শহীদ আলী মোস্তফা

০৮ জুন ১৯৯৬ - ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | ১৫৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“মা হদয়ের আকুতি দিয়ে বলেছিলেন, বাবা তোর পায় ধরি তুই থাক। অতঃপর মোস্তফা বড় বোনকে বলেছিলেন, বু আমার মাকে দেখ আমি হয়তো আর আসবো না। বাবা বলেন, ওর মাকে বললাম, তোমার আলী মোস্তফা শাহাদাত বরণ করেছে। সে বস্তার মতোই মাটিতে পড়ে গেল! ৯ দিন পর্যন্ত- স্যালাইনে ছিল। জ্ঞান ফিরলে আলী মোস্তফা আমার আব্বু বলে আবার জ্ঞান হারায়। ওর দাদীও বিছানায়, উঠতে পারেন না, খাওয়া-দাওয়া টয়লেট সব বিছানায়। উভয়ের জীবন শঙ্কাগ্রস্ত। ঐদিন শ্যাম্পু কিনে আর মোস্তফা বলে, ভালোভাবে গোসল করে যাচ্ছি শহীদদের নাকি গোসল দিতে হয় না।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ আলী মোস্তফা সাতীরা জেলার দেবহাটা থানার শশাডাঙ্গা গ্রামে ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল মজিদ ও মাতা আনোয়ারা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। পিতা-মাতার অত্যন্ত- আদরের সন্তান শহীদ আলী মোস্তফা শশাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি বৃত্তি পেয়ে, এ পর্ব শেষ করে শশাডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ২০১২ সালে সায়েন্স বিভাগ থেকে এ প্লাস পেয়ে তিনি দাখিল পাস করেন। সর্বশেষ খানপুর আলিম মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিলেন। অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির, দ্বীনের কাজে সদাব্যস্ত ও সুন্দর সংগঠক হওয়ায় সমবয়সী সবাই তার সাথে বন্ধুর মত ব্যবহার করতেন আর মুরব্বিগণ তাকে খুবই স্নেহ করতেন। বাড়ি আসলেই তার শিকক্ষগণ তাকে জুমার খুৎবা বা মসজিদে দ্বীনি আলোচনা করতে বলতেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছোট বা সমবয়সী ছাত্রদের তাদের কঠিন বিষয়ওলো পড়িয়ে দিতেন। তার মন ছিল ঈমানী চেতনায় উদীপ্ত। তাই কোন ঈমানদারের ওপর জুলুম তিনি সহ্য করতে পারতেন না। শাহাদাতের মাত্র দুই দিন আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তিনি সাথীপ্রার্থী হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিলো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত হবে।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে বাড়ি থেকে খানপুর আলিম মাদ্রাসায় যান এবং বলে যান যে সামনে পরীক্ষা আছে। তিনি মাদ্রাসা হোস্টেলে থাকতেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ’১৩ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের রায় হবে বলে কোর্ট থেকে ঘোষণা আসে। আর এ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিরপরাধ মাওলানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাই বলে দেয় যে কেমন রায় হতে পারে। তাই ২৮ তারিখ সারা দেশে হরতাল ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তিনি মিছিলের একেবারে সামনের কাতারে ছিলেন। মিছিল শুরু হয়ে শহরের সার্কিট হাউজের কাছাকাছি আসলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে গুলি আরম্ভ করে। শহীদ আলী মোস্তফার মাথায় বাম চোখের উপরের দিকে গুলি লেগে তা পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন।

১ মার্চ শুক্রবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে তার জানাযা হয়। এতে ইমামতি করেন মুহাদ্দিস মাওলানা রবিউল বাশার। জানাযায় আনুমানিক তিন হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। তার পর নিজ গ্রাম শশাডাঙ্গা মসজিদের উত্তরে পবিত্র পরিরেশে তাকে দাফন করা হয়।

শহীদের আপনজনদের কথা
শহীদের পিতা-মাতা : শহীদের পিতা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মজিদ শিশুর মতো কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘না বলে ছেলেটি কিছু করতো না। কয়েকদিন আগে বাড়ি গিয়েছিল দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে অজানা আশঙ্কায় মা তাকে নিজের কাছে আটকে রাখতে চেয়েছিল! কিন্তু মাদ্রাসার মাহফিলের বাঁশ কাটতে হবে বলে ও চলে আসতে চায়। মা হৃদয়ের আকুতি দিয়ে বলেছিল, ‘বাবা তোর পায় ধরি তুই থাক।’ অতঃপর মোস্তফা বড় বোনকে বলেছিল, ‘বু আমার মাকে দেখ, আমি হয়তো আর আসবোনানে।’

শহীদ আলী মোস্তফা সকালে বাবার সাথে ফোন করে বলেন, আব্বু পিকেটিংয়ে যাচ্ছি, বাবা নিষেধ করে বাসায় বসে দোয়া করতে বলেন। কিন্তু তেজোদীপ্ত কিশোর মোস্তফা বলে ওঠে, হাজার হাজার লোক যাচ্ছে, বাড়িতে বসে বসে দোয়া করলে হবে?, অবশেষে আব্বার অনুমতি নিয়ে সে বের হয়ে পড়ে। দুপুরে সে ফিরে আসে এবং গোসল করে দুপুরের খাবার খেয়ে বাবার সাথে মোবাইলে আবার কথা বলে। বলে, ‘আর বসে থাকা যায় না। কারণ মুমিনের গুণ হলো তিনটি : অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও কাজে বাস্তবায়ন। এখন কাজে বাস্তবায়ন করার সময়। আমি মিছিলে গেলাম, দোয়া করবেন।’ এই বলে সাতীরা শহরের মিছিলে চলে যায়। বাবা বলেন, ৫টার দিকে ফোনে শুনলাম ছেলে শহীদ হয়ে গেছে।

শহীদের শিক্ষক : বড় ও মুরুব্বিদের খুব সম্মান করতো। খুবই লাজুক প্রকৃতির ছেলে ছিলে। যদি কখনো বাসায় আসতাম ও খাবারের সময় খাবার গ্রহণ কবার অবস্থায় থাকলে খুব লজ্জা পেত। বিভিন্নমুখী যোগ্যতা ছিল তার এবং সে ছিল খুবই মেধাবী। তার শিক বলেন : সে আরবিতে এত ভাল ছিল যে, ৯ম শ্রেণীর পক্ষার খাতা কোন বইয়ের সহযোগিতা ছাড়াই নিজে দেখে নম্বর দিতে পারত।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল
নাম : শহীদ আলী মোস্তফা 
জন্ম তারিখ ও বয়স : ০৮.০৬.১৯৯৬ ইং, ১৭ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ২৮, ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বাম চোখের উপরে গুলিবিদ্ধ হন
শাহাদাতের তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বিকাল ৪টা আনুমানিক

স্থান : সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউজের পাশে, দাফন করা হয় : নিজ এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : শশাডাঙ্গা, ডাকঘর : সুবর্ণাবাদ, থানা : দেবহাটা, জেলা : সাতক্ষীরা
পিতা : মো: আব্দুল মজিদ, ৫৫ বছর, জমি ভাড়া নিয়ে মাছের চাষ করেন
মাতা : আনোয়ারা বেগম, ৪৫ বছর, গৃহিণী

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আলী মোস্তফা

পিতা

মো: আব্দুল মজিদ

মাতা

আনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

জুন ৮, ১৯৯৬

ভাই বোন

৩জন ছোট

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : শশাডাঙ্গা, ডাকঘর : সুবর্ণাবাদ, থানা : দেবহাটা, জেলা : সাতক্ষীরা

সাংগঠনিক মান

সাথীপ্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

খানপুর আলিম মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিলেন

শাহাদাতের স্থান

সাতীরা শহরের সার্কিট হাউজের পাশে


শহীদ আলী মোস্তফা

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আলী মোস্তফা


শহীদ আলী মোস্তফা

ছবি অ্যালবাম: শহীদ আলী মোস্তফা