শহীদ ইসরাইল হোসেন

১০ ডিসেম্বর ১৯৯২ - ৩০ নভেম্বর ২০১৩ | ১৮৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদ ইসরাইল হোসেন
৩০ নভেম্বর ২০১৩, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলের অবরোধ চলাকালে মিছিলে আওয়ামী পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে গুলি বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শাহাদাত বরণ করেন কোটচাঁদপুর ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ও সংগঠনের কর্মী ইসরাইল হোসেন। বৃদ্ধ পিতা আব্দুস শহীদ ও মাতা আনোয়ারা বেগমের বার সন্তানের মধ্যে নবম। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিনদীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

 

শহীদের পরিচিতি
মোঃ ইসরাইল হোসেন ১০.১২.১৯৯২ তারিখ ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদ পুর উপজেলার হরিণদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
দেশব্যাপি আওয়ামী জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদে ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জামায়াত সহ ১৮ দল অবরোধ কর্মসূচি ঘোষনা করে। ৩০/১১/২০১৩ ইং তারিখ অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে কোটচাঁদপুর বাস স্টান্ডে জামায়াত, শিবির ও ১৮ দলের কর্মীরা সমাবেত হয়। সকাল ৮ টায় মিছিল শুরু হলে সশস্ত্র পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা অতর্কিত ভাবে মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশ বৃষ্টির মত গুলি বর্ষন করতে থাকে ফলে মিছিলটি ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় একটি গুলি ইসরাইলের ভাইয়ের কানের পাশে বিদ্ধ হয়ে এপার ওপার বেরিয়ে যায়। তিনি আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন।

শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা
শাহাদাতের আগের দিন তিনি পিতার ব্যবসার কাজে সাতক্ষিরা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে অবরোধের কর্মসূচির এবং মিছিল ও সমাবেশের সংবাদ পান। এ খবর পেয়ে পিতাকে বলেন আগামিকাল আমার পরীক্ষা আছে, এ পরীক্ষায় আমাকে অংশ গ্রহণ করতেই হবে। ভোর রাতেই তিনি সাতক্ষীরা থেকে বাড়িতে আসেন এবং সকাল ৮ টার সময় মিছিলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে যান। পথিমধ্যে ভাইয়ের ছেলে আরিফ কে বলেন “আমি মিছিলে যাচ্ছি, দোয়া কর আমি যেন শহীদ হতে পারি, তুমি আমার কাজ গুলো দেখাশোনা করবে।” যাওয়ার সময় মা চাচীদের কাছ থেকে দোয়া চেয়ে বেরিয়ে যান। ফিরে আসেন শহীদী মৃত্যুর জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

সামগ্রীক ঘটনার বিবরণ
৩০/১১/২০১৩ ইং তারিখ অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষে কোটচাঁদপুর বাস স্টান্ডে সকাল ৮ টায় মিছিল ও পিকেটিং করার সময় সশস্ত্র পুলিশ এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, রামদা, হকিস্টিক ও লাটিসেটা নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশ বৃষ্টির মত গুলি বর্ষন করলে মিছিলটি ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় ইসরাইল ভাই সবাইকে বলতে থাকেন আসুন আমরা আমাদের জীবন দিয়ে বাতিলকে মুকাবেলা করি, প্রয়োজনে আমরা শহীদ হব কিন্তু বাতিলের কাছে মাথা নত করবো না। তিনি তার সহকর্মীদের সংগঠিত করে হামলা প্রতিহত করতে থাকেন। এ সময় একটি গুলি ইসরাইলের ভাইয়ের কানের পাশে বিদ্ধ হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু চিকিৎসা শুরুর মুহুর্তে তিনি প্রিয় সাথীদের শোক সাগরে ভাসিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওইন্নাইলাহির রজিউন।

সাংগঠনিক মান
কর্মী এবং ইউনিট সভাপতি ছিলেন।

শহীদের আপন জনদের কথা
পিতা: আমার সব গুলো ছেলে মেয়ের ভিতরে সে সবচেয়ে ভালো ছিলো। ছেলেরা আলাদা হলেও সে আমার সাথে ছিলো। সে প্রায় বলতো আমি শহিদের ছেলে শহীদ হব (ইসরাইল ভায়ের পিতার নামে শহিদুল ইসলাম)। সে মিছিলে যাওয়ার সময় বলত আমি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। সে কাসের পরীক্ষার চেয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিকে বড় পরীক্ষা মনে করতো। শাহাদতের দিন যখন বিদয় নিয়ে বাড়ী থেকে যায় আমাকে বলে গেল “আব্বা আমি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি দোয়া কর আমি যেন পাস করি।” আমার ছেলে পাশ করেছে সে জান্নাতে চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।

মাতা: আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন। আমীন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ ইসরাইল হোসেন

পিতা

আব্দুস শহীদ

মাতা

আনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

ডিসেম্বর ১০, ১৯৯২

ভাই বোন

১২ ভাই-বোনের মধ্যে ৯ম

স্থায়ী ঠিকানা

ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিনদীয়া গ্রাম

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

কোটচাঁদপুর ডিগ্রি কলেজ, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ

শাহাদাতের স্থান

কোটচাঁদপুর বাস স্টান্ড


শহীদ ইসরাইল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ ইসরাইল হোসেন


শহীদ ইসরাইল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ ইসরাইল হোসেন