মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০১৯

যুগান্তরে 'অস্ত্র-বিস্ফোরক সংগ্রহ করছে জঙ্গি ও জামায়াত চক্র' শীর্ষক প্রতিবেদনে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

যুগান্তরে 'অস্ত্র-বিস্ফোরক সংগ্রহ করছে জঙ্গি ও জামায়াত চক্র' শীর্ষক প্রতিবেদনে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতা নয় বরং বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসামূলক অবস্থান থেকেই পুরোনো নিউজ থেকে কপি করে এই বানোয়াট প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে সেখানে কাল্পনিক সুত্রের বরাত দিয়ে চাতুরতার সাথে জামায়াত-শিবিরকে জড়ানো হয়েছে। যেগুলোর সাথে জামায়াত-শিবিরের কোন সম্পর্ক নেই।

অন্যদিকে স্বামীবাগে কথিত অস্ত্র উদ্ধারের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করলে গত ২ জুলাই ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে যুগান্তরসহ সকল গণমাধ্যমে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছিল এবং তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদক তা উল্লেখ না করে অপপ্রচারকেই প্রাধান্য দিয়েছে। ছাত্রশিবির বা জামায়াতের সাথে জঙ্গিদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার ভগ্নিপতি জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান থেকে শুরু করে গুলশান হামলায় অংশ নেয়া আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতার ছেলেসহ প্রতিটি জঙ্গিবাদী ঘটনার সাথে আ.লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ হয়েছে। ২০০৫ সালে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমাহামলার আসামী নড়াইল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গাজী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে নিশ্চিত করেন, নড়াইল সদর থানার ওসি সুভাস বিশ্বাস। ময়মনসিংহে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মূল হোতা ছিল যুবলীগ নেতা। ব্লগার নিলয় হত্যাকারী হিসেবে নাম এসেছে মহাজোট সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর ভাতিজা নাহিনের। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলাকারী রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে। আইএস এর ভিডিওতে বাংলাদেশে হামলার হুমকিদাতা সাফি আওয়ামী লীগের নেতা তথাকথিত জনতার মঞ্চের অন্যতম নায়ক সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে। শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দানে হামলাকারী হিসেবে নাম এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলের। সিঙ্গাপুরে জঙ্গিবাদী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি কায়েস চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা নূরুল ইসলামের পুত্র।

রাজশাহীতে জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত মুনতাসিরুল ইসলাম অনিন্দ্য রাজশাহী মহানগরীর সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানাখ্যাত বাড়ির মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আতাহার উদ্দিন। এছাড়া ময়মনসিংহে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারকৃত ছয় জনের মধ্যে আল আমিন ধোবাউড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা। এসব ঘটনার দ্বারাই এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আওয়ামী লীগই দেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের বড় প্লাটফর্ম।

কিন্তু প্রতিবেদক এমন সত্য বিষয়গুলোকে চাতুরতার সাথে এড়িয়ে গিয়ে কাল্পনিক সূত্রের বরাত দিয়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নিজের মনগড়া বক্তব্য চালিয়ে দিয়েছেন যা নীতিহীন সাংবাদিকতার নিৃকষ্ট দৃষ্টান্ত। সাংবাদিকতার পবিত্র পেশাকে অপব্যবহার করার এই প্রচেষ্টাকে আমরা ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করছি। সরকার বরাবরই জঙ্গিবাদ নিয়ে অপরাজনীতি করেছে। আর এই বানোয়াট প্রতিবেদনের সাথে সেই অপরাজনীতির যোগসূত্র রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

নেতৃবৃন্দ বলেন, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্রের মতো বিষয়ের সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এর আগেও যুগান্তরের মতো কিছু গণমাধ্যম অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু এর সাথে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে আমরা বহুবার চ্যালেঞ্জ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সেই চ্যালেঞ্জের সঠিক জবাব দিতে পারেনি। ভারসাম্যহীন রাজনৈতিকদের মতো মুখস্ত বুলি আওড়ানো প্রকৃত সাংবাদিকদের কাজ নয়।

আমরা আগেও বলেছি এবং আবারো দৃঢ়তার সাথে বলছি, ছাত্রশিবিরের দীর্ঘ পথ চলায় জঙ্গিবাদের সাথে কোনো সম্পর্ক কেউ কোনোদিন দেখাতে পারেনি এবং পারবেও না। কেননা ছাত্রশিবির জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করেনা। জঙ্গিবাদকে ছাত্রশিবির অগ্রহণযোগ্য পন্থা মনে করে। আর জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে অপরাজনীতির সহযোগিদের দেশবাসী ঘৃণা করে।

নেতৃবৃন্দ এ ধরণের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।