শহীদ আবুল কাশেম পাঠান

০১ আগস্ট ১৯৬৯ - ২৩ অক্টোবর ১৯৯৪ | ৭০

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

“ভয় কি বন্ধু, এ আঁধার কেটে যাবে
মুক্তির বাতাস সকলেই পাবে
উড়বে, উড়বেই বিজয়ের পাল,
এ আঁধার থাকবে না চিরকাল ॥”
-মোশাররফ হোসেন খান

শহীদ আবুল কাশেম পাঠান। একটি ইতিহাস, একটি নক্ষত্র, একটি গতিধারা, যুগে যুগে মুক্তিকামী মানুষের ঊজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খুলনার আগা খান প্রাইমারি স্কুল থেকে যার যাত্রা। খুলনা মডেল স্কুলের ক্ষুদ্র পরিসর পেরিয়ে বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সবুজ জমিন মাড়িয়ে তিনি চলে গেছেন জান্নাতুল ফেরদাউসের সুবাসিত বাগানে। জয়ী হলেন তিনি। আর হেরে গেছে জাতীয়তাবাদী শক্তির মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।

জীবন প্রভাত বেলা
শহীদ আবুল কাশেম পাঠান ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসের এক সুন্দর সকালে কুমিল্লা জেলার শাহারাস্তি থানার ছায়াঘেরা মায়াভরা সবুজ শ্যামলিমায় ভরপুর শহরের কোলাহল থেকে দূরে বহুদূরে কেশরাঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের কয়েকদিন পর অবশ্য তাঁর বাবা-মা তাঁকে নিয়ে আসেন তাঁদের স্থায়ী নিবাস লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। জন্মের বছর খানেক পরে কাশেমকে নিয়ে তার আব্বা-আম্মা চলে আসেন বর্তমান নিবাস খুলনা মহানগরীর বসুপাড়া এতিমখানা মোড়ের পাঠান বাড়িতে। শহীদের বাবা মরহুম সৈয়দ আলী পাঠান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। আর মাতা রাশিদা বেগম ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ আদর্শ গৃহীনি।

পড়াশোনা
বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও অধ্যবসায়ী আবুল কাশেম পাঠান শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। মেধার স্বাক্ষর হিসেবে তাকে ৪র্থ শ্রেণী থেকে ডবল প্রমোশন দিয়ে খুলনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। ১৯৮৭ সালে তিনি মডেল স্কুল থেকে ২ বিষয়ে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। আইকম এ ভর্তি হন খুলনা বিএল কলেজে। এর পর ১৯৮৯ সালে কৃতিত্বের সাথে আইকম পাস করে ব্যবস্থাপনা (সম্মান) ২য় বর্ষে ভর্তি হন একই কলেজে।

নেতৃত্বের গুণাবলি
নেতৃত্বের মোহনীয় গুণাবলি সম্পন্ন আবুল কাশেম পাঠানকে ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ছেলেরা ভালবাসতো। ৭ম শ্রেণীতে থাকাকালে গরিব দুঃখী অসহায়দের সহযোগিতার জন্য পাড়ার ছেলেদের নিয়ে গঠন করেন ‘মুক্ত বাংলা সবুজ সংঘ’। ফুটবল, হকি, ক্রিকেটের প্রতি ছিল তার দুর্নিবার আকর্ষণ। পাড়ার সকল টুর্নামেন্টের নেতৃত্ব দিতেন তিনি।

ভাবনার সাগরে
আমরণ মানবতার জয়গানে মুখর এ মহান শহীদ কিশোর বয়সে শুধু লেখাপড়া আর খেলার ব্যাপারেই মনোযোগ দিলেন না, পড়ার টেবিলে আর খেলার মাঠের অবসর সময়ে তিনি অনেক সময় কাটিয়ে দিতেন দেশ ও মানবতার কল্যাণের ধ্যানে। কিসে মানুষের মুক্তি, কেন মানুষকে সৃষ্টি করা হলো, কী তার দায়িত্ব, অনাথ দরিদ্র অসহায়দের পাশে কেন বিত্তশালীরা এগিয়ে যায় না, কেন দেশ স্বাধীন হলো, কেন রক্ত ঝরলো, কী উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এ দেশের দামাল ছেলেরা? এরকম হাজারো প্রশ্ন প্রতিনিয়ত তার মনে দোলা দিয়ে যেত। ছোটবেলা থেকেই অন্যকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে পেয়ে বসেছিল।

শহীদি কাফেলার দাওয়াত
সম্ভবত তখন তিনি সবেমাত্র ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। এরই মধ্যে পরিচয় হয় এলাকার বড় ভাই মোশারফ হোসেন এর সাথে। তিনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী। কাশেম ভাই যখন নানাবিধ প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতেন মোশারফ ভাইকে তখন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন সত্যের প্রতি ঐকান্তিক আগ্রহের মহীরুহ। যতদূর জানা যায় এই মোশারফ ভাইয়ের অনুপ্রেরণাই তিনি ছাত্রশিবিরের সমর্থক ফরম পূরণ করেন।

সংগ্রামমুখর জীবন
১৯৮৭ সালে এসএসসি পাস করে শহীদ কাশেম পাঠান ভাই ভর্তি হন খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদীর বিভিন্ন বই পড়ার মাধ্যমে তার মনে ইসলামের বিপ্লবী চেতনা উজ্জীবিত হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে তিনি নিজেকে পরিপূর্ণরুপে সঁপে দিলেন ছাত্রশিবিরের বৈজ্ঞানিক কর্মসূচির মাঝে। বিএল কলেজের কর্মমুখর ময়দানে তিনি মিশে গেলেন শিার্থীদের মাঝে একান্ত আপন হয়ে। কলেজের করিডোরে, ক্যান্টিনে, কমনরুমে, সবুজ ময়দানে দু’বাহু প্রসারিত করে তখন শিক্ষার্থীদের যিনি নেতৃত্ব দিতেন তিনি শহীদ আবুল কাশেম পাঠান। অনার্স ১ম বর্ষে থাকাকালে শুরু হল তার পরিপক্ব রাজনৈতিক জীবন। ১৯৯১-৯২, ৯২-৯৩ ছাত্র সংসদে তিনি সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেন এজিএস পদে। প্রথমে তিনি কলেজ শাখা শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরবর্তী বছর কলেজ শাখা সভাপতি এবং খুলনা মহানগরী শাখার পরামর্শ সভার সদস্য নির্বাচিত হন। শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

মানবতার কল্যাণে
শুধু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই এ মহান শহীদ তাঁর কর্মমুখর জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। সামাজিক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া সংগঠন, গরিব-দুঃখীদের সহযোগিতা করা প্রভৃতি ছিল তাঁর রুটিন মাফিক কাজ। ১৯৯২ সালে তিনি ‘খুলনা অগ্রগামী সংসদ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। পাড়ার অসহায় দরিদ্র বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও ভুখা-নাঙ্গা মানুষদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে যুবক ছেলেদের সংগঠিত করে গঠন করেন ‘বৃহত্তর মেঘনা যুব কল্যাণ সমিতি’। তার একান্ত প্রচেষ্টায় খুলনার ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আমিনুল ইসলাম বিমানের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদ বিমান স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘাদানিকের প্রতিরোধ করতে খুলনায় যুবকদের সংগঠিত করে ‘জাতীয় যুব কমান্ড’ গঠন করেন। কাশেম পাঠান তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় বিএল কলেজে প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বসু পাড়া আল হেরা ইসলামী পাঠাগার’ ও বিএল কলেজের তিতুমীর হলে তারই প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শহীদ তিতুমীর পাঠাগার’।

সাহিত্যানুরাগ
মস্তিষ্ক ভরা চিন্তা, বিপুল সম্ভাবনা, অন্যদের জানার দুর্নিবার আকর্ষণ ও বহুরূপী প্রতিভার অধিকারী আবুল কাশেম পাঠান ছিলেন ভীষণ বইপ্রেমী। বই কিনতে ও বই পড়তে ভালবাসতেন তিনি। তার বাড়িতে রয়েছে দুর্লভ বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ। পত্রপত্রিকাতেও লেখালেখির অভ্যাস ছিল তার। দৈনিক জনবার্তা ও দৈনিক প্রবাহতে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।

চিরমুক্তির পথে
১৯৯৪ সালের ২৩ অক্টোবর ফজরের নামায় পড়ে কুরআন, হাদিস, ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নের পর প্রতিদিনের মত প্রিয় ভাইদের সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হলেন আবুল কাশেম পাঠান। কিছু সময় পরে ফিরে এসে শহীদ তিতুমীর হলের (৩৭ নং) নিজরুমে নাস্তা ও গোসল সেরে পুনরায় তার সাথীদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন; বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার কাজে। পূর্বের দিন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। ছাত্র সংসদের নেতা হিসেবে তাঁর কাধে ছিল অনেক দায়িত্ব। সকল কাজ শেষে তিনি কলেজের দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ করে একজন দায়িত্বশীলকে কলেজে রেখে গেলেন খুলনা সিটি কলেজে নবাগতদের শুভেচ্ছা জানাতে। সকল দলের মিছিল চলছে। বিনা কারণে শিবিরের মিছিল কলেজে ঢুকতে বাধা দিল ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। শুরু হলো আমাদের ভাইদের উপর মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ। পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা খুলনার গডফাদার তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীর ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা কাশেম পাঠানকে তাক করে গুলি করে। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়লেন আমাদের প্রিয় ভাই। সকলকে কাঁদিয়ে নিজে হাসতে হাসতে চলে গেলেন জান্নাতের পথে। সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবসান হয়ে যায় একটি কর্মমুখর জীবনের।

উপস্থাপনা
মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি টেনে দেয়। কিন্তু অন্য এক ধরনের মৃত্যু আছে যে মৃত্যুতে শৈশব কৈশোর, জীবন যৌবন কিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটেনা। মানুষ বেঁচে থাকে অনন্ত কাল ধরে তার ভক্ত অনুরক্ত অনুসারীদের মাঝে। সে গৌরবোজ্বল মৃত্যু হচ্ছে শাহাদাত। শাহাদাতবরণকারী শহীদদেরা অফুরন্ত যৌবন আর পুরস্কার নিয়ে বিচরণ করে পাখি হয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুবাসিত বাগানে। মহান আল্লাহতায়ালা তার বিনায়াবনত গোলাম আবুল কাশেষ পাঠনকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছেন। জয়ী হয়েছে কাশেম পাঠান ভাই আর হেরে গেছে ইসলাম বিরোধী জাতীয়তাবাদী শক্তি মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।

শহীদ আবুল কাশেম পাঠান একটি ইতিহাস, একটি গতিধারা। খুলনার আগা খান প্রাইমারি স্কুল থেকে যার যাত্রা, খুলনা মডেল স্কুলে ক্ষুদ্র পরিসর পেরিয়ে বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সবুজ জমিন মাড়িয়ে তিনি চলে গেছেন মঞ্জিলে মকসুদের পানে। ক্ষুদ্র্র পরিসরে এ মহান শহীদের ২৫ বছরে বর্ণাঢ্য জীবন আলেখ্য লিখতে বসে হারিয়ে যেতে হয় স্মৃতির অতল গহ্বরে।

শিক্ষাজীবন
বড় বোনের কাছে তার লেখা পড়ার হাতেখড়ি। ৫ বছর বয়সে চাচাতো বড় ভাই সিদ্দিক উল্লাহ পাঠানের হাত ধরে যান আগা খাঁন প্রাইমারি স্কুলে। কচি বয়সে থেকে অত্যন্ত মেধাবী ও অধ্যাবসায়ী আবুল কাশেম পাঠান শিক্ষাকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ছোট বেলা থেকেই অন্যকে জানার তীব্র আকাড়খা তাকে পেয়ে বসেছিল। মেধার স্বাক্ষর হিসেবে তাকে ৪র্থ শ্রেণী দেখে ডাবল প্রমোশন দিয়ে খুলনা মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। পড়া লেখায় প্রতি তার ছিল প্রবল আকর্ষণ। কেন লেখাপড়া করছে না একথা অভিভাবদের কখনো বলতে হয়নি তাকে। অত্যন্ত পর্দানশীল পরিবারের কাশেম পাঠান ৬/৭ বছর থেকে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেন। ভীষণ জেদী (হয় করব না হয় মরব) প্রকৃতির ছিলেন ছোট বেলা থেকেই। নেতৃত্বের মোহনায় গুণাবলী সম্পন্ন কাশেম পাঠানকে ছেলে বেলা থেকেই পাড়ার ছেলেরা খুবই ভালোবাসতো।

স্বাধীনতার ১৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে তিনি সবেমাত্র ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। তিনি দেখলেন যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা এসেছি......তা সফল হয়নি, মানুষের মুক্তি আসেনি। তিনি খুঁজে পেলেন আলোর দিশা, ইসলামেই মানবতার মুক্তি। ইসলামই মানুষকে সত্যিকার স্বাধীনতা দিয়েছে। ১৯৮৭ সালে মডেল স্কুল থেকে দুই বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। মস্তিষ্ক ভরা চিন্তা বিপুল সম্ভাবনা অন্যকে জানার দুর্নিবার আকর্ষণ আর নিজেকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তার বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে সহায়তা করেছিলেন।

যেভাবে জান্নাতের পথে
১৯৯৪ সালের ২৩ শে অক্টোবর বাজারে নামাজ পড়ে নিয়মিত কুরআন, হাদীস ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নের পর প্রতিদিনের মত সাথীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের বের হলেন হাঁটতে। কিছু সময় পরে ফিরে এলে পুনরায় শহীদ তিতুমীর হলে ৩৭ নং রুমে সাথে তার সাথীরাও নাস্তা ও গোসল সেরে পুনরায় তার সাথীদের নিয়ে আকবার বের হলেন আল্লাহর শ্রেষ্ঠ গোলম শহীদ আবু কাশেম পাঠান ভাই। উদ্দেশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনৈক শিক্ষক আসছেন বিএল কলেজে, উনাকে স্বাগত জানাবেন। অতঃপর মেহমানের সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে চলে গেলেন কলেজের বিভিন্ন বিভাগে পূর্বের দিন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল ছাত্র সংসদের নেতা হিসেবে তার কাঁধে ছিল বহু দায়িত্ব। সকল কাজ শেষে তিনি কলেজ দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ করে একজন দায়িত্বশীলকে কলেজে রেখে, কয়েক জনকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন খুলনা সিটি কলেজে, নবাগতদের শুভেচ্ছা জানাতে।

সকল দলের মিছিল চলছে, শিবিরের মিছিল কলেজে ঢুকতে বাধা দিল ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। শুরু হলো শিবিরে মিছিলে মহুর্মুহু বোমা ও গুলির অতর্কিত হামলা । পূর্ব থেকে ঘাপটিমেরে থাকা খুলনার অভিশাপ স্পিকার রাজ্জাক আলীর পোষ্যরা কাশেম ভাইকে তাক করে গুলি করলো। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। সকলকে কাঁদিয়ে নিজে হাসতে হাসতে চলে গেলেন জান্নাতের পথে। সকলের ধরা ছোঁয়ার বাইরে একটি কর্মমুখর জীবনের হলো অবসান।

সাহিত্যে ও সাংবাদিকতায় একে পাঠান
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আবুল কাশেম পাঠান বই কিনতে এবং পড়তে ভীষণভাবে ভালোবাসতেন। তার প্রমাণ তার বাড়িতে রয়েছে দুূর্লভ বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ। কোন ভালো বই দেখলেই টাকা পয়সার কথা না ভেবেই কিনে নিতেন। পত্র পত্রিকাতে তার লেখালেখির অভ্যাস ছিল। দৈনিক জনবার্তা ও দৈনিক প্রবাহতে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।

একনজরে আবুল কাশেম পাঠান
নাম : আবুল কাশেম পাঠান
পিতা : সৈয়দ আলী পাঠান
সাংগঠনিক মান : সদস্য
দায়িত্ব : সভাপতি, বিএল কলেজ, খুলনা
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিএল কলেজ
শিক্ষায় বিশেষ কৃতিত্ব : এসএসসি পরীায় ২ বিষয়ে লেটারসহ ১ম বিভাগ
অন্যান্য কৃতিত্ব : ১৯৯১-৯২, ৯২-৯৩ সেশনে (শাহাদাত কালীন) বি এল কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস
আহত হওয়ার স্থান : খুলনা সিটি কলেজের সামনের রাস্তায়
শহীদ হওয়ার স্থান : খুলনা সিটি কলেজের সামনের রাস্তায়
আঘাতের ধরন : গুলি
যাদের আঘাতে নিহত : ছাত্রদল
শহীদ হওয়ার তারিখ : ২৩.১০.১৯৯৪ ইং
যে শাখার শহীদ : খুলনা মহানগরী
ভাই-বোন : ৫ ভাই ৩ বোন
ভাইদের মাঝে অবস্থান : ৫ম
পিতা : মৃত
মাতা : জীবিত
কততম শহীদ : ৭০।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ আবুল কাশেম পাঠান

পিতা

সৈয়দ আলী পাঠান

মাতা

রাশিদা বেগম

জন্ম তারিখ

আগস্ট ১, ১৯৬৯

ভাই বোন

৫ ভাই ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

পাঠান বাড়ি, বসু পাড়া, খুলনা

সাংগঠনিক মান

সদস্য

সর্বশেষ পড়ালেখা

অনার্স, খুলনা বি এল কলেজ

শাহাদাতের স্থান

খুলনা সিটি কলেজের সামনে রাস্তায়