শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ

০১ ডিসেম্বর ১৯৮৪ - ১২ মে ২০১৩ | ১৭১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“শোকাহত পরিবারের সদস্যরা কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না যে নিহত হয়েছে শাহাদাত। একই সাথে কথা আর কান্নার মাঝে ভেঙে পড়েছেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার কাজলা গ্রামে ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: আখতারুজ্জামান মানু ও মাতা মোছা: সাবিহা বেগমের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। অসচ্ছল পরিবারে তেমন পড়ালেখা করেননি। কর্মজীবনেও ভাল কিছু করতেন না। বিভিন্ন জায়গা থেকে মালামাল কিনে বিক্রি করতেন। কাটাখালী আদর্শ কলেজের ডিগ্রির ছাত্র। চারিত্রিক মাধুর্যে নিজেকে সাজাতে ২০১১ সালে সাথী শপথ নেন শাহাদাত।

যেভাবে আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
গত ৩ মে, ২০১৩ ইং বাসা থেকে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ৪ মে ২০১৩, ঢাকায় ১৮ দলের মহাসমাবেশে যোগদান করতে। ৪ মে দুপুর থেকে বিকালের সময়ে ঢাকা মিরপুর-২, মধ্যমনিপুর, ৭০ নম্বর বাসা থেকে র‌্যাব-২ এর হাতে আটক হন। এরপর ১২ মে, ২০১৩ তাকে রাজশাহীতে নিয়ে এসে রাত ৩টার সময় রাজশাহী বেতারের মাঠ আমজাদের মোড় ধরমপুরে ক্রসফায়ার নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শাহাদাতের পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা
সব মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। তাকে এলাকায় সব মানুষ খুবই ভালবাসত। তার মনের মধ্যে সব সময় শাহাদাতের তামান্না ছিল। বলতেন, আমি তো শহীদ হয়ে যাবো। সঙ্গী সাথীদের বলতেন, হয়ত কোনদিন আমাকে দেখতে পাবে আমি শহীদ হয়ে পড়ে আছি এবং আমার লাশের ছবিসহ পোস্টার বের হবে। তখন তোমরা আমাকে সেই পোস্টারে দেখতে পাবে।

সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ
২০১০ সালে ডিবি পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ১ বছর জেলে ছিলেন। সেই সময় তাকে একবার ক্রসফায়ারের চেষ্টা করা হয়েছিল। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আবারও সংগঠনের সাথে সক্রিয় হন। বিরোধীদলীয় লোকেরা সবসময় তার পেছনে গোয়েন্দার মতোই লেগে থাকত। তার বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়েছিল, তাই দীর্ঘ ৫ বছর বাড়িতে থাকতে পারতেন না। পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা সাক্ষাত হতো খুব কম। তার শুভাকাঙ্খীরা তাকে অনেক নিষেধ করতেন। তিনি উত্তরে বলতেন, ‘ভয় কিসের একদিন তো মরতে হবেই, না হয় আমি শহীদ হয়ে গেলাম। আল্লাহ মনে হয় আমাকে শহীদ হিসাবে কবুল করেছেন। আর বলতেন তোমরা ভয় করবে না। আল্লাহ তো আছেন। আমার কিছু হলে আল্লাহ তোমাদের মদদ দেবেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকে তিনি খুব উতলা হয়ে যান। মাকে বলে গেছেন, ‘মা এবার তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না, সাঈদী সাহেবকে ফাঁসি দিবে আর আমি ঘরে বসে থাকবো। আমি তো এখন বদলা নেবো, আমাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না, আমি শহীদ হয়ে যাবো।’

পরিবার ও এলাকাবাসীর ভাষ্য
৪ মে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা যান শাহাদাত। সমাবেশ শেষে তিনি বাড়ি ফেরার পথে ঢাকার মিরপুরে তার বন্ধুর বাসায় যান। বন্ধুর বাসা থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ৪ মে সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ ঘটনার পর শাহাদাতকে র‌্যাব সদস্যরা আদালতে হাজির না করায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট দফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। শাহাদাতের চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম জানান, র‌্যাব সদস্যরা তাকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে নিয়ে আসছে এমন খবরের ভিত্তিতে গতকাল (শনিবার) আমরা র‌্যাব-৫-এর সদর দফতরে যোগাযোগ করি। তবে সেখান থেকে আমাদের জানানো হয়, শাহাদাত নামে কাউকে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আনা হয়নি।

শাহাদাতের পিতা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আকতারুজ্জামান মানু জানান, ‘লোক মারফত খবর পেয়ে ভোর ৫টার দিকে বিনোদপুরের রেডিও সেন্টারের এক কোণে গিয়ে দেখি রক্ত মাখা কাপড়ে আমার ছেলেটা পড়ে আছে। আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই আমাকে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা সরিয়ে দেয় এবং তারা লাশ তুলে নিয়ে চলে যায়। তার পিতার দাবি, সেখানে লাশ পড়ে ছিল সেখানে কোন অতিরিক্ত রক্ত নাই, তাই সেখানে তাকে গুলি করা হয়নি। অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে এনে রাখা হয়েছিল। লাশ রেখে পুলিশই পাহারা দিচ্ছিল আমার উপস্থিতির পরেই তাকে আবার পুলিশ নিয়ে চলে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোর ৪টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর র‌্যাবের পক্ষ থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারকে ফোন করে বলা হয় নিহতের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য। খবর শুনে কমিশনার আনসার আলী সেখানে উপস্থিত হলে র‌্যাবই আবার তাকে স্থান ত্যাগ করতে বলে। এ সময় কমিশনার লাশ না নিয়েই চলে আসেন।

এলাকায় শোকের ছায়া
শাহাদাতের মৃত্যুর সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার আত্মীয়স্বজনেরা হাজির হতে থাকে তার বাড়িতে। তবে বেলা ১টা পর্যন্ত বাড়িতে লাশ দাফনের বিষয় নিয়েও অনিশ্চয়তার মাঝে ছিল পরিবার ও স্বজনেরা। বারবার মেডিক্যাল কলেজ ও পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেও লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছিল না কেউ। তবে তার পিতা বলেন, পুলিশ-র‌্যাব মিলে নাকি লাশ দাফন করবে এমন তথ্য তাকে দেয়া হয়। তার পিতার দাবি, আমার আত্মীয়স্বজন নিয়ে লাশ দাফন করবো এতটুকু প্রত্যাশা আমি এই সরকারের কাছে করেছি।

শহীদের আপনজনদের কথা
শহীদের ভাই বলেন, আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার ভাইকে শহীদি মর্যাদা দেন এবং তাকে জান্নাতবাসী করুক। আমরা আপনজনরা গর্বিত এ জন্য যে আল্লাহ আমাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার করেছেন। আমার ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ শাহাদাত
জন্ম তারিখ ও বয়স : ১.১২.১৯৮৪, বয়স ৩০ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ১২.০৫.২০১৩ ইং রাত ৩টা ৩০ মিনিট
শাহাদাতের তারিখ : ১২.০৫.১৩ ইং, স্থান : রাজশাহী বেতারের মাঠ আমজাদের মোড় ধরমপুরে ক্রসফায়ার নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। দাফন করা হয় : কাজলা সাকোপাড়া গোরস্থান
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : কাজলা, ডাকঘর : কাজলা, থানা : মতিহার, জেলা : রাজশাহী
পিতা : মো: আখতারুজ্জামান মানু, অবসরপ্রাপ্ত
মাতা : মোছা: সাবিহা বেগম, বয়স প্রায় ৫৬ বছর, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : হাসানুল বান্না, নবীন অ্যাডভোকেট; মোছা: মুনিরা খাতুন, বিএ অনার্স; মোছা: রূহ আফজাহ (সাথী), গৃহিণী

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ

পিতা

মো: আখতারুজ্জামান মানু

মাতা

মোছা: সাবিহা বেগম

জন্ম তারিখ

ডিসেম্বর ১, ১৯৮৪

ভাই বোন

চার ভাই-বোন সবার বড়

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : কাজলা, ডাকঘর : কাজলা, থানা : মতিহার, জেলা : রাজশাহী

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

কাটাখালী আদর্শ কলেজের ডিগ্রির ছাত্র

শাহাদাতের স্থান

রাজশাহী বেতারের মাঠ আমজাদের মোড় ধরমপুরে ক্রসফায়ার নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।


শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ


শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ