মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০১৯

ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি সংবিধানবিরুদ্ধ ও ডাকসুর এখতিয়ার বহির্ভূত - ইসলামী ও সমমনা ছাত্রসংগঠনসমূহ

ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি সংবিধানবিরুদ্ধ ও ডাকসুর এখতিয়ার বহির্ভূত
- ইসলামী ও সমমনা ছাত্রসংগঠনসমূহ

ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি প্রত্যাখ্যান করে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে ইসলামী ও সমমনা ১৪টি ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রনেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে ডাকসু ঐতিহ্যবাহী নাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডাকসুর ঐতিহ্যে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের মত এখতিয়ারবহির্ভূত ও অসাংবিধানিক দাবি জানিয়েছে ডাকসু। ছাত্ররাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ও মূলধারার ছাত্রসংগঠনসমূহকে নিষিদ্ধ ঘোষণার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাণ্ডে ছাত্রসমাজ হতবাক ও বিক্ষুব্ধ। ডাকসুর এ ঘোষণা অগণতান্ত্রিক ও ডাকসুর নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। একইসাথে এ সিদ্ধান্ত সুস্পষ্টভাবে ডাকসুর এখতিয়ারবহির্ভূত ও অসাংবিধানিক। ভিপিকে পাশ কাটিয়ে গৃহিত এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরও অকপটে একথা স্বীকার করেছেন। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে ইসলামী ছাত্রসংগঠনসমূহকে নিষিদ্ধ করার পায়তারা হচ্ছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিতই হয়েছিল মূলত এ অঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ধর্মবিরোধী তথা মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড এদেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, তাহজিব তামাদ্দুনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা চেতনায় আঘাতের শামিল। নেতৃবৃন্দ ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ডাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন থেকে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় লাভ করার ইতিহাস রয়েছে। এসব ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রসমাজের বেশির ভাগ অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে সংগঠনগুলোর নিয়মতান্ত্রিক ও গঠনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রসমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এ সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ছাত্রসমাজের স্বার্থ রক্ষার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে এতগুলো ছাত্রসংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা ডাকসুর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে উপেক্ষা করার এ অশুভ প্রক্রিয়ার কোন আইনি ভিত্তি নেই। বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন বা পদক্ষেপ গ্রহণের এখতিয়ার কোন কর্তৃপক্ষের নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার সংরক্ষিত। উপরিউক্ত শর্ত মেনে নব্বই শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এদেশে প্রতিটি মুসলমানের ইসলামের ভিত্তিতে সংগঠন করার অধীকার সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে কোন বিচ্ছিন্ন স্থান নয়। বাংলাদেশেরই একটি অংশ হিসেবে সংবিধান বহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ এখানে নেই। কথিত সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী ও বেআইনি। তাছাড়া ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও এ বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই ডাকসুর নামে প্রদত্ত এমন বেআইনি ও রাজনৈতিক বিদ্বেষপূর্ণ দাবি অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া নেতৃবৃন্দ আরও উল্লেখ করেন, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে, সেখানে দেশের অভ্যন্তরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই।

নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরও বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের মনে রাখা উচিৎ, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীর ক্যাম্পাস নয়; সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশার অন্যতম স্থান এ ক্যাম্পাস। এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সকল ছাত্রসংগঠনের সমানভাবে রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। ঢাবির প্রতিটি কার্যক্রমে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে সকল ছাত্রসংগঠনের। কিন্তু সে সুযোগ থেকে কোন ছাত্রসংগঠনকে বঞ্চিত করলে তা হবে সংবিধানবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক। এমন প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলে ছাত্রসমাজ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠবে। আমরা আশা করি ডাকসু নেতৃবৃন্দ দায়িত্ববোধ ও নিজেদের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাবেন। দলীয় মনোভাব ও হীনমন্যতার উর্ধ্বে উঠে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।

বিবৃতি প্রদানকারী ছাত্রনেতৃবৃন্দ হচ্ছেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস সভাপতি মোঃ মনসুরুল আলম মনসুর, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর) সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি তোফায়েল গাজালি, ইসলামী ছাত্রসমাজ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ইসলামী ছাত্রসমাজ (একাংশ) সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান, মুসলিম ছাত্রলীগ সভাপতি খান আসাদ, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রুবেল, ছাত্র কল্যাণ পার্টি সভাপতি শেখ তামিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি সৈয়দ মো. মহসিন, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন (ইরান) সভাপতি মোঃ মিলন, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন (মেহেদী) সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান সুরুজ, ন্যাশনাল ছাত্র পার্টি সভাপতি সোহেল রানা, জাতীয় ছাত্র পার্টি সভাপতি সোহেল রানা।

সংশ্লিষ্ট