বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

জ্ঞানচর্চা ও সমাজ বিনির্মাণে কাঙ্খিত ভূমিকা পালনে এগিয়ে যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী ও সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি হাসান আব্দুল্লাহ ও সেক্রেটারি শিবলি ওমর বলেন, পহেলা জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ বাংলাদেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শতবর্ষে পদার্পনের ক্ষণ। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার গরিব-মেহনতি কৃষকদের সন্তানদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্য নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নওয়াব আলী চৌধুরী, একে ফজলুল হক, নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা প্রমুখ মুসলিম নেতৃবৃন্দ এতদঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার হন। কলকাতার বর্ণ হিন্দু ও জমিদারদের তীব্র বিরোধিতার মুখে মুসলিম নেতৃবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঔপনিবেশিক আমল ও পাকিস্তান অধ্যায় পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ পথচলার এই বিশাল সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন নিঃসন্দেহে অনেক। দেশের প্রতিটি সংকটে, প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ঈর্ষণীয়।

তবে শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেশ সেরা এই বিদ্যাপীঠের অর্জন পর্যালোচনা করলে গর্ববোধের পাশাপাশি কিছু হতাশাও উঁকি দেয়। স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ, গবেষণায় কম বরাদ্দ, শিক্ষকদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি, দলীয় পরিচয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও যোগ্যদের প্রতি বেইনসাফি, শিক্ষা-গবেষণার মান কমে যাওয়া ও কুম্ভীলকবৃত্তি, মারাত্মক আবাসন সংকট, একদলীয় ছাত্র রাজনীতি ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে প্রতিটি ক্ষণে। যে উদ্দেশ্যে ও প্রেক্ষিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা তাঁর কতটুকুই বা এই বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পেরেছে? প্রতিষ্ঠায় যাঁরা অবদান রেখেছিলেন তাঁদের স্মরণে কেন এত গাফেলতি ও বিস্মৃতির লম্বা ফিরিস্তি? মুসলিম কৃষকদের সন্তানদের জন্য নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ইসলামোফোবিয়ার চর্চা? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে একসময় যার নাম গর্ব ভরে উচ্চারণ করা হতো সেই অবস্থানের কেন এই অবনতি? – শতবর্ষ পেরিয়ে এসে এসব আত্মসমালোচনা করাটাই সবচেয়ে জরুরি। আগামীর পথচলা যাতে আরো সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হয়, বিশ্ব র‌্যাংকিং এ যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামনের সারির একটি প্রতিষ্ঠান হতে পারে - তার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান খুঁজে দেখাটা কর্তৃপক্ষের জন্য জরুরি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, একসময় শিক্ষা, অধ্যয়ন, গবেষণা ও ছাত্র রাজনীতির জন্য আদর্শ স্থান ছিল দেশের এই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখন এই অবস্থার অনেক অবনতি ঘটলেও মানুষের মনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের জায়গাটি এখনো লোপ পায়নি। সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির মাধ্যমে দেশ গঠনে সবসময়ের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে; দেশের সর্বত্র শিক্ষা ও গবেষণার যে বেহাল দশা তা থেকে উত্তরণে এই বিদ্যায়তনই সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে; দূর্নীতি, জুলুম, অনাচার, বেইনসাফি ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই রুখে দাঁড়িয়ে দেশের সকল সংকটে এগিয়ে এসে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে – শতবর্ষে দাঁড়ানো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সকলের প্রতি দেশবাসীর এটাই প্রত্যাশা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও মধুর ক্যান্টিন থেকেই একসময় সারা দেশের ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন সর্বত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু আজ ছাত্ররাজনীতির সেই সোনালী যুগ যেন অতীত দিনের কল্পকথা, ভিন্ন দল-মতের সহাবস্থানের স্বপ্ন দেখা যেন বাতুলতা। একদলীয় রাজনীতির স্বৈরাচারী মনোভাব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার পথকে বন্ধ করে দিয়েছে। কলুষিত করেছে ডাকসু ও ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামীর জাতি গঠনে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক, শিক্ষা-গবেষণা-রাজনীতি সর্বত্র একটি আদর্শ অবস্থান তৈরিতে তৎপর হোক এবং সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদযাত্রা আরো দীর্ঘায়ু লাভ করুক – শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের কাছে এই আমাদের কামনা।