বৃহস্পতিবার, ০৭ মে ২০২০

শিক্ষার্থীসহ বিপদগ্রস্তদের মেস ও বাসাভাড়া মওকুফের দাবী জানিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীসহ বিপদগ্রস্তদের বাসা ভাড়া মওকুফের দাবী জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, করোনার সংক্রমন কমাতে সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বানিজ্য, স্বাভাবিক চলাফেরা প্রায় বন্ধ। থেমে আছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ব্যবসা-কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকায় জনগণের বিশাল একটি অংশ ইতোমধ্যে ভয়াবহ আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়েছে। যার দু:খজনক দৃশ্য প্রতিদিনই জাতি গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখতে পাচ্ছে। এই অবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দেশের লাখো ছাত্র-ছাত্রী। এদের অধিকাংশই আবাসিক হলে কিংবা মেসে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের আর্থিক উৎসগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। টিউশনি আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমের টাকায় যাদের পড়াশুনা, মেস ভাড়া ও আনুসঙ্গিক খরচ চলত এমন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বিপাকে। ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর শুধু পড়াশুনারই ক্ষতি হচ্ছে না বরং তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। বহু শিক্ষার্থী অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবন যাপনের ব্যাপারে খুব একটা দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। যা অত্যন্ত দু:খজনক। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সেমিস্টার ফি ও বাসা ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের অজানা থাকার কথা নয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ও বাসা ভাড়া প্রদান করা দুরূহ। উল্টো তাদের অনেকের সার্বিক সহায়তা প্রয়োজন। অবিলম্বে বিপদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোড় দাবী জানাচ্ছি। অন্যদিকে সাধারণ কর্মজীবী মানুষের অবস্থাও করুন। ঢাকা, চট্টগ্রামের মত নগরীগুলোতে এ চিত্র ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। ঢাকায় বসবাসরত বেশীর ভাগ মানুষই ভাড়াটিয়া। যাদের জীবনযাত্রা কর্মের উপর নির্ভরশীল। হঠাৎ করে কর্মস্থল, ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বল্প আয় ও খেটে খাওয়া মানুষেরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। একপ্রকার নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে কর্মজীবী মানুষের পরিবারগুলোতে। তার ওপর অনেকের রয়েছে কিস্তির দেনা শোধের চাপ। এরই মধ্যে অনেক ভাড়াটিয়াকে ভাড়ার জন্য হেনস্তা করা হচ্ছে, বাসা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। যেখানে এসব মানুষ ঠিকমত খাবারই জোগাড় করতে পারছেনা সেখানে এ মুহুর্তে তাদের পক্ষে বাসাভাড়া, দোকানভাড়া বা কিস্তি প্রদানের জন্য চাপ দেয়া, মরার উপর খারার ঘা' এর মত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বিকল্প পথও খোলা নেই। এ অবস্থায় বাস্তবিক ও মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, মেস-আবাসিক হোস্টেলের সিট ভাড়া মওকুফ করা জরুরী। অন্যদিকে অমানবিক পরিস্থিতিতে থাকা বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ সময়ের দাবী। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় বিপদে থাকা মানুষদের বাসা-দোকান ভাড়া এবং এনজিও, ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আংশিক বা পূর্ণ মওকুফের ব্যাপারে সদয় হওয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জোড় অনুরোধ করছি।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকারের জরুরী ফান্ড থেকে শিক্ষার্থী ও বিপদগ্রস্ত মানুষের দূর্দশায় সহায়তা করলে সহজেই এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সাথে প্রয়োজন বাসা, দোকান ও মেস মালিকদের মানবিকতা এবং দায়িত্ববোধ। আমরা আশা করি শিক্ষার্থী ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সার্বিক সহায়তা ও কষ্ট লাঘবে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাই যার যার অবস্থান থেকে মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন।