রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩

ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

আল্লাহর ওপর নির্ভরতাই বিজয়ের মূল শর্ত—মাওলানা এটিএম মাসুম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, "বদর আমাদের শিক্ষা দেয় টিকে থাকার একমাত্র পথ লড়াই-সংগ্রাম। আর আল্লাহর ওপর নির্ভরতাই সংগ্রামে বিজয়ের মূল শর্ত।"


আজ (৯ এপ্রিল) রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করীম ও সালাহউদ্দিন আইউবী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম বলেন, "সার্বিকভাবে অধঃপতিত একটি জাতিকে আলোকিত করেছিলেন রাসূল সা.। যারা পরে শ্রেষ্ঠ মানবে পরিণত হয়েছিল। এমনকি তাদেরকে গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে। আর তা সম্ভব হয়েছিল রাষ্ট্র, সমাজসহ সর্বত্র কুরআনকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে। কিন্তু এ কাজ মোটেই সহজ ছিল না।


সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের ময়দান বদর প্রান্তর। এ যুদ্ধে সংখ্যা বা শক্তি দিয়ে নয়; বরং আল্লাহ তায়ালার সরাসরি সাহায্যে বিজয় পেয়েছিল মুসলমানরা। এ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে মহান আল্লাহ মুসলমানদের নৈতিক মান, ঈমানি দৃঢ়তা, বীরত্ব ও সাহসিকতা তুলে ধরেছেন।
বদর আমাদের শিক্ষা দেয় টিকে থাকার একমাত্র পথ লড়াই-সংগ্রাম। অধিকার কেউ দিয়ে যায় না; বরং আদায় করে নিতে হয়। দ্বীন বিজয় করতে হলে আন্দোলন-সংগ্রামের ঝুঁকি নিতে হবে। কঠিন পরীক্ষা মোকাবিলা করে নিজেকে নিখাদ প্রমাণ করতে হবে। বাতিলের সাথে লড়াই করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একই সাথে সব বিজয় কেবল আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও দয়ার ওপর নির্ভর করে তাও প্রমাণ হয়েছে বদরের প্রান্তরে। বদর যুদ্ধে নজিরবিহীন আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও শাহাদাতের তামান্না মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালা অনুকরণীয় করে দিয়েছেন।


আমরা সেই মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে তাঁর বিধান কায়েমের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং গুম, খুন, জেল, জুলুমকে উপেক্ষা করে নির্ভয়ে আমাদের লক্ষ্যপাণে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে বদরের সেই রহমত দ্বারা আমরাও সিক্ত হবো, ইনশাআল্লাহ। বদরের শিক্ষা যদি গ্রহণ করা যায়, তাহলে শুধু মুসলমান নয়; বরং গোটা বিশ্ববাসী কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করতে পারবে।"


সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম বলেন, "বদর আমাদের দেখিয়েছে, যতই দুর্বল হোক না কেন, মুসলমানরা যদি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে অবিচল থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ বিজয় দেবেন। আজ যারা ইসলামের বিজয়ের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তারা যদি বদরের চেতনাকে ধারণ করতে পারেন, বদরের গুণাগুণ অর্জন করতে পারেন, তাহলে আজকেও সকল সুপার পাওয়ারের ওপর মহান আল্লাহ আপনাদের বিজয় দেবেন। পবিত্র মাহে রমজানে মহান অাল্লাহ যে পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন, সেই কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য গাইড লাইন। কুরআনই বিজয়ের আদর্শ। আমরা যদি কুরআনের সাথে নিজেদের মিলিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমরাও নিজেকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।"


সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বলেন, "বদর আমাদের শিখিয়েছে ঈমানের বলে বলীয়ান থাকলে মহান আল্লাহ নিজেই বিজয় নিশ্চিত করবেন। বদর মানেই মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। এ ঈমানি দৃঢ়তা যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনুপ্রেরণা। মুসলমানদের প্রতিটি বিজয় ও সাহসিকতার উৎস বদরের প্রান্তর। বদরের চেতনা, শাহাদাতের তামান্না আমাদের ধারণ করতে হবে।"


সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান বলেন, "বদর আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইসলামকে যারা বিজয়ী করতে চায়, তাদের কী কী গুণাবলি অর্জন করতে হবে। আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির শর্তগুলোও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সামনে তুলে ধরেছে বদর প্রান্তর। ইসলামের ইতিহাসে বদর প্রথম সংগ্রাম।


বদর প্রান্তরে সাহাবা (রা.) ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য অনুকরণীয়। বদরের যুদ্ধ এ বার্তা দিয়েছে যে, কোনো দল বা ব্যক্তির প্রচেষ্টায় বিজয় আসে না; বরং বিজয় আসে আল্লাহ তায়ালার সাহায্যের মাধ্যমে। লড়াই-সংগ্রামে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা রাসূল সা. আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, যেন বাতিলের সাথে অনিবার্য সংগ্রামে মহান আল্লাহ আমাদের বদরের প্রান্তরের মতো সাহায্য করেন