শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন

১৬ অক্টোবর ১৯৯৪ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১৫৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“কাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত- কোন কাসে সে কখনো দ্বিতীয় হয়নি!... তার মা তাকে বলে সে যেন মিছিলের পেছনে থাকে। জবাবে বলে, পেছনে থাকলে কাপুরুষের মতো থাকব, আমিতো শহীদ হওয়ার জন্য যাচ্ছি।... মুয়াজ্জিন মসজিদের সবার নামাজ শেষ হলে দাঁড়িয়ে থাকতেন দরজা লাগোনোর জন্য কিন্তু তুহিনের নামাজ যেন শেষ হয় না। কখনো সে তাহাজ্জুদ এবং এশরাকের নামাজ বাদ দিতো না।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ মো: ইকবাল হোসেন তুহিন সাতক্ষীরা সদরের হরিশপুর গ্রামে ১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তুহিন পিতা আব্দুল বারী ও মাতা আসমা পারভিনের তিন সন্তানের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শহীদ ইকবাল হোসেন পড়ালেখার পাশাপাশি দ্বীনি কাজে ব্যস্ত- ছিলেন। তিনি একজন মেধাবী তরুণ ছিলেন, ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত- ক্লাসে তিনি কখনও দ্বিতীয় হননি। দাখিলে এ প্লাস এবং এ নিয়ে এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে সকল পরীক্ষায় পাস করিয়ে তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
ঘটনাস্থল শহীদের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার। মিছিলের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তেমনি খবর পেয়ে ইকবাল হোসেন তুহিন ও তার বাবা সিদ্ধান্ত- নিচ্ছিলেন কে যাবে মিছিলে? বাবা না ছেলে? বাবা বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত- নেই পিতা-পুত্রের একজন যাবো। সে জানতে পেরে সে তার বাবাকে বলে, আমি যাবো, বাসায় মা না থাকাতে তাকে ফোন করে। তার মা তাকে বলেন, সে যেন মিছিলের পেছনে থাকে। জবাবে বলেন, পেছনে থাকলে কাপুরুষের মতো থাকব, আমিতো শহীদ হওয়ার জন্য যাচ্ছি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ’১৩ বিকাল ৫টায় গুলিবিদ্ধ হওয়া পর ভ্যানে করে বাড়ির দিকে আসার সময় মনে হয় তিনি বেঁচে আছেন, তাই আবার হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সেখান থেকে ময়না তদন্তের পর রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয় এবং জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শহীদের স্বজনদের কথা
শহীদের বাবা : সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত মসজিদে আদায় করতো ছোট ভাইদের সাথে নিয়ে। যখন মসজিদে আজান হতো তখন নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে সে দাদার নেতৃত্বে মসজিদে যেত। মুয়াজ্জিন মসজিদের সবার নামাজ শেষ হলে দাঁড়িয়ে থাকতেন দরজা লাগানোর জন্য কিন্তু তুহিনের নামাজ যেন আর শেষ হয় না। সে খুব ধীর স্থির ভাবে সালাত আদায় করতো। কখনো সে তাহাজ্জুদ এবং এশরাকের নামাজ বাদ দিতো না। রাত দুটোয় উঠে যখন তাহাজ্জুদ পড়তো পাশে যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের যাতে ডিস্টার্ব না হয় এ জন্য মশারির ওপর তোয়ালে দিয়ে রাখত। সর্বদাই বই এবং পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত- থাকতো। যেখানেই জিহাদের কোন আয়াত বা হাদিস পেত আন্ডার লাইন করতো। এ বছর দুইবার কুরআন খতম দিয়েছিল। কোন সময় পেলে পাড়ার ছেলেদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করতো।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ মো: ইকবাল হোসেন তুহিন
জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৬.১০.১৯৯৪ ইং, বয়স : ১৯ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ’১৩, পেটের নিচের অংশে গুলিবিদ্ধ হন

শাহাদাতের তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বিকাল ৫টা

স্থান : কদমতলার মোড়, সাতক্ষীরা শহরদাফন করা হয় : নিজ পারিবারিক কবরস্থান
ঠিকানা : গ্রাম : হরিশপুর, ডাকঘর : আগরদাড়ী, থানা : সদর, জেলা : সাতক্ষীরা
পিতা : মো: আব্দুল বারী, ৪৩ বছর, ব্যবসা ও কৃষি
মাতা : আসমা পারভিন বিউটি, গৃহিণী
ভাইবোনের বিবরণ : মো: ইকবাল হোসেন তুহিন, শহীদ; মো: নাঈমুর রহমান, ১৩ বছর, ৭ম শ্রেণী; মো: আবু নাসিম, ১০ বছর, ৫ম শ্রেণী

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন

পিতা

মো: আব্দুল বারী

মাতা

আসমা পারভিন বিউটি

জন্ম তারিখ

অক্টোবর ১৬, ১৯৯৪

ভাই বোন

৩ভাই, বড়

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : হরিশপুর, ডাকঘর : আগরদাড়ী, থানা : সদর, জেলা : সাতক্ষীরা

সর্বশেষ পড়ালেখা

অনার্স ভর্তী ইচ্ছুক

শাহাদাতের স্থান

কদমতলার মোড়


শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন


শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ ইকবাল হোসেন তুহিন