তাঁকে শেষ বিদায়ের গোসল করানো হল।

সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ:
৫ই ফেব্রুয়ারি ‘১৩ ইং তারিখের আগ থেকে বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাও: মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মু. মুজাহিদ, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার, রিমা-ে নিয়ে অমানবিক ভাবে চরম অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। বাংলার প্রতিটি জনপদে ইসলাম প্রিয় মানুষ গুলো ফুঁসে উঠে। সে থেকে অদ্যবদি জালিম সরকার অন্যায় ভাবে ইসলামী নেতৃবৃন্দকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার দিয়ে ফাঁসির রায় প্রদান করে। সর্বশেষ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে বিশ্বের নজিরবিহীন ম"ত্যুদন্ডের রায় দেয় এবং তড়িঘড়ি করে ১২.১২.২০১৩ ইং রাত ১০:০১ ঘটিকায় ফাঁসি দিয়ে শহীদ করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৪ই ডিসেম্বর পুলিশ প্রসাশনের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল শুরু হলে সম্পূর্ন বিনা উস্কানিতে নিরস্ত্র ও শান্তিকামী জনতার উপর পুলিশ ও আওয়ামী ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে ফলে আব্দুল আজিজ রায়হান, সাইফুল ইসলাম, মতিউর রহমান সজিব, আব্দুস সাত্তার, মাহমুদুল ইমলাম নিশু, আবদুন নুর রাসেল ও সাইফুল ইসলাম শাহাদাত বরণ করেন। আর সে সাথে আব্দুল্লাহ আল নোমান, সোহাগ, তুষার, মানিক, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র উসমান গণি আলো সহ ৩০/৩৫ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ব্যথা-বেদনায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।

পড়াশোনা:
আলিম পরীক্ষার্থী, বসুরহাট ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা

জীবন যাপনের ইতিহাস:
শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হানের শৈশব, কৌশর ও ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র-ভদ্র ও মেধাবী। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হলো
ক. ২৮ শে অক্টোবর শহীদদের ২য় বার্ষিকীতে বড় ভাইয়ের সাথে রাত ৪:০০টায় প্রোষ্টার লাগাতে বের হওয়া।
খ. দ্বীনি আন্দোলনের কাজে যত রাতই হোক না কেন তিনি বের হয়ে পড়তেন।
গ. সর্বশেষ শহীদ আঃ কাদের মোল্লার রায় যাতে কার্যকর না হয় সে জন্য কেন্দ্রীয় কর্মসূচী রোজা পালনেও তিনি অংশ গ্রহন করেন।

সাংগঠনিক মান:
শহীদ আবদুল আজিজ রায়হান ছোট বেলা থেকেই ইসলাম প্রিয় ছিলেন। শহীদের বড় ভাই ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সেও ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হতে সুযোগ পায়। শহীদ রায়হান ভাই ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ওয়ার্ড সভাপতি আ: হান্নান ভাইয়ের মাধ্যমে ১০ অক্টোবর ২০০৫ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সমর্থক ফরম পূরণ করেন। এরপর থেকে নিয়মিত ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে অনুপ্রাণিত হতে থাকেন। কিছুদিন কর্মী সিলেবাস শেষ করার পর কর্মী হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রদান করলে ওয়ার্ড সভাপতি ইউচুপ নবী ভাই তাকে কর্মী তৈরীর জন্য সাক্ষাৎকারের নিয়ে যান। তখনকার থানা সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন শাহীন ভাই তাকে ০৬ জুন ২০০৮ সালে কর্মী ঘোষণা করেন। কর্মী হওয়ার পর শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান ভাই ইসলামী আন্দোলনের কাজ আরও বাড়িয়ে দেন। কিছুদিন পর তিনি বায়তুল মামুন উপশাখার সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর উপশাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে তিনি এলাকার সাধারণ ছাত্র ও এলাকাবাসীর প্রিয় পাত্রে পরিনত হয়। তিনি ইসলামী আন্দোলনের বাইয়াত গ্রহনের জন্য সাথী সিলেবাস শেষ করতে থাকেন। সাথী সিলেবাস শেষে ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক কন্ট্রাক চুড়ান্ত কন্ট্রাকের পর সাথী প্রার্থী ফরম লাভ করেন। সাথী প্রার্থী হওয়ার পর তার দাওয়াতী কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পায়।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান

পিতা

আব্দুর রাজ্জাক

মাতা

বিবি আমেনা

জন্ম তারিখ

অক্টোবর ১২, ১৯৯৫

ভাই বোন

পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্

স্থায়ী ঠিকানা

নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার চরহাজারী গ্রামে

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

বসুরহাট ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী

শাহাদাতের স্থান

বসুরহাট কেজি স্কুল রোডে অবস্থিত খাঁন সুপার মার্কেট


শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান


শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল আজিজ রায়হান