শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন

১২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ - ১২ জানুয়ারি ২০১৬ | ১৫০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“শহীদের গর্বিত পিতা তার কলিজার টুকরোকে হারিয়ে মর্মাহত। আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন, আমার সন্তান ছিল একেবারে ছোট। আশা ছিল সন্তান বড় হয়ে আমার দেখাশুনা করবে কিন্তু তার আগে আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।”

শহীদের পরিচিতি
শহীদ মো: সাজ্জাদ হোছাইন কক্সবাজার জেলার পেকুয়া থানার পূর্ব মেহেরনামা গ্রামে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পিতা জালাল আহমেদ ও মাতা ছফুরা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান। ৩ ভাই ৩ বোনের সংসারে পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য সর্বত্তক চেষ্টা করেছেন। এ জন্য সন্তানদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন পড়াশুনার জন্য। পিতা-মাতার আশা ছিল সন্তান বড় হয়ে তাদের দেখাশুনা করবে। কিন্তু সন্তানের লাশ কাঁধে নিতে হলো পিতাকে। শহীদ সাজ্জাদ নিজেও মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য ছিলেন দৃঢ়প্রত্যয়ী। নিজে নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি ইসলামের নিয়ম কানুন ভালভাবে মেনে চলতেন এবং পাড়ার ছেলেদের ইসলামের নির্দেশ পালন করার জন্য আহ্বান জানাতেন। তিনি সে সময় এসএসসি পরীক্ষাথী ছিলেন ।

যেভাবে তিনি আল্লাহর ডাকে চলে গেলেন
ঘটনাস্থল শহীদের নিজ বাড়ির পাশে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে শাকুরা বাজারে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে মিছিল ছিল। মিছিলের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক দলবেঁধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শাকুরা বাজার উপস্থিত হয়। তেমনি খবর পেয়ে শহীদ সাজ্জাদ হোছাইন স্কুল থেকে মিছিলে শরিক হন।

মিছিল শাকুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে পেকুয়ার দিকে যাচ্ছিল। মিছিল পেকুয়া বাজারে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয় এবং এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলির শব্দে লোকজন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে। শহীদ সাজ্জাদ একটি বাড়ির দোতালায় গিয়ে আশ্রয় নেন। পুলিশ পিছে পিছে গিয়ে দোতলায় উঠে এবং কাছ থেকে মাথায় গুলি করলে সাথে সাথে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে পুলিশ তার লাশ নিচে নামিয়ে আনে এবং রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। রাস্তায় তার লাশ প্রায় ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা ছিল। ভয়ে কেউ তার লাশ আনার সাহস করেনি। ২ আড়াই ঘন্টা পর তার লাশ বাসায় নিয়ে আসা হয়। লাশ বাসায় নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর র‌্যাব বাসায় আসে এবং তারা পোস্টমর্টেমর জন্য লাশ চায়। পরে শহীদের আত্মীয়স্বজন র‌্যাবের গাড়িতে লাশ উঠিয়ে দিলে তারা প্রথমে থানায় ও পরে কক্সবাজারে মর্গে পাঠায়। ১ মার্চ ২০১৩ তারিখ জুমার পর লাশ ফেরত দেয় এবং আসরের নামাজের পর লাশ বাসায় পৌঁছে। মাগবিরের নামাজের আগে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে শাকুরা বাজারে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে মিছিল ছিল। মিছিলের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত লোক দলবেঁধে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে বিভিন্নভাবে শাকুরা বাজারে উপস্থিত হন। তেমনি খবর পেয়ে শহীদ সাজ্জাদ স্কুল থেকে মিছিলে শরিক হন। মিছিল শাকুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে পেকুয়ার দিকে যাচ্ছিল। মিছিল পেকুয়া বাজারে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয় এবং এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলির শব্দে লোকজন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে। শহীদ সাজ্জাদ একটি বাড়ির দোতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন। পুলিশ পিছে পিছে গিয়ে দোতলায় উঠে এবং কাছ থেকে মাথায় গুলি করলে সাথে সাথে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে পুলিশ তার লাশ নিচে নামিয়ে আনে এবং রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। রাস্তায় তার লাশ প্রায় ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা ছিল। এভাবে ঘটনাস্থলেই সেদিন চারজন ভাই শাহাদাত বরণ করেন। পরদিন পত্রিকাসমূহে এ বিষয়ে বিস্তারিত নিউজ আসে।

১ মার্চ, ২০১৩ দৈনিক সংগ্রাম লিখে : পেকুয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা : কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় গতকাল হরতালের দিন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সাজ্জাদ (১৭) নামে এক দাখিল পরীার্থী নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপে ৩০ জন আহত হয়েছে। জানা যায়, গতকাল আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের ২০-৩০ জন নেতাকর্মী পেকুয়া বাজারে হাঁটাহাঁটি করলে বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে ফেলেন। ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ বাজার ছেড়ে অন্যত্র সরে যান। পরে বিকাল তিনটার দিকে মগনামা, বারবাকিয়া, শিলখালী, মাতব্বপাড়া থেকে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও শিবিরের কর্মীরা মিছিল করে পেকুয়া বাজারে জড়ো হয়। হরতাল সমর্থনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পেকুয়া থানা পুলিশ নির্বিচারে ণ্ডলিবর্ষণ করে হরতালকারীদের ওপর। পুলিশের গুলিতে পেকুয়া ইউনিয়নের বাইম্যাখালী এলাকার বদি আলমের পুত্র মুজিব (২০), ছড়ারপাড়া এলাকার মোস্তাক আহমদের পুত্র ফারুক (১৮), ধন্যাকাটার মহিউদ্দিনের পুত্র তানভীর (১২), জালিয়াখালীর শাহ আলমের পুত্র আবদুল জলিল (২১), বাইম্যাখালীর এজাজুল করিমের পুত্র মোশররফ (১৪), একই এলাকার কালামিয়ার পুত্র রিকশাচালক ওসমান (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত অন্যদের নাম জানা যায়নি। এর আগে রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাবাজারে সকাল ১১টার দিকে হরতাল সমর্থনকারী ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সময় মহিউদ্দিন (৩৭), ফজল করিম (৩৫), আক্তার হোসেন (২৮) গুরুতর আহত হন। এ সময় পেকুয়া থানা পুলিশ ফররুখ আহমদের পুত্র নেজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেফতার করে। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ১৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। নিহত সাজ্জাদ পেকুয়া সদর ইউনিয়নের জালাল উদ্দিনের পুত্র বলে জানা যায়। এ দিকে আহতদের চমেক হাসপাতাল ও পেকুয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পেকুয়া থানা পুলিশ ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন পুলিশের গুলি বর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

শহীদের আপনজনদের কথা
শহীদের গর্বিত পিতা : শহীদের গর্বিত পিতা তার কলিজার টুকরোকে হারিয়ে মর্মাহত। আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করেন। তিনি বলেন, আমার সন্তান ছিলো একেবারে ছোট। আশা ছিল সন্তান বড় হয়ে আমার দেখশোনা করবে কিন্তু তার আগে আল্লাহ তাকে নিয়ে গেলেন। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।

ব্যক্তিগত প্রোফাইল 

নাম : মো: সাজ্জাদ হোছাইন

পেশা : এসএসসি পরীার্থী ছিলেন।
জন্ম তারিখ ও বয়স : ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সাল, ১৫ বছর

আহত হওয়ার তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ’১৩
আহতের ধরন ও পরবর্তী অবস্থা : বাম ভুরুর ওপর গুলি লেগে পেছন দিয়ে মগজসহ বেরিয়ে যায়

আহত হওয়ার স্থান: পেকুয়া বাজার

শাহাদাতের তারিখ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বিকাল ৩টা,

স্থান : রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দাফন করা হয় : পারিবারিক কবর¯'ানে।
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : পূর্ব মেহেরনামা, ড়াকঘর : পেকুয়া, থানা : পেকুয়া, জেলা : কক্সবাজার।
পিতা : জামাল আহমেদ, কৃষিকাজ
মাতা : ছফুরা বেগম, ৩৫ বছর, গ"হিণী
বাড়িঘর ও সম্পদের অবস্থা : নিজ জমির ওপর একটি বসতবাড়ি। মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি টিনের ঘর। দেড় বিঘা আবাদি জমি আছে।
ভাইবোনের বিবরণ : মো: সাজ্জাদ হোছাইন, শহীদ; সাদিয়া মোস্তফা, দশম শ্রেণী; মো: সাইয়্যেম, পিতার কাজে সহযোগিতা করেন; তানিয়া জান্নাত, ৭ম শ্রেণী; তামান্না, ৫ম শ্রেণী; তানিম, ৫ বছর।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন

পিতা

জামাল আহমেদ

মাতা

ছফুরা বেগম

জন্ম তারিখ

ডিসেম্বর ১২, ১৯৯৭

ভাই বোন

৬ ভাই বোনের মধ্যে ১ম

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম : পূর্ব মেহেরনামা, ড়াকঘর : পেকুয়া, থানা : পেকুয়া, জেলা : কক্সবাজার

সর্বশেষ পড়ালেখা

এসএসসি পরীার্থী ছিলেন

শাহাদাতের স্থান

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল


শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন


শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ সাজ্জাদ হোসাইন