রবিবার, ২২ মে ২০২২

বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি-ছাত্রশিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সবাই দেখছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সহায়তা করা হচ্ছে না। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরি।

তিনি আজ ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সিলেট মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি সিদ্দিক আহমেদের সঞ্চালনায় এসময় কেন্দ্র এবং মহানগর শাখার সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন। সিলেটের পরিস্থিতিও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় ধৈর্যের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালাই বান্দার জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। ছাত্রশিবির একটি ছাত্রসংগঠন। ছাত্রশিবির দেশের যে কোন দূর্যোগ সংকটে সামর্থ্য অনুযায়ী দেশবাসীর পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সে অনুযায়ী পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছে। ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা তাদের নিয়মিত খরচের সামান্য টাকা থেকে বাঁচিয়ে আপনাদের সামনে কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছে। শুধু সিলেট মহানগর নয় বরং সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের যেখানে যেখানে বন্যার পানিতে জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানেই সাধ্যমতো ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

অনেক সময় দেখা যায়, যারা ত্রাণ নিয়ে হাজির হন তারা বিপদগ্রস্তদের অসহায় ভাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আমরা সবাই অসহায়। সুতরাং যারাই সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন তারা যেনো বন্যার্তদের অসহায় না ভাবেন। বরং ভাবতে হবে আমি নিজেও অসহায় এবং আরেকজন অসহায় ভাইকে সহায়তা করছি। সমাজের যাদেরকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ, মানবেতর পরিস্থিতি আপনারা দেখছেন। এই কষ্ট-দুর্ভোগ দেখে বসে থাকবেন না। দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।

বন্যায় সিলেটের ভয়াবহ পরিস্থিতি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সারা দেশবাসী দেখছে। ইতিমধ্যে ১০টি উপজেলার ৮৬টির অধিক ইউনিয়ন ও সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ১ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা এবং বোরো ফসলের ১৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার পুকুর ও জলাশয় প্লাবিত হয়ে প্রচুর পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে। ৬৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যা কবলিত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দী আছেন। বন্যায় এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। অন্যদিকে সরকার লোক দেখানো কিছু ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে ও আশ্বাস বক্তব্য দিয়ে দায় সেরেছে। এমনকি মন্ত্রী কর্তৃক ত্রাণ দিয়ে ফটোসেশনের পর ত্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে যা গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। সিলেটের বিত্তশালীরাও সেভাবে এগিয়ে আসছেনা। ফলে ত্রাণের জন্য হাহাকার উঠেছে। সিলেট অঞ্চলের এ অবস্থায় বসে না থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। মানুষের পাশে মানুষ থাকবে এটাই কুরআন-হাদিসের শিক্ষা। আমরা বিত্তশালীদের প্রতি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ছাত্রসমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় মেধাবীদের উচিৎ এ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শরিক হয়ে সহায়তার কাজে শরিক হওয়া। ভেদাভেদ ভুলে সকলের দু:খ কষ্টকে এক সাথে একাকার করে নেয়ার মত সাহসী হওয়া। আমি আশাকরি ছাত্রসমাজ আবারো মানবতার নজির স্থাপন করবে।

তিনি এ ভয়াবহ অবস্থায় প্রবাসীদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বিশেষভাবে আহবান জানান।