শহীদ বেলাল হোসেন

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ১২ মে ২০০২ | ১১৭

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

শহীদী মিছিলে এক অগ্রসেনানী শহীদ বেলাল। ২০০২ সালের ১২ মে তিনি এই মিছিলে যোগ দেন। সেদিন ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে রক্ত দিয়ে লিখে গিয়েছেন প্রিয় নামটিঃ ‘শহীদ বেলাল’। চলে গেছেন জান্নাতে, তাঁর প্রিয় প্রভুর সান্নিধ্যে। শহীদ বেলাল ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরের বাজার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। কুখ্যাত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সর্বজনধিকৃত শিপন কসাইয়ের ধারাল ছুরি অকালে ঝরিয়ে দেয় এই সম্ভানাময় গোলাপটিকে, কুপিয়ে হত্যা করা হয় এই তাঁকে।

যে অপরাধে বেলালকে হত্যা করা হলো
দশম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ বেলাল, এই বয়সে কীবা অপরাধ করতে পারেন তিনি। নিষ্পাপ চেহারা তাঁর ব্যক্তিত্বকে করেছিল আরও সুমজ্জ্বল। তারপরও তাঁকে এই দুনিয়ায় থাকতে দেয়া হয়নি। এলাকাবাসী সাক্ষী, খুনী শিপন তার ছাত্রলীগ নামধারী বখাটে বাহিনী নিয়ে স্কুলের মেয়েদের উত্যক্ত করতো। মেয়েরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে এইসব বখাটেদের খারাপ আচরণের শিকার হতো। সন্ত্রাসী শিপন একপর্যায়ে স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতরে আড্ডা জমানোর ব্যবস্থা করতে লাগলো। এমতাবস্থায় বেলাল তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে শিক্ষকের সহযোগিতায় তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে খুনী শিপন প্রকাশ্য দিবালোকে ফকির বাজারে বেলালকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। শাহাদাত বরণ করে প্রিয় মুখ, এলাকার সকলের শ্রদ্ধা ও স্নেহের পাত্র বেলাল হোসেন।

শহীদ বেলাল ছিলেন সত্যের প্রতীক
শহীদ বেলাল ছিলেন স্কুলের সেরা মেধাবী ছাত্র, শিক্ষকদের আস্থাভাজন, এলাকার মানুষেল প্রিয় সন্তান এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় সহপাঠী। তিনি ছিলেন সত্যের প্রতীক। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। যখন স্কুলে যোহরের আজান হতো তখন অন্য ছাত্রদের নিয়ে মসজিদে নামাজের জন্য যেতেন। সকলকে কল্যাণমূলক কাজ করতে সবসময় উৎসাহ দিতেন। মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে; তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে, নেক আমল করে, আর ঘোষণা করে আমি মুসলমান।’ শহীদ বেলাল কুরআনের বাণীতে যথার্থই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আর তাইতো সে আলোকে জীবনকে সাজিয়ে তুলতেও ছিলেন সচেষ্ট। কিন্তু সমাজের জঘন্য কীট বখাটেরা তাঁকে অঙ্কুরেই শেষ করে দিল এবং ফোটার আগেই গোলাপ কুঁড়িটিকে ছিঁড়ে ফেলল বোঁটা থেকে।

আজও থামেনি সেই কান্না
শহীদ বেলালের মায়ের কান্না আজও থামেনি। তিনি বেলালের নাম শোনা মাত্র আর নিজেকে সামলাতে পারেন না। কান্নায় ভেঙে পড়েনন। অনেকক্ষণ ধরে কাঁদেন তিনি। শহীদের ভাইয়েরা বলেন; আমাদের আব্বা বেলালের জন্য মাঝে মাঝে বেহুঁশ হয়ে পড়তেন। একসময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর একারণেই তিনি মারা যান।

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ বেলাল হোসেন
নাম : মুহাম্মদ বেলাল হোসেন
পিতা : মুহাম্মদ জমূর উদ্দীন
মাতা : মনোয়ারা বেগম
সাংগঠনিক মান : কর্মী
দায়িত্ব : স্কুল সভাপতি
সর্বশেষ পড়াশোনা : ১০ম শ্রেণী
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ফকিরবাজার উচ্চবিদ্যালয়
আহত হওয়ার স্থান : ফকিরবাজার বড় ভাইয়ের দোকান আঙিনায়
শহীদ হওয়া স্থান : সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে
শাহাদাতের তারিখ : ১২ মে, ২০০২ (দুপুর ২.৩০টা)
আঘাতের ধরন : মারাত্মক ছুরিকাঘাত
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী শিপন ও তার চেলাচামুন্ডা 
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- উত্তরবর্ণী, ডাকঘর- ফকিরবাজার, থানা-বড়লেখা, জেলা-মৌলভীবাজার
ভাইবোন : ৪ ভাই, ৪ বোন (তিনি ৫ম)
শখ : বাগান করা

আম্মুর প্রতিক্রিয়া
তিনি বলেন সে আমার ছেলেদের মধ্যে সবার ছোট ছিল। ও সবচেয়ে ভাল ছেলে ছিল কোনোদিন ও সে আমার সাথে রাগ করে কথা বলেনি। সে সবসময় তার বাবা ও আমার সাথে ভাল ব্যাবহার করতো। কোনো ও সে আমাদরে সাথে বেয়াদবি করেনি কথায় অবাধ্য হয়নি। সে পাবিররে সবার সাথে ভাল ব্যবহার করতো। তাকে কেনোদিন কোনো কারণে বকাঝকা ও করতে হয়নি। সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। এলাকর সব ধরনের মানুষের সাথে সে ভাল ব্যবহার করত। এলাকার কেউ কোনোদিন তার বিরুদ্ধে একটি বিচার নিয়ে আসেনি। এলাকার যেকোনো বিপদে আপদে সে এগিয়ে যেত। তিনি আরও বলেন সে সবসময় চাই আমি ও তার পিতা সবসময় যেন সুখে থাকি। সে আমাদেরকে সসবময় ভাল ভাল খাওয়াতে ভালবাসতো। খাওয়ার টেবিলে আমাদেরকে ও অন্যান্যদের আগে খাবার নিয়ে দিত। তারপর সে খেত।

তিনি কান্না ভেঙ্গে কণ্ঠে আরও বলেন সে তার ছোট বোনকে খুবই ভালবাসত। মারা যাওয়ার আগের দিন রাতে ছোট বোনকে নিয়ে পড়তে বসে। হঠাৎ একবার ইচ্ছা করে সে তার ছোট বোনটাকে মারে। ছোট বোনটি তখন কাঁদে। তখন আমি তাকে বললাম ওকে মারলে কেন? তখন সে বলে আমি ইচ্ছা করে মেরেছি। যাতে সে কাঁদে এবং আমি তাকে শেষ বারের মতো টাকা দিয়ে কান্না বন্ধ করতে পারি। আমি তার মৃত্যর কয়েকদিন পর তার বাবা তার চিন্তায় হঠাৎ একদিন হাট অ্যাটাক করে মারা যান।

আমি আল্লাহর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার কলিজার টুকরা ছেলেকে হত্যা করেছে আল্লাহ যেন তার বিচার করে
বেলাল ভাইয়ের বড় ভাই মু. জালাল হোসেন বলেন আমার পড়া লেখা ও খেলার সাথী ছিল। আমরা দু'ভাই একসমান হওয়ায় সবসময় একসাথে চলা ফেরা করতাম। একসঙ্গে যেকেনো জায়গা যেতাম। আমার বন্ধুমতো ছিল।

তার স্কুল শিক্ষক মানবিক বিভাগের স্যার ইমাম উদ্দিন বলেন যে স্কুলে অন্যান্য ১০টি ছেলে চেয়ে অনেক ভাল ছির। তার বিরুদ্ধে স্কুলে কেউ কোনো দিন বিজার ওদেয়নি। স্কুলে জীবনে সে কখনো কারোর সাথে ঝগড়া ঝাটি করেনি। খুব আমায়িক একটি ছেলে ছিল সেজন্য স্কুলে সকল শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাকে খুব ভালবাসত। সে এ সময় ১০ শ্রেণীর ক্যাপ্টেন ছিল।

তার হত্যার সাথে সাথে স্কুলে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও ছাত্র ছাত্রী প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং তার হত্যার প্রতিবাদে মিছিল বের করে
ঐ সময়ের হত্যার প্রত্যাক্ষদর্শী বর্তমানে বেলালের স্কুলে শিক্ষক আবু সাইদ বলেন হঠাৎ করে সন্ত্রাসী শিপন স্কুলের পাশে ফকিরা বাজারে বেলালের ভাইয়ের চা দোকানে এসেে চা পানরত বেলালের পায়ে লাতি মারে বেলাল এর প্রতিবাদ করলে পাশের কসাইয়ের দোকান থেকে ছুরি নিয়ে বেলারের উপর উপর্যপরি ছুরিঘাত করে। এতে হাসপাতলে নেওয়ার পথে সে শাহাদাত বরণ করে।
পরে জানা যায় মিছিল ছিল এলাকার একটি বড় ছেলে। সে প্রায় স্কুলে মেয়েদেরকে স্কুলে যাওয়ার আসার পথে উক্ত্যক্ত করত। বেলাল প্রায় এর প্রতিবাদ করত এবং শিপন তার স্কুলে মেয়েদেরকে উক্ত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশে দেয়। এতে শিপন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বেলালকে দেখে নেওয়ার হামকি দেয়। পরে সে এ ঘটনা ঘটায়।

তিনি আরো বলেন তার হত্যাকে কেন্দ্র করে ঐ সময় এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রী মিলে ছাত্র ঐক্য পরিষদ নামে একটি সংগঠন করে বেলালের হত্যার বিরুদ্ধে মিছিল, সভা সমাবেশ করে। বেলালের স্কুল কর্মচারী হোসেন বলেন তার মত ভাল ছেলে স্কুলে এখন পর্যন্ত দেখিনি। সে আমার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতো। সবসময় হাসিমুখে কথা বলত। বাজারে দেখা হলেই দোকানে ডেকে নিয়ে চা নাস্তা করত। তার বাড়িতে নিয়ে যেতে মাঝে মাঝে চা নাস্তা করার জন্য আমার টাকা দিত।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ বেলাল হোসেন

পিতা

মুহাম্মদ জমূর উদ্দীন

মাতা

মনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৪ ভাই, ৪ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

গ্রাম- উত্তরবর্ণী, ডাকঘর- ফকিরবাজার, থানা-বড়লেখা, জেলা-মৌলভীবাজার

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

১০ম শ্রেণী, ফকিরবাজার উচ্চবিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

ফকিরবাজার বড় ভাইয়ের দোকান আঙিনায়


শহীদ বেলাল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ বেলাল হোসেন


শহীদ বেলাল হোসেন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ বেলাল হোসেন