শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ

৩০ নভেম্বর -০০০১ - ০৬ এপ্রিল ২০০০ | ১১১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গন সাতকানিয়া সরকারী কলেজে বেশ কিছুদিন থেকে ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ এর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারনে কলেজ এর স্বাভাবিক পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত, সাধারন ছাত্ররা সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায়। পুলিশ প্রশাসন ও কলেজ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সন্ত্রাসীদের মনরক্ষা করে চললেই যেন তাদের চাকুরী বাঁচে এমন অবস্থা। পিতামাতা অভিভাবকরা তাদের কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দায়িত্বশীল সংগঠন হিসাবে কলেজের পরিবেশ শান্ত রাখার ও সাধারন ছাত্রদের শিক্ষাজীবন রক্ষার তাগিদে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখল। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের পরপর মারমুখী আচরনে সাতকানিয়া কলেজে আমাদের সংগঠনের জনশক্তির মধ্যে একধরনের ক্ষোভ, হতাশা ও নেতৃত্বের শুন্যতা বিরাজ করছিল। জেলা সংগঠনের সদস্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল কলেজ পড়ুয়া পার্শ্ব শাখা হতে কলেজের দায়িত্বশীল মনোনয়ন দিতে হবে। জেলা সভাপতি বজল ভাইয়ের উপর দায়িত্ব পড়ল, পূর্ব সাতকানিয়া সাথী শাখার সাথী প্রিয় জাহাঙ্গীর আলম ভাইয়ের সাথে আলোচনা করার জন্য। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ, পূর্ব সাতকানিয়া সাথী শাখার অফিসে জাহাঙ্গীর ভাইকে বুঝানো হল, জাহাঙ্গীর ভাই হয়তো উনার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বজল ভাইকে জানিয়েছেন। জাহাঙ্গীর ভাই আমার সাথে পুনরায় পরামর্শ চাওয়ার জন্য আমার সাথে কথা বলার সময় নিলেন, আমিও বুঝালাম, জাহাঙ্গীর ভাই সহাস্যে রাজি হলেন তার প্রিয় শিক্ষাঙ্গন সাতকানিয়া কলেজ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করবেন। অনেক দিন পর লিখতে গিয়ে হয়তো অনেক বিষয় বাদ পড়ে যাবে তারপর ও শহীদের সাথীদের কাছে অন্তত কথাটা পৌছে দেয়ার জন্য আমার এই দু:সাহস। কলেজ সংগঠনে যোগদানের পর থেকে আলহামদুল্লিল্লাহ কলেজ শাখার কাজ, কমীদের মান, রির্পোট ইত্যাদিতে সংগঠন অল্পসময়ে ভাল ফলাফল পেতে লাগল। কলেজের প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতা কর্মীদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরনে পারস্পরিক সহাবস্থান ও হৃদ্যতাপূর্ন পরিবেশ আপাতদ"ষ্টিতে মনে হল। শিক্ষক, ছাত্র, প্রতিপক্ষ নেতাকর্মী ও সংগঠনের জনশক্তির মাঝে এক ধরনের সেতু বন্ধন হল। ইতিমধ্যে স্মৃতিতে যে বিষটি বারবার উঁকি দেয় তা হলো সাতকানিয়া হাইস্কুল মাঠে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাচ্ছিরে কোরআন আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর পূর্ব নির্ধারিত মাহফিলে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সাতকানিয়া তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিশেষ করে পুলিশ, বিডিআর দাংগা পুলিশের বেষ্টনি ভেংগে কেরানীহাট হতে আমিরাবাদ বটতলী মোটর ষ্টেশন পর্যন্ত জনতার বাধ ভাংগা জোয়ারে শহীদ জাহাঙ্গীর এর বীরদর্প বিচরন এখনো ভুলতে পারিনা। একই বৎসর শহীদ জাহাঙ্গীরের বাড়ীর পার্শবর্তী প্রাইমারি স্কুলের মাঠে সম্পূর্ন প্রতিকুল পরিবেশে ঈদ পূর্নমিলনী করার জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা ও সফল হওয়া মেহমান হিসাবে আমাকে নিতে তার দাবী আমার হৃদয়ে এখনো ঝড় তুলে।

সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা
শহীদ জাহাঙ্গীর ভাই সাতকানিয়া কলেজ সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে সর্বেেত্র এক ধরনের নতুন গতি সঞ্চার হয়। সদালাপী, কর্তব্যনিষ্ট, শিকদের সাথে সু-সম্পর্ক সর্বোপরি সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের অধিক মেশার যোগ্যতা মতাসীনদের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের জন্য কাল হয়ে দাড়াল। সন্ত্রাসীরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কলেজের পরিবেশ অশান্ত করার জন্য অপপ্রয়াস চালাল। জেলা সংগঠন বিষযটি বুঝতে পেরে ৬ই এপ্রিল, ২০০০ ইং ফজর নামাজের পর জেলা কমিটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল জেলা সভাপতি বজল ভাই সাতকানিয়া যাবেন, কলেজ পরিস্থিতি যতদূর পারা যায় শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন, আমাকে লোহাগাড়া যেতে হবে। আমি লোহাগাড়া গিয়ে কাজ শেষ করে আনুমানিক ১টার সময় জেলা অফিসে কাজের অগ্রগতি জানাতে ফোন করলাম তখন জেলা অফিস থেকে জনাব জসিম উদ্দিন আল হাসান ভাই জানালেন সাতকানিয়া কলেজের কলেজ সভাপতি জাহাঙ্গীর ভাইকে শহীদ করা হয়েছে।

৬ই এপ্রিল ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা দলে দলে ক্যাম্পাসে আসতে লাগল। পরিবেশ বুঝতে পেরে জাহাঙ্গীর ভাই সংগঠনের জনশক্তি ও সাধারন ছাত্রদের নিরাপদে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। আর তিনি সাধারন ছাত্রদের দায়িত্বশীল হিসাবে কলেজ অধ্যরে সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য অধ্যরে অফিসে গেলেন।
অধ্য মহোদয় সাথে আলাপরত অবস্থায় স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শহীদ জাহাঙ্গীর ভাইকে টেনে হিচড়ে বের করে নিচতলায় এনে নোটিশ বোর্ড ও লাটিসেটা, লোহার রড দিয়ে আঘাত করতে করতে হাত পা ভেংগেদেন, অর্ধমৃত অবস্থায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মরালাশ টানার এর মত জাহাঙ্গীর ভাইকে চরপাড়ার সাতকানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের খুনের নেশা না মিটা পর্যন্ত গাছ থেকে লাফিয়ে পড়ে তার বুকের উপর পাজর ভেংগে তার মৃতু নিশ্চিত করা হয়। শহীদ জাহাঙ্গীর ভাই আমাদের ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিওন। পুলিশ প্রশাসনের একের পর এক সহযোগিতা চাওয়ার পরও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ছিল ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের কাছে আজ্ঞাবহ। যিনি সাধারন ছাত্র ও নিজ জনশক্তির জীবনের নিরাপত্তার জন্য চেষ্টা করলেন। তবে নিজের জীবনটাই আল্লাহর রাহে কোরবান করে গেলেন। ঐ পরপারে মহান প্রভুর ডাকে। সদা হাস্যজ্বল, আনুগত্যশীল, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আদর্শ্য, সাহসী ত্যাগী, অকুতোভয়, হরেকরকম যোগ্যতার সম্মীলন শহীদ জাহাঙ্গীর এর চরিত্র ফুটে উঠেছিল সাধারন পরিবারের ছেলে হয়ে ও আচার আচরন ছিল অত্যন্ত বিনয়ী, অসাধারণ ও মনোমুগদ্ধকর, যা একজন সাধারন মানুষের জন্য বিরল। শহীদ জাহাঙ্গীর আজ আমাদের মাঝে নেই। আছে তার আদর্শ, হাস্যজ্জ্বল সদালাপী জীবনটা এখনো আমাদের প্রেরণা উৎস হয়ে থাকবে। আল্লামা সাঈদী তাফসীর মাহফিলে আসতে পারেননি, তবে শাহাদতের পরে স্বরণকালের স্বরণীয় ঐতিহাসিক লাধিক জনতার ছাত্রগণ জমায়েতে হাজির হয়ে শহীদের সাথীদের সান্তনা দিয়েছিলেন।

একনজরে শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ
শহীদ- জাহাঙ্গীর আলম সবুজ
পিতা : সিরাজুল ইসলাম
মাতা : আয়েশা খাতুন
ঠিকানা : আফজল নগর, (ছাদাহা) ফকির হাট, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম
ভাই বোনদের সংখ্যা : ৪ ভাই ৩ বোন
শহীদ অবস্থান: ৪র্থ
একাডেমিক যোগ্যতা : বিএ ১ম বর্ষ
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : সাতকানিয়া সরকারি কলেজ
সাংগঠনিক মান : সাথী, কলেজ সভাপতি
যাদের আঘাতে শহীদ : ছাত্রলীগ
আহত হওয়ার তারিখ :৬ এপ্রিল ২০০০ সাল, কলেজ ক্যাম্পাস ও সাতকানিয়া আলিয়া মাদরাসা
কবর যেখানে : হাসমতের দোকান জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান আফজল নগর ছাদাহা
যে শাখার শহীদ : চট্টগ্রাম উত্তর দক্ষিণ
শহীদের শখ : পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে চলা, দওয়াতী কাজ করা।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ

পিতা

সিরাজুল ইসলাম

মাতা

আয়েশা খাতুন

জন্ম তারিখ

নভেম্বর ৩০, -০০০১

ভাই বোন

৪ ভাই ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

আফজল নগর, (ছাদাহা) ফকির হাট, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম

সাংগঠনিক মান

সাথী

সর্বশেষ পড়ালেখা

বিএ ১ম বর্ষ , সাতকানিয়া সরকারি কলেজ

শাহাদাতের স্থান

সাতকানিয়া আলিয়া মাদরাসা


শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ


শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ

ছবি অ্যালবাম: শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সবুজ