শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ২৮ আগস্ট ২০০৬ | ১২৮

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার লগি-বৈঠা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার ঘোষণার পর সারা দেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলার আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও খুনের নেশায় মেতে ওঠে ২৮ অক্টোবরের ২০০৬ সালে।

সেদিন যা হয়েছিল

চারদলীয় জোটের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য সারা দেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায়ও চারদলীয় জোট আয়োজন করে মিছিল ও সমাবেশের। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা বেলা ১১টার আগেই জেলা জামায়াত অফিসে এসে ভরে যায়। যথাসময়ে রফিক ভাইও সমাবেশে আসেন। আর তখনই মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম। মিছিলটি শহরের দাদামোড় পার হয়ে বিএনপির মিছিলের সাথে এক হয়ে সামনে এগোতে থাকে এবং যখন ষোষপাড়ার ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে মিছিল আসে তখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মিছিলে লগি-বৈঠা নিয়ে মিছিলে হামলা করে। আর পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও বেধড়ক লাঠি চার্জ শুরু করে তখন রফিক ভাই পাশের বাড়িতে যেতে ধরলে রাস্তা পাশে ড্রেনে টুপি পড়ে যায়। টুপি তুলতে থাকলে পুলিশ লাঠি দিয়ে পায়ে আঘাত করলে রফিক ভাই হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, হকিস্টিক ও লগি-বৈঠা দিয়ে মাথাসহ সারা শরীর থেঁতলে দেয় এবং নিস্তেজ হয়ে যান রফিক ভাই। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিলে রংপুর মেডিক্যালে নিতে বলেন। রংপুর মেডিক্যালে নেয়ার ৩০ মিনিট পর তিনি শাহাদত বরণ করেন।

স্মৃতিতে শহীদ রফিক
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত উদ্দীপনা নিয়ে এ দেশের শহীদি কাফেলায় শামিল হয়েছিলো বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি জেলা কুড়িগ্রামের নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণকারী আমার প্রিয় সন্তান রফিকুল ইসলাম। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ ঘাতকদের নির্মম আঘাতে শহীদ হয় সে। কী অপরাধ ছিল শান্তশিষ্ট আমার ছেলেটির? তার আশা ছিল পড়াশোনা করে বড় হয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু ঘাতকরা তার স্বপ্নকে চিরতরে বিলীন করে দিল। তার রক্তে রঞ্জিত করে দিল শান্তশিষ্ট কুড়িগ্রাম শহরকে। আসলে আল্লাহতায়ালা তাকে দ্বীনের জন্য কবুল করেছেন আর সে জন্যই শত বাধা বিপত্তিকে ডিঙিয়ে সেদিনের মিছিলে যোগ দিয়েছিল রফিক। মিছিলে আসার পূর্বে আমি এবং তার মা, খালা বারবার নিষেধ করেছিলাম মিছিলে না যাওয়ার জন্য। সকলের বাধা নিষেধকে উপেক্ষা করে দ্বীনি আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে সে মিছিলে গিয়েছিল এবং আমাদেরকে বলেছিল মিছিল শেষে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু রফিক ফিরেছে ঠিকই তবে তার সাথীদের কাঁধে করেই। 

তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রফিক ছিল সবার বড়। ছোটবেলায় তাকে নিয়ে যান তার নিঃসন্তান খালা এবং সেখানেই সে লালন পালন হচ্ছিল। আসলে আজ আমি খুবই মর্মাহত। আমার ছেলে সম্পর্কে কী বলব, আমি আমার এলাকায় এমন একজন ছেলে আর খুঁজে পাইনি। ছোটবেলা থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদের গিয়ে পড়ত। ফজরের আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে আমাদেরকে ডাকতো এবং পাড়ার ছেলেদেরকে ডেকে ডেকে নিয়ে এসে মসজিদে নামাজ আদায় করত। পাড়ার কোন মানুষের সাথে এমনকি এলাকার ছোট-বড় কোন ছেলের সাথে উচ্চস্বরে কথা পর্যন্ত বলেনি।

পাড়ায় যে সকল ছেলে কুরআন পড়তে জানতো না তাদেরকে ডেকে নিয়ে এসে মসজিদের আসরের নামাজের পর নিয়মিত কুরআন শেখাত।
শাহাদাতের কয়েকদিন আগে তার নানা ও নানীর কবরের মাঝখানে একটা কবরের জায়গা পরিমাণ ফাঁকা ছিল এবং সেখানে একটি গাছ ছিল। কেউ সে গাছ কাটতে দেবে না কিন্তু সে জোর করে গাছটি কাটার ব্যবস্থা করে এবং নিজেই মিস্ত্রি ডেকে গাছটি কেটে ফেলে। আসলে নিজের থাকার ব্যবস্থটা সে নিজেই করে রেখেছিল।

আমার এত সুন্দর ছেলেকে আর কোন দিন ফিরে পাবো না। আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না। একটি অপরাধ সে কুরআন শেখাতো, কুরআনের দিকে ডাকত। যারা আমার এ নিরপরাধ ছেলেকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ আমার ছেলে যেন শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করে। এবং আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী আমরা যেন জান্নাতে তার সাথী হতে পারি। আর তোমাদের জন্য আমার বক্তব্য শহীদের রক্তে ভেজা এ ময়দানকে তোমরা আরও উর্বর করো। তার রেখে যাওয়া কাজ সমাপ্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করো।

এক নজরে শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

নাম : মো: রফিকুল ইসলাম
পিতা :মো. আমির আলী
ঠিকানা : চরযাত্রাপুর, যাত্রাপুর, কুড়িগ্রাম
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- ভোগাদহ উচ্চবিদ্যালয়
শ্রেণী- এসএসসি পরীক্ষাথী
সাংগঠনিক মান : সাথী
দায়িত্ব : ইউনিয়ন সেক্রেটারি
শাহাদতের তারিখ : ২৮.১০.২০০৬ বেলা ৩টার দিকে
ভাইবোন : ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়
শখ : কবিতা লেখা (দুইশতেরও ওপর কবিতা লেখেন)
স্মরণীয় বাণী : মিছিলে আসার সময় তার কর্মী ভাইয়ের সাইকেলের সাথে সাইকেল লাগলে তিনি বলেন; দেখা যাবে মিছিলের সময় কার শক্তি বেশি।
তার লেখা কবিতার দু’টি লাইন-

বুকে যাদের ইমান আছে সত্য কায়েম করতে
তারাই পারে বিজয় করতে সত্য সমাজ গড়তে

শহীদ রফিকুল ভাইয়ের পরিবারের বক্তব্য
পিতা বর্তমানে তিনি জামায়াতের সকল প্রোগামে আসেন আর আমাদেরকে বলেন, বাবা তোমরা সকল বাধা অতিক্রম করে রফিকের রেখে যাওয়া কাজ বাস্তবায়ন করে যাও।

মা ও খালা বলেন, আওয়ামীলীগের আর কত মায়ের বুক খালি করার দরকার তোমরা একটু সাবধানে থাক বাবা।

লেখক : শহীদের গর্বিত পিতা

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

পিতা

মো. আমির আলী

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন

স্থায়ী ঠিকানা

চরযাত্রাপুর, যাত্রাপুর, কুড়িগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

ভোগাদহ উচ্চবিদ্যালয়, এসএসসি পরীার্থী

শাহাদাতের স্থান

রংপুর মেডিক্যালে নেয়ার ৩০ মিনিট পর তিনি শাহাদত বরণ করেন।


শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম


শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম