শহীদ কামরুল ইসলাম

৩১ অক্টোবর ১৯৭৫ - ১৬ আগস্ট ১৯৯৪ | ৬৯

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

শাহাদাতের ঘটনা

মজলুমের আহাজারি এখনও থামেনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ক্যাম্পাসে কান পাতলে আজও আল্লাহর মজলুম গোলামদের গোঙানির আওয়াজ শোনা যায়। ইসলামের বিরোধিতা তথা ইসলামী সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণভাবে শিকড় উপড়ে ফেলার প্রচেষ্টা আজ অবধি বিদ্যমান। আল্লাহর গোলামদের এখনো মুক্ত পরিবেশে ইসলামের কথাগুলো বলার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। সুদীপ্ত কণ্ঠে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেবার সুযোগ না হলেও এ ময়দানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস ত্যাগ কুরবানির দৃষ্টান্ত সমুজ্জ্বল। এই বিশ্ববিদ্যায়ের শুধুমাত্র নামাজ পড়ার অপরাধে মেরে ফেলা হয়েছে শিবির কর্মী শহীদ কামরুল ভাইকে। শহীদ কামরুল ভাই এখন আমাদের প্রেরণার মিনার।

প্রাথমিক পরিচিতি
১৯৭৬ সালের বি’বাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার কাফরপুর গ্রামে বাংলাদেশ রাইফেলসের সুববেদার মেজর (অব:) জনাব আবু তাহেরের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে কামরুল ইসলাম আয়েশা খাতুন অসীম স্নেহ ভালবাসায় আর বোনদের মমতায় কামরুল ইসলাম ভাই বড় হতে থাকেন। শহীদ কামরুল তার পিতার ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে ৩য় এবং ভাইদের মধ্যে বড়। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী হিসেবে তিনি এলাকায় স্নেহের পাত্র ছিলেন। দুই কন্যা সন্তানের পর শহীদ কামরুলের জন্ম হাওয়ায় পরিবারের সবাই ছিলেন আনন্দে উদ্বেলিত ও উদ্ভাসিত। শৈশব থেকেই কামরুল ইসলাম ছিলেন নামাজী, পরহেজগার। তিনি ক্লাসের সেরা ছাত্র হিসেবে দুর্বল ছাত্রদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতেন। তিতাসের কোলে বেড়ে উঠা কামরুল ছিলেন আর দশটি সাধারণ কিশোরের চেয়ে ব্যক্তিক্রম মসজিদে আযান তাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো খোদার ঘরে নিয়ে যেতো। জীবনের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত তার জীবনের এই মিশন সচল ছিল।

শিক্ষাজীবন
তিনি জাফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেণ-ফতেহপুর কেজি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় হতে ১৯৯১ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৯৩ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১ম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাস করার পর তিনি ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং পদার্থবিজ্ঞান ও ফার্মেসি বিভাগে মেধা তালিকায় চান্স পান মূলত পরিবারে পরামর্শেই তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকার নিকটবর্তী জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হতে আসেন।

কামরুল ইসলাম মৌখিক পরীক্ষার অংশগ্রহণের জন্যে আর একজন নিকটত্মীয়ের নিকট মাওলানা ভাসানী হলে ১৪৫ কক্ষে উঠেন। কিন্তু উতবা শায়বার উত্তর সূরি শহীদ কামরুল ভাইকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার সুযোগ দেয়নি।

সাংগঠনিক জীবন
তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সংগঠনের দাওয়াত কলেজে পেয়েছিলেন এবং তা গ্রহণ করে সক্রিয়ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।

শাহাদাতের ঘটনা
১৬ আগস্ট '৯৪। শিবির কর্মী কামরুল পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এর জন্যে তার একজন নিকটত্মীয়য়ের নিকট মওলানা ভাসানী হলে ১৪৫ নং কক্ষে ওঠেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, অমায়িক শান্ত ভদ্র শহীদ কামরুল যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাসে পদার্পণ করেন। তখনো তিনি জানেন না এই ক্যাম্পাস হলগুলো গোলামদের জন্যে এক ভায়াল হিংস্র জনপদ। নামাজ রোজা সালাম প্রভৃতি ইসলামী সংস্কৃতির লালন এখানে নিষিদ্ধ। শৈশব নামাজী কামরুল ১৬ আগস্ট যখন মাগরিবের নামাজ হলের মসজিদে পড়েন তখনি ইবলিসের প্রেতাত্মার, ফেরাউন নমরুদ আবু জাহেলের সার্থক উত্তরসূরি ছাত্রদলের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নজরে পড়েন।

এক্ষেত্রে তাদের সহায়তা করে অন্ধকারে জীবন পতিত সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের কাপুরুষ সন্ত্রসীরা রাত ৭ টার দিকে প্রিয় ভাই কামরুলকে ১৪৫ নং কক্ষ থেকে ছাত্রদলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী দীপুর ৩৩২নং কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রদলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মাজহার ও দীপুর নেতৃত্বে রাতভর নির্যাতন চালায়। কামরুল ইসলামকে শিবির কর্মী সন্দেহে কিল ঘুষ ও লাথি দিয়ে মেঝেতে ফেলে দোয়া হয়। পরে তার পকেটে শিবিরের ডায়েরি দেখে নিশ্চিত হয়ে নির্মম নির্যাতনে জর্জরিত করে।

সন্ত্রাসীরা অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় লাঠি বড় পেপসির বোতল ও অন্যান্য ধারাল অস্ত্রে উপর্যুপরি আঘাতে তার মাথা ও শরীরে ক্ষত বিক্ষত করে। তার আর্ত চিৎকারের চারদিক প্রকম্পিত হলো সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। কামরুল ইসলামের আর্ত চিৎকার যেন বাইরে থেকে না শুনা যায়, এজন্য তার মুখে কাপড় গুঁজে দেয় খুনি হায়েনার দল। ওরা সারা রাত ধরে পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে কামরুলে হাত ও চোয়ার ভেঙে দেয়।

পিপাসায় কাতর হয়ে আল্লাহ গো বাঁচাও, পানি পানি বলে চিৎকার করলেও ওরা তাকে সারারাত একফোঁটা পানিও খেতে দেয়নি বরং প্রশ্রাব খেতে দেয়। তারপর তাকে নির্যাতন করা হয়নি এই বলে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।

সারারাত নির্যাতনের পর ১৭ই আগস্ট ১৯৯৪ সকালে মওলানা ভাসানী হলে দুজন শফিক ও বাবুলকে দিয়ে মুমূর্য কামরুলকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার অবস্থা মারাত্মক দেখে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে না দেয়ায় বেবিটেক্সিযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর সাভার লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নিকট যাওয়ার পরপর কামরুল ইসলাম মহান আল্লাহর দরবারে সাড়া দিয়ে জান্নাতের পথে পাড়ি জমান। (ইন্নালিল্লাহে ..... রাজিউন)
অবস্থা বেগতিক দেখে তারা ঢাকার দিকে না গিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নওয়াব ফুয়জুন্নেসা হলের পূর্বে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে তার লাশ ফেলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। পরে সাভার থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসলে ঢাকা মহানগরী সাথীর লাশ গ্রহণ করে।

শহীদ কামরুলের অপরাধ
কী ছিল শিবির কর্মী কামরুলে অপরাধ? কেন আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে হত্যা কর হলো কামরুলকে? সে তো তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব অর্জন করেনি। কারো স্বার্থে আঘাত হানেনি। তবে কেন তাকে জীবন দিতে হলো? আসলে এ ছাড়া কামরুলে আর কোন অপরাধ ছিল না যে, সে নিয়মিত নামাজ পড়তো। ইসলামকে নিজের জীবনে ও সমাজে বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতো। মহান আল্লাহর ভাষায় কামরুলের অপরাধ হলো তাদের এছাড়া আর কোন অপরাধ ছিল নাযে, তারা পরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। সত্যিই মহান আল্লাহর এই বাণী অত্যন্ত বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল কামরুলের জীবনে। ১৬ই আগস্ট মাগরিবের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করেই কামরুলকে জীবন দিতে হলো।

জানাযা ও দাফন
শহীদ কামরুলের নামাজে জানাযা ১৭ আগস্ট বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তৎকালীন সহসভাপতি শেখ কামরুল আলম। ঢাকায় জানাযা শেষে তার লাশ বি বাড়িয়ার নবীনগরে জাফরপুর গ্রামে নামাজে জানাযা শেষে কবরস্থ করা হয়। সেদিন মায়ের আর্তনাদ, বোনের আহাজারিকে উপেক্ষা করে কামরুল চলে গিয়েছেন মহান প্রভুর কাছে কিন্তু আমাদের উপর দিয়ে গেছেন এক মহান জিম্মাদারি। শহীদ কামরুলের রক্ত রঞ্জিত জাবি ক্যাম্পাসে মুক্তির সূর্যটা আজো ওঠেনি।

নিকটত্মীয় ও শিক্ষকের বক্তব্য
শহীদ কামরুল ইসলাম ছিলেন একটি ফুটন্ত গোলাপ । যে গোলাপটি সুবাস ছড়াবার আগেই মহান আল্লাহর কবুল করে নিয়েছেন। শহীদ কামরুল ভাইয়ের মেজো দুলাভাই বলেন, কামরুল ছিল এই পরিবারে সবচেয়ে চরিত্রবান ও সুন্দর ছেলে। তাকে আমি কোনদিন কারো সংগে ঝগড়া করতে বা কটু কথা বলতে শুনিনি। কামরুল সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতো। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে যারা লেখাপড়ায় দুর্বল ছিল তিনি তাদের ডেকে বাসায় এনে পড়াশোনা করাতেন। শহীদ কামরুলের শিক্ষক সাহ আলম বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তার প্রিয় ছাত্রের কথা বলতে গিয়ে বলেন, কামরুল সব চেয়ে মেধাবী ছাত্র ছিলো, ক্লাসে সে সবার চেয়ে ভাল বুঝতো। কোন সময় আমরা ভুল উত্তর দিলে সে সংশোধন দিতো। সে ক্লাসের দুর্বল ছাত্রদের নানা সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করতে।

শহীদ হযরত খাব্বাব, বেলাল, সুমাইয়া (রা.) এর উত্তরসূরি শহীদ কামরুলের রক্তে রঞ্ছিত এই ক্যাম্পাসে আজো আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার প্রকাশ্যে উচ্চারিত হয় না। তবুও শহীদ কামরুলের উত্তরসূরীরা বসে নেই। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন শহীদ কামরুলের সাথীদের নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর সবুজ জমিন। আর চিরতরে বিদায় নিবে খুন ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, আর মুক্তি পাবে তাদের শ্লীলতাহানি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার বোন সেখানে বিরাজ করবে সেই রাসূল (সা.) সোনালি যুগে শহীদের রক্ত ও অনেক মজলুমের আহাজারির মাধ্যমে মুক্তির সোনালি সূর্য আঁধার ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আলোকিত করবেই, ইনশাআল্লাহ।

একনজরে মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম
নাম : মু. কামরুল ইসলাম
পিতার নাম : মেজর (অব:) জনাব আবু তাহের
মাতার নাম : আয়েশা খাতুন
জন্মতারিখ : ১৯৭৫ সাল
সাংগঠনিক মান : কর্মী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : জাফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৫ ম শ্রেণী পর্যন্ত। ফতেহপুর কেজি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়। তারপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কৃতিত্বে সাথে এইচ এসসি পরীক্ষা উর্ত্তীণ হয়।
সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হন তবে পারিবারিক সিদ্ধান্তে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে মৌলিখ পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন।
আহত হওয়ার স্থান : ৩২২ নং কক্ষ, মওলানা ভাসানী হল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সভার ঢাকা।
স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম : জাফরপুর পো: ইব্রাহিমপুর থানা : নবীনগর জেলা বি’বড়ীয়া

শহীদ হওয়ার স্থান ও তারিখ : এ ১৬ আগস্ট ৯৪ আঘাতের ধরন লাঠি, রড কিরিচ, পেপসির বোতল, মুখে কাপড় গুঁজে দেয়া।
যাদের আঘাতের নিহত : ছাত্রদল
যে শাখার শহীদ : বি-বাড়ীয়া
ভাই বোন : ৩ ভাই ৩ বোন। পরিবারের শহীদ কামরুলের অবস্থান ৩য়।
বিশেষ কৃতিত্ব : ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে ট্যালেনটপুলে বৃত্তি লাভ।

মায়ের মন্তব্য
আমার ছেলে খুব ভাল নম্র ভদ্র ছিল। আল্লাহ আমার ছেলেকে ভালভাবে উঠিয়ে নিলেন।

এক নজরে

পুরোনাম

শহীদ কামরুল ইসলাম

পিতা

মেজর (অবঃ) আবু তাহের

মাতা

আয়েশা খাতুন

জন্ম তারিখ

অক্টোবর ৩১, ১৯৭৫

ভাই বোন

৩ ভাই, ৩ বোন

স্থায়ী ঠিকানা

জাফরপুর, ইব্রাহীমপুর, নবীনগর, বি-বাড়িয়া

সাংগঠনিক মান

কর্মী

সর্বশেষ পড়ালেখা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শাহাদাতের স্থান

৩২২ নং কক্ষ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়