শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১২ অক্টোবর ২০০২ | ১১৮

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর এলাকা। ২০০১ সংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবু সাঈদ (সন্ত্রাসী আওয়ামী নেতা) পরাজিত করে এ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরাজিত শক্তি আমীরে জামায়াতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। যার অংশ হিসেবে তারা চরমপন্থীদের (নকশাল) একটি গ্রুপকে হাত করে পুষ্পপাড়া, রাঙামাটিসহ সাঁথিয়ার কয়েকটি এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ শুরু করে। এমতাবস্থায় মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক এলাকায় নিরীহ গ্রামবাসীকে এ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং গ্রামবাসীদের ৪০/৫০ জনের গ্রুপ করে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবার নিমিত্তে রাত জেগে পাহারা দিতে শুরু করেন। সেই সূত্র ধরে ঘটনার সূত্রপাত হয়।

সেদিন যা ঘটেছিল
সন্ত্রাসীরা স্বাধীনভাবে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করতে না পারায় ১১ অক্টোবর ২০০২ রাত ১১টার দিকে ১০০/১৫০ জন চরমপন্থী সন্ত্রাসী ব্যাপক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাঙামাটি, পুষ্পপাড়া ও আশপাশের এলাকা আক্রমণ করে। তারা নিজেদের পরিচয় আড়াল করে রাখার জন্য ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’ শ্লোগান দিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। তারা বাড়ি বাড়ি হামলা চালায়। দ্বীনি ভাই মনে করে মুস্তাক, তার পিতা, দাদা ও ছোটভাই এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে এবং শহীদ মুস্তাককে চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল দ্বারা মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তাকে উদ্ধার করে সাথিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু আঘাত এতই মারাত্মক ছিল যে, মাথার মগজ বেরিয়ে পড়ছিল। পরে পাবনা থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়া হলে ১২ অক্টোবর বেলা ৩.১৫ মিনিটে মুস্তাক আমাদের ছেড়ে জান্নাতের পথে পাড়ি জমান। সেখান থেকে রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমীর আতাউর রহমান ও শিবির সভাপতি ইউসুফ আলী পোস্টমর্টেম শেষে শহীদের লাশ তার গ্রামের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

শহীদের নামাজে জানাযা
শহীদের লাশের কফিন বাড়ি পৌঁছলে সাথীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে মুনাজাত এবং ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলেন। ১৩ অক্টোবর ২০০২ ফজরের নামাজের পর শহীদকে এক নজর দেখার জন্য হাজারো জনতার ঢল নামে। সবার মুখে একই প্রশ্ন কী ছিল শহীদ মুস্তাকের অপরাধ? কেন তাকে হত্যা করা হলো? ১৩ অক্টোবর বাদ জোহর শহীদের বাড়ির অদূরে অবস্থিত ছন্দহ হাইস্কুল মাঠে হাজারো জনতার উপ¯ি'তিতে বিশাল জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সে দিনের জানাযা দেখে এলাকার সকলেই হতবিহ্বল হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই জানাযায় ইমামতি করেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ও জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এমপি। নারায়ে তাকবীর শ্লোগানের মধ্য দিয়ে শহীদের লাশের কফিন আল্- হেরা মাদরাসা গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় রাস্তার দু’পাশের শোকাহত মানুষ অশ্রুভরা চোখে শহীদ মুস্তাককে বিদায় জানান। শহীদ মুস্তাক শৈশবে যে মাদরাসায় পড়েছেন তার পাশে কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

কেমন ছিলেন শহীদ মুস্তাক
শহীদ মুস্তাক ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। শুধু তিনি নন, তার গোটা পরিবারই ছিল ইসলামী আন্দোলনের দুর্বার ঘাঁটি। তার পিতা জামায়াতের রুকন। চাচা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর। ছোট ভাই শিবিরের কর্র্মী। শহীদ মুস্তাক শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নয়, এলাকাতেও নিয়মিত দাওয়াতী কাজ করতেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। যার প্রমাণ তার কলাগাছ রোপণের পর তার পদক্ষেপে। তিনি ১৯৯৮ সালে একটি কলা গাছের চারা রোপণ করে তাঁর আবক্ষা , চাচাকে বলেছিলেন; এই কলাগাছ যতগুলো কলা দিবে তার বিক্রয়লব্ধ সকল অর্থই আমি সংগঠনের বায়তুল মালে জমা দিতে চাই।’ তিনি যথাযথভাবে সংগঠনকে দিয়েও আসছিলেন। কলাগাছটি এখনো শহীদের স্মৃতি নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। শহীদের গর্বিত শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হুসাইন বলেন; ‘ক্লাসে নির্ধারিত পোশাক না পরে আসায় একদিন রাগ করে মুস্তাককে বলেছিলাম নির্ধারিত পোশাক পরলে না কেন? সেদিন বিনীতভাবে মুস্তাক বলেছিল; স্যার, পোশাক এখনো বানানো হয়নি, কালকে পরে আসবো। সত্যিই দেখছি পরদিন অন্য কোন ছাত্র নির্ধারিত পোশাক না পরে আসলেও মুস্তাক ঠিকই তার কথা রেখেছে।

একনজরে শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক
নাম : মু. মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক
পিতা : ডা. আবদুর রশিদ
সাংগঠনিক মান : সাথী প্রার্থী
দায়িত্ব : ইউনিয়ন সেক্রেটারি
সর্বশেষ পড়াশোনা : আলিম ১ম বর্ষ, (মানবিক)
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসা
আহত হওয়ার স্থান : পুষ্পপাড়া ও রাঙামাটি গ্রামের সীমান্তবর্তী জায়গায়
শহীদ হওয়ার স্থান :রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আঘাতের ধরন :চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, বন্দুক প্রভৃতি দ্বারা মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত
যাদের আঘাতে শহীদ : আওয়ামী মদদপুষ্ট সর্বহারা সন্ত্রাসী
শহীদ হওয়ার তারিখ : ১২ অক্টোবর ২০০২ (৩.১৫ মিনিট)
যে শাখার শহীদ : পাবনা জেলা
স্থায়ী ঠিকানা : পুষ্পপাড়া, নন্দনপুর, সাঁথিয়া, পাবনা
ভাইবোন : ৩ ভাই (তিনি সর্বজৈষ্ঠ)

শাহাদাতে শহীদের মা-বাবার প্রতিক্রিয়া
মুস্তাকের রক্তের বিনিময়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির করাল গ্রাস থেকে জাতির মুক্তি হোক। আর কারো সন্তান যেন অকালে মারা না যায়।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

পিতা

ডা. আবদুর রশিদ

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৩ ভাই (তিনি সর্বজৈষ্ঠ)

স্থায়ী ঠিকানা

পুষ্পপাড়া, নন্দনপুর, সাঁথিয়া, পাবনা

সাংগঠনিক মান

সাথী প্রার্থী

সর্বশেষ পড়ালেখা

আলিম ১ম বর্ষ, (মানবিক), পাবনা ইসলামিয়া মাদরাসা

শাহাদাতের স্থান

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল


শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক


শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক