শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন

০১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ - ০৩ মার্চ ২০১৩ | ১৬৩

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“মা আজো হঠাৎ করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মত কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তোমরা কি কেউ আমার ছেলেরে আইনবার দিবার পারবা? সন্তানহারা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে?”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ মো: আলমগীর হোসাইন ১৯৯৬ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার কলাকোপা গ্রামে এক কৃষক পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট, ভাইবোনদের আদরের ছোট ভাই। শহীদ মো: আলমগীর হোসাইন দয়ারামপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-দাখিল (অ) গ্রেডে পাস করে বগুড়া শহরে নোবেল প্যারামেডিক্যালে ভর্তি হন। বড় ভাই মো: ইসমাইল একটি টেকনিক্যাল কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করেন, অন্য ভাই মো: লিটন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ড্রাইভারের কাজ করেন। বোন মোছা: ছবিকা আক্তার বিবাহিতা। তার স্বামী মো: জহুরুল ইসলাম একজন দিনমজুর। ৬০ বছর বয়সী বাবা মো: আনসার আলী প্রামাণিক কৃষি কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। শহীদ মো: আলমগীর হোসাইন ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাথীপ্রার্থী।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন
বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা দেয়ার পর তৌহিদি জনতা এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে ৩ ও ৪ মার্চ হরতাল ও প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। শহীদ মো: আলমগীর হোসেন ৩ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টায় তৌহিদি জনতার শন্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন। সেখানে জালেমদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয় এবং শান্তিপূর্ণ মিছিল ও প্রতিবাদ করেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডাররা অতর্কিভাবে শত শত রাউন্ড টিয়ার শেল ও গুলি বর্ষণ করতে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে সাড়ে ৭টায় বগুড়া ইসলামী হাসপাতালের কাছে ইয়াকুবের মোড়ে এলাকায় শহীদ মো: আলমগীর হোসেনকে র‌্যাব সরাসরি গুলি করলে তিনি গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। পুলিশ লাশ নিয়ে যায়, আটকে রাখে অতঃপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পোস্টমর্টেম করার পর ৪ মার্চ সকাল ১১টায় প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর লাশ হস্তান্তর করে। কলাবোনা আতরজান মেমোরিয়াল হাইস্কল মাঠে শহীদের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মাকসুদুর রহমান।

শহীদের আপনজনদের কথা
মা-বাবার আর্তি : ছেলে হিসেবে শহীদ মো: আলমগীর হোসাইন যথেষ্ট ভদ্র ছিলেন। তিনি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। যথেষ্ট আদবের সাথে চলতেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করতে ও ইসলামের নিয়ম কানুন মেনে চলতেন। গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালোবাসত। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে গ্রামে দুস্থদের সেবা করবেন। দরিদ্র মা-বাবার দুঃখ লাঘব করবেন। কিন্তু স্বৈরাচারের ঘাতক বুলেট তার সে স্বপ্নকে অঙ্কুরেই শেষ করে দেয়। মা আজো হঠাৎ করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মত কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “তোমরা কি কেউ আমার ছেলেরে আইনবার দিবার পারবা?” সন্তানহারা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে কে এই প্রশ্নের উত্তর দেবে? সাড়ে তিন বছর আগে দাদার মৃত্যু হয়েছে। পাশে বাবার কবরের জন্য জায়গা রাখা ছিল। সবার আদরের আলমগীর সকল কিছুতেই সবাইকে ছাড় দিলেও আজকে কী হলো কাউকে সে কোন ছাড়ই দিল না। বড় সকল ভাইবোন তো দূরের কথা এমনকি মা এবং ৬০ বছর বয়সী পিতাকে পেছনে ফেলে দাদার পাশে কবরের সেই দামি জায়গাটা কেড়ে নিল সে। তাই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ শতবর্ষী দাদার কবরের পাশে শুয়ে আছেন সর্বকনিষ্ঠ ১৭ বছরের আলমগীর।

বড় ভাই : আমার ভাই সবার সাথে ভাল ব্যবহার করতো। নিয়মিত নামাজ আদায় করতো। কাউকে দেখলেই আগে সালাম দিত। কখনো কারো সাথে ঝগড়া করতো না। ইসলামী রীতিনীতি পালনে আমাদের তিন ভাইয়ের মাঝে সে ছিল বেশি অগ্রসর।

মেজো ভাইয়ের কথা : মেজো ভাই এর সাথে শহীদ আলমগীরের কথা হয়েছিল যে, আমার লেখাপড়ার খরচ তুমি বহন করবে। আর আমি পড়ালেখা শেষ করে তোমার টাকা পরিশোধ করব। অন্যথায় জমি দিয়ে দেবো।

তার সাথীদের কথা : শাহাদাতের সপ্তাহ খানে আগে শহীদ আলমগীরসহ ওর ৪-৫ বন্ধু গাইবান্ধা বেড়াতে গিয়েছিল। রাস্তায় তাদের নসিমন গাড়িটি এক্সিডেন্ট করায় সবাই কম বেশি আহত হয়। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। আজ সেই বন্ধুরা কাঁদেন, আল্লাহ কি এভাবেই তাকে চূড়ান্ত কোরবানির জন্য অন্যদের ভেতর থেকে বাছাই করে আলাদা রেখেছিলেন? ঘটনার দিন ভোরে দাযিত্বশীলরা তাকে তাড়া দিচ্ছে দ্রুত মিছিলে যেতে হবে। শহীদ আলমগীর ধীরস্থীরভাবে বলেছিলেন, আমার গোসল জরুরি, তাই গোছল করেই যাবো। শাহাতাদের প্রস্তুতি নিয়েই যাবো। সঙ্গীরা কাঁদেন সত্যি আল্লাহ তার প্রত্যাশাকে কিভাবে কানায় কানায় পূর্ণতা দিয়েছেন।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: আলমগীর হোসাইন
জন্ম তারিখ ও বয়স : ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ইং, ১৬ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ৩ মার্চ ২০১৩ সকাল সাড়ে ৮টায়
শাহাদাতের তারিখ : ৩ মার্চ ২০১৩ সকাল সাড়ে ৮টায়,

স্থান : বগুড়া ইসলামী হাসপাতালের কাছে ইয়াকুবের মোড় এলাকায়। দাফন করা হয় : বাড়ির পাশে
স্থায়ী ঠিকানা : কলাকোপা, ডাকঘর : কলাকোপা, থানা : গাবতলী, জেলা : বগুড়া
পিতা : মো: আনসার আলী প্রামাণিক, ৬০ বছর, কৃষিকাজ করেন
মাতা : খাতেমুন, বয়স ৪৫ বছর, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : মো: ইসমাইল, টেকনিক্যাল কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করেন, মোছা: ছবিকা, বিবাহিতা, স্বামী : মো: জহুরুল, ক"ষিকাজ, মো: লিটন, ড্রাইভিং, আব্দুল মোনায়েম লিঃ কোম্পানিতে চাকরি করেন, মো: আলমগীর হোসাইন (শহীদ), প্যারামেডিক্যালে পড়তেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন

পিতা

মো: আনসার আলী প্রামাণিক

মাতা

খাতেমুন

জন্ম তারিখ

সেপ্টেম্বর ১, ১৯৯৬

ভাই বোন

৪ভাই বোনের মধ্যে ছোট

স্থায়ী ঠিকানা

কলাকোপা, ডাকঘর : কলাকোপা, থানা : গাবতলী, জেলা : বগুড়া

সাংগঠনিক মান

সাথীপ্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

নোবেল প্যারামেডিক্যালে, বগুড়া

শাহাদাতের স্থান

বগুড়া ইসলামী হাসপাতাল, ইয়াকুবের মোড়ে


শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন


শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মোঃ আলমগীর হোসেন