বুধবার, ১৮ আগস্ট ২০২১

স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই - মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেছেন, পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়ন উৎখাত করতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো। পৃথিবীর বুকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে লাল সবুজের পতাকা অঙ্কন করেছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয়; মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের সেই লালিত স্বপ্ন আজ অসৎ নেতৃত্বের কারণে ধূলিসাৎ হতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ও স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।

তিনি আজ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে "স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও ছাত্রশিবিরের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী" উপলক্ষ্যে আয়োজিত বইপাঠ এবং রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল হাফেজ রাশেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধাভাজন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত।

প্রধান অতিথি বলেন, দেশের স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয় যখন সেই দেশের প্রত্যেক নাগরিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে। আমাদের দেশের সংবিধান সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের কথা নিশ্চিত করলেও বাস্তবে তার ছিটে ফোঁটাও দেখা যায় না। দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে লড়তে হচ্ছে। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে অসংখ্য মানুষ। অথচ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মত প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপুল পরিমান মানবসম্পদ আমাদের রয়েছে। কিন্তু অসৎ নেতৃত্ব ও আদর্শিক রাজনৈতিক সংকট আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য পাকিস্তান আমলের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ দেশের মানুষের মৌলিক ও মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। ভিন্নমত দমন করতে গিয়ে সংবিধানের কোন তোয়াক্কা করছে না সরকার। প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাস হতে জাতীয় রাজনীতির রাজপথে খুন, গুম ও মামলার শিকার হচ্ছে সরকার বিরোধী নেতাকর্মীরা। দেশের আইনশৃঙ্খলা আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিজ বাড়ি/বেডরুমেও আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। ক্যাম্পাস ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকার দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের মা-বোনেরা। সরকার একদিকে যেমন জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অন্যদিকে নিজ দলের নেতাকর্মীরা জনগণের জান-মাল লুটে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, জাতির এই দুর্দশা থেকে উত্তোরণের জন্য ছাত্রশিবিরকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে মেধাবী ছাত্রদের নেতৃত্বে আদর্শিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও সরকারের প্রতিটি অপকর্মের মোক্ষম জবাব দিতে ছাত্র সমাজকে নিয়ে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একই সাথে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। মেধা ও নৈতিক শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে কাঙ্খিত নেতৃত্ব উপহার দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। আমার বিশ্বাস দেশে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্বাধীনতার প্রত্যাশিত সুখ ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, স্বাধীনতার পর এক শ্রেণির অসৎ রাজনীতিবীদদের হাত ধরে মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসগুলো হয়েছিলো মিনি ক্যান্টনমেন্ট। অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ক্যাম্পাস একের পর এক মেধাবী ছাত্রদের রক্তে ভেসে গিয়েছিলো। ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল কসাইখানাতে। ঠিক এই সময় ইসলামী ছাত্রশিবির আলোর মশাল নিয়ে অন্ধকারচ্ছন্ন ক্যাম্পাসকে আলোকিত করেছে। মেধাবী ছাত্রদের সঠিক পথের ও আদর্শিক রাজনীতির দিশা দিয়েছে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরের আদর্শিক অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বাতিল শক্তি সদা ছিল তৎপর। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের খুন গুম ছিল বাতিল শক্তির নিয়মিত কাজ। শত বাঁধার পাহাড় সামনে আসলেও ছাত্রশিবির তার আদর্শিক অগ্রযাত্রা থেকে পিছপা হয়নি। সাথীদের রক্ত পিচ্ছিল পথের ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্রশিবির এগিয়ে গেছে তার স্বপ্নের দিকে।

তিনি আরো বলেন, জাতির সামনে আজ অসৎ নেতৃত্বের কুফল দিবালোকের মত স্পষ্ট। বাংলাদেশ অসৎ নেতৃত্বের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত। তাই আজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখলেও দেশের মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত সুখ থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। দেশের মানুষের স্বার্থে ছাত্রশিবির অসৎ নেতৃত্ব থেকে বেড়িয়ে এসে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা আরো জোরদার করছে। গণতন্ত্র ও সাম্য-ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়তে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক রূপে গড়ে তুলতে ছাত্রশিবির গ্রহণ করেছে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। ইসলামী ছাত্রশিবির তার লক্ষ বাস্তবায়নে অটুট। আমরা সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের জনগণের প্রত্যাশিত স্বাধীনতার প্রকৃত স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত ১২ মার্চ রচনা প্রতিযোগিতা এবং বই পাঠ প্রতিযোগিতা ঘোষণা করে ছাত্রশিবির। পুরস্কার হিসেবে সাত লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।