বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের উপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত ধারাবাহিক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ছাত্রদলের উপর সংঘটিত নৃশংস ও বর্বরোচিত ধারাবাহিক হামলা এবং পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি শিবলি ওমর ও সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ তাসনিম বলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ছাত্রলীগের এমন সশস্ত্র নগ্ন হামলা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করারই নামান্তর। উল্লেখ্য, আজসহ বিগত দুই দিনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় হাইকোর্ট চত্ত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচশত সশস্ত্র নেতাকর্মী। এসময় হামলাকারীরা লাঠি, রড, হকিস্টিক ও চাপাতির মত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে আসা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুই নেতাকর্মীকে হলের পেছনে ড্রেইনে ফেলে মারধর করে বর্বর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। হামলার এক পর্যায়ে একজন ছাত্রদল নেত্রীকে একা পেয়ে হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে তাকে নির্মম নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। আজকের আক্রমণে হামলাকারী একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি করার দৃশ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এমনকি ছাত্রলীগের পাশবিক হামলায় পেশাগত দায়িত্বে নিয়োজিত সাংবাদিকও রেহাই পায়নি আজ। রেহাই পায়নি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনও। সুপ্রিম কোর্টে ঢুকে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের আরেক দফা নির্মম নির্যাতন করে ছাত্রলীগ তাদের বিকৃত রুপটি জাতির সামনে প্রকাশ করেছে।
সশস্ত্র এ হামলায় এর আগে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মো. ইয়াহইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন, সদস্য মানসুরা আলমসহ আরও অনেকে আহত হন। দফায় দফায় চলমান হামলায় সবমিলিয়ে শতাধিক ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রলীগের এহেন হামলায় আমরা মোটেও অবাক নই। কেননা, ছাত্রলীগের ইতিহাস রক্তপিপাসার, তাদের দুই হাত রাঙ্গা নিরীহ ছাত্রদের রক্তে। সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ ও নির্মমতায় সমৃদ্ধ ছাত্রলীগের পথচলা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালানো তাদের নিত্য নৈমিত্যিক কাজে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনাম হয় রক্তপিপাসু এ সংগঠনটি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ছাত্রদের অত্যাচার নির্যাতন চালাতে সরকার তাদের দায়মুক্তি দিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিলো এ সংগঠনেরই ২৫ জন নেতা, যাদেরকে আদালত সর্বোচ্চ দন্ড দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠনের সকল গুণ ছাত্রলীগ ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে। সুতরাং সময় এসেছে ছাত্রলীগকে একটি 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার। এ লক্ষ্যে সমমনা ছাত্রসংগঠনগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানাই আমরা।

লক্ষণীয় যে, ঢাবি ক্যাম্পাসে হামলার সময় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রীতিমত মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলো। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তারা। তবে ঘটনার শেষে ভুক্তভোগী ছাত্রদলের দুই কর্মীকেই আটক করেছে অথর্ব পুলিশ। প্রশাসনের এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। অবিলম্বে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রসংগঠনের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ছাত্রসমাজ দূর্বল নয়। ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ কঠোর প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলতে বাধ্য হবে। আর তখন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায় সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।