শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

৩১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ - ২৮ আগস্ট ২০০১ | ১১৬

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

২৮শে আগস্ট, মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক ২টা বাজে। দুপুরের খাবার খেতে বসেছি। খানা প্রায় শেষ। এমন সময় জামায়াত অফিস থেকে মাকছুদ ভাই এসে খবর দিলেন সেনবাগে একজন শিবির কর্মী শাহাদাত বরণ করেছে বলে ফোন এসেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম। কিছু বলতে পারলাম না। মোশাররফ ভাই জিজ্ঞেস করলেন ফোন করেছেন কে? মাকছুদ ভাই বলতে পারলেন না। মোশাররফ ভাই প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য কামরুল ভাইকে নিয়ে জামায়াত অফিসে গেলেন। আমি কোন দিক থেকে কী ইনফরমেশন আসে সে চিন্তা করে বাসায়ই থেকে গেলাম। ইত্যবসরে হাসপাতাল থেকে মুনির ভাই বাসায় আসলেন। তিনি শাহাদাতের খবরের সত্যায়ন করলেন এবং জানালেন যে তিনিই হাসপাতাল থেকে টেলিফোন করে জামায়াত অফিসে জানিয়েছেন। এণে পুরো ঘটনা জেনে নিজেকে সামলে নিয়ে কর্তব্য ঠিক করলাম। আহসান ভাই, অলিউদ্দিন মানিক ভাই সোহেল ভাইকে তাৎণিকভাবে শহীদের লাশের কাছে পাঠিয়ে দিলাম, পাছে হায়েনার দল লাশ নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। এদিকে মোশাররফ ভাইও বাসায় ফিরে এসেছেন মর্মাহত হয়ে। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। প্রস্তুতি নিয়ে শহরে বের হয়ে গেলাম। মুহুর্তের মধ্যে খবর পৌছে গেল শিবির কর্মীদের কাছে। চতুর্দিক থেকে পঙ্গপালের মত ছুটে আসতে লাগল শিবির কর্মীরা। অফিস কেন্দ্রিক জড়ো হতে লাগল শত শত শিবির কর্মী।

হাসপাতালেও ভীড় জমাতে লাগল ছাত্র জনতা। শহীদের সাথীদের চোখ থেকে পানি ঝরছে। তাদের চোখের পানিতেই যেন ভেসে যাবে হায়েনাদের পাষন্ডতা। সেদিন মাত্র ১ ঘন্টার ব্যবধানে মাইজদীর মহাসড়কে শহীদের সাথীরা হাজারো শোকাহত ছাত্র জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজপথ কাঁপানো শ্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে নোয়াখালী শহর। শহীদের শোকাহত সাথীদের রোনাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সেদিনের ছাত্র জনতার মুখে মুখে ছিল - খুন হয়েছে আমার ভাই, খুনি তোদের রক্ষা নাই, এক শহীদের রক্ত থেকে লক্ষ শহীদ জন্ম নিবে, নিজাম ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবনা, যত ঝরবে রক্ত, শিবির হবে শক্ত, নিজাম তোমায় কথা দিলাম, দ্বীন কায়েমের শপথ নিলাম। শহীদ নিজাম উদ্দিন শাহাদাত বরণ করে আলাহর দরবারে পৌছে গিয়েছেন। আমরা শহীদ নিজামের রক্তের সাথে বেয়াদবী করতে পারিনা। আমরা শপথ গ্রহণ করেছি দ্বীন কায়েমের জন্য শহীদ নিজাম উদ্দিনের মত প্রয়োজন হলে আমরাও শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।

শাহাদাতের মর্যাদা আল্লাহর প্রিয় বান্দারাই পেয়ে থাকেন
শাহাদাতের মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। সেদিন শহীদ নিজাম উদ্দিনের শাহাদাতের কর্মসূচী পালনের মাধ্যমেই আমি শাহাদাতের মর্যাতা নতুন ভাবে উপলব্ধি করি। আমার বড় লোভ হয় শহীদি মৃত্যুর জন্য। শহীদ নিজাম উদ্দিন জীবিত নেই ঠিকই কিন্তু শাহাদাতের মর্যাদার কারণে তার লাশের আগে ও পেছনে হাজার হাজার জনতা মিছিল দিয়ে তাকে যেন স্বাগতম শুভেচ্ছা ও অভিভাধন জানিয়ে জান্নাতের দিকে পৌছে দিচ্ছে। শাহাদাতের কামনায় অনেক কর্মীকে আবেগাপ্লুত হতে দেখে আমি নিজেও অনেকটা আবেগী হয়ে গিয়েছিলাম।

আল্লাহর কাছে মনে মনে দোয়া করছি হে আল্লাহ মরতেই যখন হবে তখন শাহাদাতের মৃত্যু নসীব করিও। শাহাদাত সকলের ভাগ্যে জোটে না। কেবলমাত্র আলাহ যাদের বাছাই করেন তারাই এ সৌভাগ্যেও অধিকারী হতে পারেন। শাহাদাতের মর্যাদা অতিরিক্ত একটি মর্যাদা। নবুওতের মর্যাদা যদিও শাহাদাতের মর্যাদার চেয়ে উর্ধ্বে তবুও নবী পাক (সাঃ) শাহাদাতের অতিরিক্ত লোভনীয় মর্যাদা নবুওয়তী মর্যাদার সাথে যোগ করার জন্য শাহাদাত লাভের আকাঙ্খা পোষণ করে বলেছেন- আমার ইচ্ছে হয় আমি একবার শহীদ হই আবার জীবিত হই আবার শহীদ হই পুনরায় জীবিত হই। রাসুলের (সাঃ) এ আকাঙ্খা থেকেই শাহাদাতের লোভনীয়তা কত উর্ধ্বে তা অনুমান করা যায়। শহীদ নিজামউদ্দিন যে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের একজন তার শাহাদাতের পূর্বে আমরা বুঝতে পারিনি। শাহাদাতের পরেই আমরা বুঝতে পেরেছি শহীদ নিজামকে আলাহ তার প্রিয় বান্দার মর্যাদা দিয়ে তাঁর কাছে ডেকে নিয়ে গেছেন। নিজাম ভাইকে শাহাদাতের পূর্বে অনেকেই চেনেননি কিন্তু শাহাদাতের পর সারা দেশব্যাপী তিনি পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর শাহাদাত কবুলিয়তের জন্য দোয়া হয়েছে। এমন ভাগ্য ক'জনার হয়। শহীদ নিজাম একজন চলে গিয়েছেন কিন্তু নিজামের লক্ষ ভাই নিজামের কাজ সম্পাদন করার জন্য শপথ গ্রহন করেছে। তাইতো শহীদরাই আমাদের বড় সম্পদ। আমাদের পুঁজি। তাঁদেরকে পুঁজি করে আমরা কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করি। প্রত্যেকটি মুসলমানেরই উচিৎ শাহাদাতের তামান্না লালন করে, শহীদি চেতনা নিয়ে জান বাজী রেখে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করা। শাহাদাতের তামান্না নিয়ে কাজ করলে শহীদ হতে না পারলেও শহীদী মর্যাদা আলাহ দিয়ে দিবেন, যদি নিয়তের বিশুদ্ধতা থাকে। হে আলাহ তুমি আমাদেরকে শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে তোমার পথে কাজ করার তাওফীক দাও।

মাইজদীতে শহীদ নিজামের প্রথম জানাযা
২৯/০৮/০১ তারিখ সকাল ১১টার দিকে পোষ্ট মর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। রাতেই ঢাকা থেকে শাহাদাতের খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মফিজ ভাই ছুটে এসেছেন। সকাল ৯টায় জরুরী বৈঠক করে কর্মসূচী ফাইনাল করা হয়েছে। ছাত্র ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ (সারাদেশ ব্যাপী) স্মারক লিপি পেশ, গণ সংযোগ, দোয়া পালন ও ছাত্র গণ জমায়েত করার কর্মসূচী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাইজদী জামে মসজিদ চত্বরে সাড়ে বারোটায় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে মাইকিং হতে থাকে। দল-মত নির্বিশেষে চতুর্দিক থেকে লোকজন জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য মসজিদ চত্বরে জমায়েত হতে থাকে। লাশের গোসল সেরে যথাসময়ে জানাযার জন্যে নিয়ে আসা হলে এ সময় জানাযায় উপস্থিত ছাত্র জনতার মাঝে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শহীদের সাথীরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদঁতে থাকলে শোকাহতদের সান্ত্বনা দেবার মতও কারও সাহস হয়নি। এক পর্যায়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় জেলা সভাপতি মোশাররফ ভাই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সফলভাবে পরবর্তী কর্মসূচী পালনের সহযোগীতা চাইলে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
শহীদের কফিন সামনে নিয়ে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বি.এন.পি, জাতীয় পার্টি, ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। হাজার হাজার জনতাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় মেহমান কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি বলেন হত্যা করে, শহীদ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রা রুখা যায়না। বরং তা আরো বেগবান হয় কিন্তু বাতিল শক্তি তা টের পায়না। সেনবাগের মাটিতে শহীদ নিজামের রক্ত ঝরার কারণে সে মাটি ইসলামী আন্দোলনের জন্য বহুগুনে উর্বর হয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর নোয়াখালী জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মুনয়েম সাহেব জানাযার ইমামতি করেন। জানাযা শেষে শহীদের সাথীরা শহীদের কফিন নিয়ে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। কফিনের আগে পেছনে গাড়ির বহর মফিজ ভাইয়ের নেতৃত্বে রাস্তা দীর্ন করে চলতে লাগল। সে অদ্ভুতপূর্ব দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসছে। মনে মনে ভাবলাম শহীদ নিজাম যখন জীবিত ছিল, দ্বীনের কাজ করে যখন কান্ত শ্রান্ত হয়ে যেত, দূর বহুদুরে সফরে যেত তখনতো তাঁর সাথীরা তাঁকে এভাবে অভ্যর্থনা বরণ করে নিতোনা। কিন্তু আজ তাকে বিপুলভাবে এ অভ্যর্থনা কেন? স্বর্গীয় এ অভ্যর্থনায় নেই কোন কৃত্রিমতা নেই কোন বাহানা। সবাই কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করে জানান দিয়ে যাচ্ছে শহীদ নিজাম আলাহর উপর ঈমান আনার কারণে আজ শহীদ হতে হয়েছে। তাঁর অন্যকোন দোষছিলনা। তাই আলাহ তাঁকে অভ্যর্থনা দিয়ে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে জান্নাতে নিতে চান। মাইজদী থেকে পথ চলতে চলতে কফিনের গাড়ির বহর চৌমুহনী এসে পৌছেছে।

চৌমুহনী সেবারহাট ও শহীদের নিজ বাড়ীতে ২য়, ৩য় ও সর্বশেষ জানাযা
বেলা ২টায় চৌমুহনীতে, সাড়ে ৩টায় সেবারহাটে এবং বিকেল ৪টায় শহীদের নিজ বাড়ীতে শহীদের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জানাযায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে যে, শহীদ নিজাম এর শাহাদাত আল্লাহ কবুল করেছেন। প্রতিটি স্থানে শহীদের কফিন সামনে নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। শ্রোতারা খুনীদেরকে ধিক্কার জানাতে থাকে। বাড়ীতে সর্বশেষ জানাযা শেষে শহীদের শোকাহত সাথীরা দাফন কার্য সমাধা করে।

আরেক হৃদয় বিদারক ঘটনা
দাফন সম্পন্ন করার পর মফিজ ভাই সহ আমরা কয়েকজন শহীদের মায়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। সেখানে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মফিজ ভাই শহীদের মাকে শান্তনা দিলেন- নিজাম উদ্দিন আলাহর পথে শহীদ হয়েছেন। আপনি শহীদের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। কাল কিয়ামতে শহীদ নিজাম আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করে আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আপনার এক ছেলে চলে গিয়েছে আমরা হাজারো ছেলে আজ থেকে আপনার ছেলে হিসেবে থাকব। কিন্তু নিজাম উদ্দিনের মা কোন কথাতেই প্রবোধ পাননা। তাঁর একই কথা আমার ছেলের কোন দোষ ছিল না। তাঁকে সন্ত্রাসীরা মারল কেন? শহীদের মা চিৎকার করতে করতে এক পর্যায়ে জ্ঞান শূন্য হয়ে বলতে লাগল- আমার নিজামকে পুকুর পাড়ে রাখতেছ কেন? সন্ত্রাসীরা আমার নিজামকে রাতে এসে মেরে ফেলবে। অথচ শহীদ নিজাম সে সময়ে কবরে শায়িত। তাঁর মা কি বলতেছে সে জ্ঞান তার তখন ছিল না। পুত্র শোকে দিশেহারা মুহ্যমান। শহীদের মার কথা শুনে চোখের পানি সে দিন ধরে রাখতে পারিনি। আলাহর কাছে নিরবে শুধু দোয়া করেছি- হে আল্লাহ যারা মায়ের বুক খালি করে মাকে এভাবে কষ্ট দেয় তাদের উপযুক্ত বিচার তুমি কর। শহীদের বোনদের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। শান্তনা দেয়ার ভাষা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। শুধু অপলক নেত্রে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার বা বলার জন্য খুঁজে পাইনি।

যেভাবে শহীদ হলেন
২৮ আগস্ট। সকাল ১০টা। শহীদ নিজাম উদ্দিন বাড়ীর থেকে বের হয়ে রিক্সা যোগে সেবার হাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেবার হাটের অদূরে ধর্মপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হানিফ মিয়ার বাড়ীর সম্মুখে পৌছলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ইউসুফ, সোহেল, চানমিয়া, নাসের, সেলিম, মামুন নামের ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা অতর্কিত আক্রমণ করে। শহীদ নিজামউদ্দিন রিক্সা থেকে পড়ে গেলে উপর্যপুরি কুপিয়ে তাঁর মাথা শরীর ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। হাত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। শহীদ নিজাম উদ্দিনকে প্রথমে সেনবাগ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আনার পথে শাহাদাত বরণ করেন (ইন্নালিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সন্ত্রাসীরা কেন শহীদ করল নিজাম ভাইকে?
উত্তম চরিত্র গঠন ছিল নিজামের শাহাদাতের কারণ। আল্লাহর দিকে আহবান করাই ছিল তাঁর দোষ। সাহসিকতা প্রদর্শন করাই ছিল নিজাম উদ্দিন টার্গেটে পড়ার মূল কারণ। সন্ত্রাসীরা মনে করেছিল নিজাম উদ্দিন যদি এলাকাতে প্রাধান্য বিস্তার করে তা হলে তারা আর সন্ত্রাস করতে পারবে না। তাদের সন্ত্রাসের পথে নিজাম উদ্দিনই একমাত্র বাধা। তাই তারা পথের বাধা দুর করতে হত্যার পথ বেছে নিল। আমরা আলাহর দরবারে বিচার দিয়ে রাখলাম। যারা আমার ভাইকে শহীদ করেছে আলাহ শহীদ নিজাম এর শহাদাতের বিনিময়ে এদেশকে ইসলামের জন্য কবুল করুন। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে মুক্ত করুন। শহীদের রেখে যাওয়া অপূর্ণাঙ্গ কাজ সামাধা করার তাওফিক আলাহ আমাদেরকে দান করুন। আমীন।

প্রত্যক্ষাদর্শীর প্রতিক্রিয়াঃ 
একজন প্রত্যক্ষ বলেন ১০.৩০ শহীদ নিজাম তার বাড়ি থেকে বিকশা যোগে ধর্মপুর যাচ্ছিলেন একটু আসার পর ৭/৮ জন সন্ত্রাসী তাকে কলার চেপে রিকশা থেকে নামিয়ে নেন এবং চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ৭/৮ কোপ দেয় এবং পেছন থেকে রামদা দিয়ে তার নাম সিনা দুভাগ হযে যায়।

সমসাময়িক দায়িত্বশীলের প্রতিক্রিয়াঃ শহীদ নিজাম ছিলেন চৌকস মেধাবী কর্মী ছিলেন অমায়িক ব্যবাহার এবং সুন্দরও আচরণে কল দায়িত্বশলি মু" দিলেন আমরা এখনো তার কথা তুলতে পারবে না।

আহত হওয়ার স্থান
ধর্মপুর স্কুলে দক্ষিণ রাস্তার উপর থেকে বাগানের ভিতর টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে চাইনজ কুড়াল এবং রামদা দিয়ে আঘাত করে পরবর্তীতে মাইজদী জেনারেল হাসপাতাল এর উদ্দ্যেশে রওনা হয়। শাহাদাতের স্থান: হাসপাতলে নেয়ার পথে চৌমুহনী চৌরাস্তার দক্ষিণে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে পৌঁছে যান।
সহপাঠীর প্রতিক্রিয়া : মো. কেফায়েত উল্লাহ বর্তমান সেনবাগ দক্ষিণ থানা সভাপতি,যিনি একসাথে টিসি করেছেন শহীদ নিজাম সুবক্তা ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর বক্তব্যে দিতেন। হঠাৎ একদিন মাদ্রসায় শুনি নিজাম ভাই শহীদ হয়েছেন তখন আমরা ছুটে এসে তাকে আর জীবন্ত অবস্থায় পাই নাই।

বোনের প্রতিক্রিয়া :
আমার বড় ভাই নিজাম উদ্দিনকে হারিয়ে আমি নির্বাক আমাদের আশা ছিল ভাই পড়াশোনা করে বড় হবে আমাদের সকলের জন্য মডেল হবে। 


মাতার প্রতিক্রিয়া : নিজাম এর আজ আর ও নেই নামাজ এর জন্য ছিল চরম ব্যকুল বাড়ির সকল মানুষ এমন কি বদলাদের ও নামজের পড়াশোনার জন্য ছিলেন আগ্রহী।
নিজাম ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারী। এখন ও যদি আমি স্বপ্নে দেখি আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা। সর্বশেষ আমি স্বপ্নে দেখি আমি নামাজ পড়তে ছিলাম হঠাৎ দেখি নিজাম সাদা পোষাকে এসে বলছে আপনি অন্ধকারে নামাজ পড়ছেন কেন? আমি তো খুব ভালো আছি। আমি সুখে আছি আপনি চিন্তা করবেননা। এবং ধবধবে সাদা পোষাক পরিহিত ছিল। সমাজের সকল অন্যায় অপরাধ সকল কিছু যে থেকে মানুষকে দূরে রাখতেন। মায়ের আকুতি হল আমার ছেলে নেই আজ আমি নির্বাক।

একনজরে শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন
পূর্ণনাম : মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন
পিতা : মরহুম আবুল হাশেম
মাতা : রূপধন আরা বেগম
ভাই-বোন : ভাই-৪জন, বোন-৪জন, শহীদ নিজাম ভাইদের মধ্যে সবার ছোট
বোন ২জন বিবাহিতা। ভাই দুইজন বিদেশ থাকেন। একজন এলাকায় থাকেন।
জন্ম তারিখ : ৩১-১২-১৯৮৫ ইং
ভাইয়েরা হলেন - ১. মিজানুর রহমান, ২. ইমাম উদ্দিন, ৩. নূরনবী
বোনেরা হলেন - ১. আয়েশা খাতুন ২. খাতিজা বেগম ৩. ফাতেমা বেগম ৪. আমেনা বেগম
ঠিকানা : বাড়ী-মুন্সী বাড়ী, গ্রাম- বীর নারায়ণপুর, ৮নং বীজবাগ ইউনিয়ন পোষ্ট: সেবারহাট, থানা: সেনবাগ, জেলা: নোয়াখালী
সাংগঠনিক মান : কর্মী
আহত হওয়ার স্থান : রিক্সা যোগে ধর্মপুর গ্রাম অতিক্রম করার সময়
আঘাতের ধরন : কিরিচ, রামদা ও চাইনিজ কুড়াল
শহীদ হওয়ার স্থান : ঘটনাস্থল
যাদের আঘাতে শহীদ : আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী
যে শাখার শহীদ : নোয়াখালী জেলা
শাহাদাতের তারিখ : ২৮শে আগস্ট, ২০০১ইং মঙ্গলবার

শিক্ষাজীবন
শহীদ নিজাম উদ্দিন স্থানীয় জয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সেবারহাট শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। এর পর এইচ.এস.সি তে বাণিজ্য বিভাগেই চৌমুহনী সরকারী এস.এ কলেজে ভর্তি হন। ২০০১ সালে এইচ.এস.সি পরীায় অবতীর্ণ হন। শাহাদাতের সময় তিনি এইচ.এস.সি ফলপ্রার্থী ছিলেন। শাহাদাতের মাত্র ৮ দিন পর তার ফলাফল বের হয়। তিনি ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কুমিলা বিভাগে এ বছর পাসের হার সর্বনিন্ম ১৮.২৭ হলেও নিজাম উদ্দিন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। অনেক ভালো ছাত্রই পাস করতে পারেনি। কিন্তু শহীদ নিজাম যেভাবে আখেরাতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন সেভাবে দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

পিতা

মরহুম আবুল হাশেম

মাতা

রূপধন আরা বেগম

জন্ম তারিখ

ডিসেম্বর ৩১, ১৯৮৫

ভাই বোন

ভাই-৪জন, বোন-৪জন, শহীদ নিজাম ভ

স্থায়ী ঠিকানা

বাড়ী-মুন্সী বাড়ী, গ্রাম- বীর নারায়ণপুর, ৮নং বীজবাগ ইউনিয়ন পোষ্ট: সেবারহাট, থানা: সেনবাগ, জেলা: নোয়াখালী

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

শাহাদাতের সময় তিনি চৌমুহনী সরকারী এস.এ কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ফলপ্রার্থী ছিলেন।

শাহাদাতের স্থান

ধর্মপুর গ্রাম


শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন


শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

ছবি অ্যালবাম: শহীদ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন