মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮

মানবজাতির পথনির্দেশক হিসেবে আল কুরআনের তাৎপর্য

পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন। আল্লাহ তাআলার বড়ই মেহেরবানি যে, তিনি আমাদের ওপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) কুরআন দিয়েই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ তৈরি করেছিলেন। এটি অবতীর্ণ হয়েছে বিশ্বমানবতার মুক্তি, সৎ আর সত্যের পথ দেখানোর জন্য। অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বিভীষিকাময় জাহেলি সমাজে কুরআন এনেছিল আলোকময় সোনালি সকাল। কুরআন মজিদ সর্বশেষ আসমানি কিতাব। বর্তমান পৃথিবীর নির্ভুল ও বিশুদ্ধতম কিতাব। মানবজাতির হেদায়েতের মূল উৎস, সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য কিতাব। সুতরাং কুরআন মজিদ হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য সৌভাগ্য অর্জনের সেরা মাধ্যম। আমাদের ওপর কুরআন মজিদের ৫টি হক আছে। ১. ঈমান বিল কুরআন- কুরআন মজিদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন; ২. আযমত- কুরআনের গুরুত্ব মাহাত্ম্য ও মর্যাদা বুঝা; ৩. মুহাব্বাত-কুরআন মজিদের প্রতি ভালোবাসা; ৪. তেলাওয়াত মাআস সিহহাত- সহিহ শুদ্ধ তেলাওয়াত; ৫. ইতাআত-কুরআন মজিদের বিধানের আনুগত্য করা। আমাদের উচিত সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন মজিদ তেলাওয়াত করা, এর অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা, এর আদেশসমূহ পালন করা এবং এর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক কায়েম করা এবং এর গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা। এর আলোকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশকে আলোকিত করা।

আল কুরআনের পরিচয়, গুরুত্ব ও ফজিলত
কুরআন শব্দের অর্থ: পাঠ করা, যা পাঠ করা হয়। আর পরিভাষায়-আল্লাহ তাআলা জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ২৩ বছরে মানবজাতির হেদায়েত হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তার নাম আল কুরআন। নিম্নে কুরআনের পরিচয় তুলে ধরা হলো:

১. কুরআন আল্লাহর কিতাব : আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে মানবতার হেদায়েতের জন্য যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোকে আসমানি কিতাব বলা হয়। আল কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব, যা বিশ্বমানবতার জন্য অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন : “নিশ্চয় এ কুরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (সূরা আশ-শুআরা-১৯২) ইমাম খাত্তাবি (রহ) বলেন, হাদিসে এসেছে যে, জান্নাতের সিঁড়ির সংখ্যা হচ্ছে কুরআনের আয়াতের সংখ্যা পরিমাণ। কুরআনের পাঠককে বলা হবে, তুমি যতটুকু কুরআন পড়েছ ততটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠ। যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন পড়েছে, সে আখেরাতে জান্নাতের সবশেষ সিঁড়ির ধাপে উঠে যাবে। যে ব্যক্তি কুরআনের কিছু অংশ পড়েছে সে ততটুকু উপরে উঠবে। অর্থাৎ যেখানে তার পড়া শেষ হবে সেখানে তার সওয়ারের শেষ সীমানা হবে।

২. আল কুরআন নির্ভুল গ্রন্থ: মহাগ্রন্থ আল কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি নির্ভুল কিতাব যার ভেতরে কোনো প্রকার সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন: (কুরআন) সে-ই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, এতে রয়েছে মুত্তাকিদের জন্য পথের দিশা।” (সূরা আল বাকারা : ২)

৩. কুরআন হলো নুর বা আলো : অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিকে সত্যিকার আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য আল কুরআন হলো আলো বা নুর। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়েত দেন।” (সূরা মায়িদাহ : ১৫-১৬)

৪. কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার : কুরআন যাবতীয় বিকৃতি থেকে মুক্ত। কেননা আল্লাহ তাআলা এর সংরক্ষণ করবেন। কুরআনে বলা হয়েছে: “নিশ্চয় আমি উপদেশবাণী তথা কুরআন নাজিল করেছি এবং নিঃসন্দেহে এর হেফাজতকারী আমি নিজেই।” (সূরা আল হিজর-৯)

৫. কুরআন মানবজাতির জন্য হেদায়েত : আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়জীবন কিভাবে পরিচালিত হবে, তার প্রতিটি বিষয় কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন : “আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়েত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।” (সূরা আন নাহল : ৮৯)

৬. কুরআন রমাদান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে : কুরআন রমাদান মাসে লাইলাতুল ক্বদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে : “রমজান এমন মাস যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা বিশ্বমানবতার জন্য হেদায়েতও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যকার পার্থক্য বিধানকারী।” (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)

৭. কুরআন মুমিনদের জন্য রহমাত : কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত হিসেবে নাজিল করা হয়েছে। যারা এ কুরআন পড়বে, সে অনুযায়ী আমল করবে তারা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন : “আর আমি কুরআন নাজিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা জালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৮২)

৮. কুরআন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস : কুরআন মজিদ সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস এবং কুরআন যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নির্ভুল ও বাস্তবভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কুরআনে এরশাদ হচ্ছে: “ইয়াসিন। বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ।” (সূরা ইয়াসিন : ১-২)

৯. কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ : কুরআনের মত কোন কিতাব মানুষ বা কারো পক্ষে বানানো সম্ভব নয়। প্রায় চৌদ্দশত বছর আগের চ্যালেঞ্জ এ পর্যন্ত কেউ মুকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি। আর কিয়ামত পর্যন্ত তা সম্ভবও হবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন : “বল, যদি মানব ও জিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছু আনয়ন করবে, তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছুই আনয়ন করতে পারবে না, যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়।” (সূরা বনি ইসরাইল : ৮৮)

১০. যার সন্তান আল-কুরআন শিক্ষা করবে তার প্রতিদান : নবী করীম (সা) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদনুযায়ী আমল করবে; তার পিতা-মাতাকে দু’টি পোশাক পরিধান করানো হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন্ আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? বলা হবে, তোমাদের সন্তানের কুরআন গ্রহণ করার কারণে। (হাকেম)

কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব
১. কুরআন শিক্ষা ফরজ : প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা কুরআন শিক্ষা করা ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক : ১) কুরআন শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তেলাওয়াত কর।” (মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ : ৮৫৭২)

২. কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা : কুরআন মাজিদে কুরআন প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ (সা)ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রসার-প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কিভাবে তা প্রচার করবে? সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে বলা হয়েছে: “হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও।” (সূরা মায়িদাহ : ৬৭)

৩. কুরআন অফুরন্ত জ্ঞানভান্ডার: মহাগ্রন্থ আল কুরআন জ্ঞানের এক অফুরন্ত ফল্গুধারা যা কখনো ফুরায় না। এর জ্ঞানভান্ডার কখনো অতীতের গর্ভে বিলীন হয় না এবং ভবিষ্যত্যের আগমনে অকেজো হয় না। সূর্যালোকের মত প্রতিদিনই ঘটে এর জ্ঞানের নবোদয়। আল্লাহ সূরা আর-রাদ এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন : “যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।”

৪. হেদায়েত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা : কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়েতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সে জন্য কুরআন থেকে হেদায়েত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআনে সূরা বনি ইসরাইলের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : “নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক।”

কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াত বা কুরআন চর্চার গুরুত্ব ও ফজিলত :

কুরআনে কারিম মানবজাতির জন্য আল্লাহর এমন এক বড় নিয়ামত। পৃথিবীর অন্য কোনো নিয়ামত, অর্থসম্পদ কোনো বস্তুই এর সমকক্ষ হতে পারে না। কুরআনের তেলাওয়াত, শোনা ও শোনানো, শিখা ও শিখানো, এর ওপর আমল করা, তা প্রচার ও প্রসার করা, এসবই মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের মহাকল্যাণ ও সৌভাগ্য লাভের উপায়। হযরত উক্ববা ইবনে আমির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, যদি প্রতিদিন কোনো ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে যে কোনো দু’টি আয়াত শিখে নেয় বা পড়ে নেয়, তাহলে এটা তার জন্য দু’টি উটনী পাওয়ার চেয়েও উত্তম। তিনটি আয়াত শিখলে তিনটি উটনীর চেয়ে আর চারটি আয়াত শিখলে চারটি উটনী পাওয়ার চেয়ে উত্তম।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৮০৩) প্রত্যেক মুসলমানের প্রচুর পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াতে মনোযোগী হওয়া অতি জরুরি। রমজান মাসে হযরত জিবরাইল (আ) নবী করীম (সা)-এর সঙ্গে ‘দাওর’ করতেন, পূর্ণ কুরআন একে অপরকে শুনাতেন। হযরত উসমান (রা) প্রতি রাত্রে কুরআন এক খতম করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ) রমজানে ৬১ বার কুরআন খতম করতেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) রমজানের ত্রিশ দিনে ত্রিশ খতম, ত্রিশ রাত্রে ত্রিশ খতম ও তারাবিতে এক খতম মোট ৬১ খতম করতেন। ইমাম শাফেয়ী (রহ) নামাজের বাইরে ৬০ বার কুরআন খতম করেছেন।

১. কুরআন তেলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা : কুরআন তেলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দু’টিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। এ বিষয়ে সূরা ফাতিরের ২৯-৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন : “যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’

২. কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ করে: কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মিম একটি হরফ।” (সুনান আত-তিরমিযি : ২৯১০)

৩. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি : কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারি : ৫০২৭)

৪. কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে : কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: “তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।” (মুসলিম : ১৯১০)

৫. কুরআন তেলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে : কুরআন তেলাওয়াত বান্দাহর জন্য এমন উপকারী যে, তা তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন : “মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।” (সূরা আনফাল : ২)

৬. আল-কুরআন মানুষকে শান্তি, স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দিতে সক্ষম : যে ভূখন্ডে আল কুরআন প্রতিষ্ঠিত হবে, এ কুরআন সে ভূখন্ডের লোকদেরকে পূর্ণ শান্তি, স্বস্তি দিতে সক্ষম। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, এ কুরআন যখন নাজিল হয়েছিল তখন সমগ্র পৃথিবী বিশেষ করে আরব জাতির অবস্থা ছিল চরম শোচনীয়, ধর্ম এবং নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়ে তারা পশুর মত জীবন-যাপন শুরু করেছিল, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তারা হয়ে গিয়েছিল চরম দেউলিয়া, দারিদ্র্য তাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল, তাদের সমাজে কোন মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। আল কুরআন তাদের জীবন এবং সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটালো, অবশেষে তারা হয়ে উঠল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তাদের সমাজে মানুষের শান্তি, স্বস্তি এবং নিরাপত্তা ফিরে পেল, নারী তার সতীত্বের নিরাপত্তা পেল, অর্থনৈতিক ভাবে তারা পরিপূর্ণ সচ্ছল হয়ে উঠল এবং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাল যে তাদের সমাজে ভিক্ষা নেয়ার মত কোন মানুষ পাওয়া যেত না, কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যদি কোন জনপদের লোকেরা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে আসমান ও জমিনের বরকতের দরজা তাদের জন্য খুলে দেয়া হবে।

কুরআনের গবেষক:
আহনাফ ইবনে কায়েস। আরব মরুর এক জানবাজ মুজাহিদ। শৌর্য আর সাহসে তিনি ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আরবি সাহিত্যেও তিনি ছিলেন এক উঁচু মাপের সমঝদার ব্যক্তি। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চেহারা মোবারক দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। কিন্তু পেয়েছেন নবী (সা)-এর হাতে গড়া বহু সাহাবীর একান্ত সান্নিধ্য। একদিন তার সামনে এক ব্যক্তি কুরআনের এই আয়াতটি পড়ালেন: “আমি তোমাদের কাছে এমন একটি কিতাব নাজিল করেছি, যাতে তোমাদের কথা আছে, অথচ তোমরা চিন্তা গবেষণা করো না।” (সূরা আম্বিয়া : ১০) এই আয়াতটি তাঁকে যেন নতুন দিগন্তের দিকে আহবান জানালো। তিনি বুঝতে চেষ্টা করলেন, ‘যাতে শুধু তোমাদের কথাই আছে’ এই কথার অর্থ কী? তিনি চিন্তা করছিলেন আর অভিভূত হচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল কেউ যেন নতুন কিছু শোনাল। তিনি কুরআন নিয়ে বসে গেলেন। একে একে বিভিন্ন দল, গ্রুপের বর্ণনা তিনি পেতে শুরু করলেন। যেমন একদলে পরিচয় পেলেন, “এরা রাতের বেলায় খুব কম ঘুমায়, শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফের জন্য মাগফেরাত কামনা করে।” (সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮) আবার একদলের পরিচয় পেলেন এভাবে, “তাদের পিঠ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা নিজেদের প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে, তারা অকাতরে আমার দেয়া রিজিক থেকে খরচ করে।” (সূরা আস সাজদা : ১৬) কিছু দূর এগিয়ে যেতেই আবার পরিচয় পেলেন আরেক দলের। যাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, “রাতগুলো তারা নিজেদের মালিকের সিজদা ও দাঁড়িয়ে থাকার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়।” (সূরা আল ফুরকান : ৬৪) “যারা ব্যয় করে সচ্ছল এবং অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং কোমল, আল্লাহ তো কল্যাণকামীদের ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪) এরপর এলো আরেক দলের পরিচয়, “এরা (দুনিয়ার প্রয়োজনের সময়) অন্যদেরকে নিজেদেরই ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়, যদিও তাদের নিজেদের রয়েছে প্রচুর অভাব ও ক্ষুধার তাড়না। যারা নিজেদেরকে কার্পণ্য থেকে দূরে রাখতে পারে, তারা বড়ই সফলকাম।” (সূরা হাশর : ৯) অধ্যয়ন চলছে আর চিন্তার গভীরে ডুবে যাচ্ছেন আহনাফ। এবার পেলেন আরেক দলের পরিচয়, “এর বড় বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, যখন এরা রাগান্বিত হয়, তখন (প্রতিপক্ষকে) মাফ করে দেয়, এরা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে, এরা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, এরা নিজেদের মধ্যকার কাজকর্মগুলোকে পরামর্শের ভিত্তিতে আঞ্জাম দেয়। আমি তাদের যা দান করেছি, তা থেকে তারা অকাতরে ব্যয় করে।” (সূরা আশ শুরা : ৩৭-৩৮) হযরত আহনাফ ছিলেন একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। নিজের সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ। আর কুরআনে পাওয়া মুমিনদের পরিচয়ের সাথে তিনি নিজেকে মেলাতে পারলেন না। বরং বলেই ফেললেন: হায় আল্লাহ! আমি তো এই কুরআনের কোথাও ‘আমাকে’ খুঁজে পেলাম না। আমার কথা কোথায়? আমার চরিত্র তো কোথাও নেই? অথচ এ কুরআনে তো তুমি সবার কথাই বলেছো।

কিন্তু থামলেন না তিনি। বরং এগিয়ে চললেন নতুন উদ্যমে। এবার পেলেন আরও কতক মানুষের পরিচয়, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছেÑ যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তখন তারা গর্ব ও অহংকার করে বলে, আমরা কি একটি পাগল ও কবির জন্য আমাদের মাবুদদের পরিত্যাগ করবো?” (সূরা সাফফাত : ৩৫-৩৬) তিনি এগিয়ে চললেন, পেলেন আরেক দলের পরিচয়, “যখন এদের সামনে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন এদের অন্তর অত্যন্ত নাখোশ হয়ে পড়ে, অথচ যখন এদের সামনে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্যদের কথা বলা হয়, তখন অন্তর খুশিতে ভরে যায়।” (সূরা যুমার : ৪৫) আরেক দলের পরিচয়ও এলো তাঁর সামনে, “তোমাদের কিসে জাহান্নামের এই আগুনে নিক্ষেপ করলো? তারা বলবে- আমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করতাম না, আমরা গরিব মিসকিনদের খাবার দিতাম না, কথা বানানো যাদের কাজ আমরা তাদের সাথে মিশে সে কাজে লেগে যেতাম। আমরা শেষ বিচারের দিনটিকে অস্বীকার করতাম, এভাবে একদিন মৃত্যু আমাদের সামনে এসে গেল। (সূরা মুদ্দাসসির : ৪২-৪৭)

হযরত আহনাফ এভাবে কুরআনে আঁকা এক একে অনেক দলের লোকদের চেহারার সাথে নিজেকে মেলাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু মিলল না। শেষের গ্রুপের সাথেও মিলল না। শেষ গ্রুপের ব্যাপারে তো তিনি বলেই ফেললেন, আয় আল্লাহ! এ ধরনের লোকদের ওপর তো আমি খুবই অসন্তুষ্ট। আমি এদের ব্যাপারে তোমার আশ্রয় চাই। এ ধরনের লোকদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন নিজের ঈমানের ব্যাপারে আস্থাশীল ছিলেন, তেমনি গুনাহের ব্যাপারেও ছিলেন তিনি সমান সজাগ। কুরআনের পাতায় তাই তিনি এমন একটি চেহারা খুঁজে ফিরছিলেন, যাকে তিনি একান্ত নিজের বলে মনে করতে পারেন। তিনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার ক্ষমা ও দয়ার ব্যাপারেও ছিলেন গভীর বিশ্বাসী। তাই তিনি কুরআনের পাতায় খুঁজে ফিরছিলেন এমন এক চেহারার, যেখানে তিনি পাবেন ভালো-মন্দ মেশানো মানুষের প্রতিচ্ছবি। তিনি গভীর মনোযোগের সাথে আবার গবেষণায় লেগে গেলেন।

তিনি পেলেন এমন একদল মানুষের বর্ণনা, যাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “হ্যাঁ! এমন ধরনের কিছু লোকও আছে, যারা নিজেদের গুনাহ স্বীকার করে। এরা ভালো-মন্দ মিশিয়ে কাজ-কর্ম করে, কিছু ভালো কিছু মন্দ। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ এদের ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা বড়ই দয়ালু-ক্ষমাশীল।” (সূরা আত তওবা ১০২) হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস এ আয়াতের সাথে নিজের অবস্থাকে ভালোভাবে বুঝতে চাইলেন, মেলাতে চাইলেন তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে। যখন হুবহু মিল খুঁজে পেলেন, বললেন, হ্যাঁ! এতক্ষণ পর আমি আমাকে উদ্ধার করেছি। আমি আমার গুনাহের কথা অকপটে স্বীকার করি, আমি যা কিছু ভালো কাজ করি তাও আমি অস্বীকার করি না। এটা যে মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবানি তা-ও আমি জানি। আমি মহান আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকে নিরাশ নই। কেননা এই কুরআনেরই আরেক স্থানে বলা হচ্ছে : “আল্লাহর দয়া ও রহমত থেকে তারাই নিরাশ হয়, যারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট।” (সূরা আল হিজর : ৫৬)

হযরত আহনাফ কুরআনের মর্ম অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বুঝার পর নীরবে বলে উঠলেন, হে মালিক- তুমি মহান, তোমার কুরআন মহান, সত্যিই তোমার এই কুরআনে দুনিয়ার জ্ঞানী-গুণী, পাপী-তাপী, ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন সবার কথাই আছে। তোমার কুরআন সত্যিই অনুপম, সুন্দর। পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়েখ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ) তার এক রচনায় হযরত আহনাফ ইবনে কায়েসের এ ঐতিহাসিক গল্পটি বর্ণনা করেছেন। আসুন, আমরাও প্রত্যেকে খুঁজে ফিরি কুরআনে বর্ণিত দল-উপদলের সাথে আমাদের চরিত্রের। বুঝে নিই আমাদের প্রত্যেককে স্ব স্ব চরিত্র, কুরআনের সাথে হুবহু মেলানোর তৌফিক দান করুন আমিন।

খুব সহজেই কুরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বারবার বলেছেন (আল-কামার ৫৪: ১৭, ২২, ৩২, ৪০) “আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্য। অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি?” (অনুবাদ : মুহিউদ্দীন খান) কুরআনের এই আয়াতটি পড়ার পর আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যাদের মাতৃভাষা আরবি নয় তাদের জন্য কুরআন বুঝা কেমন করে সহজ হতে পারে? তার মানে আল্লাহর এই বাণীতে এমন কোনো ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে যা আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি। ভারতের ভূ-পদার্থবিদ এবং বিশিষ্ট কুরআন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আজিজ আব্দুর রহীম দীর্ঘ ২০ বছর গবেষণা করে কুরআন শিক্ষার যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রণয়ন করেছেন তার মাধ্যমে যে কোনো সাধারণ মুসলিমের পক্ষে খুব সহজেই কুরআনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব। ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আন্ডারস্ট্যান্ড কুরআন একাডেমি’। কুরআনের মোট শব্দ সংখ্যা হলো প্রায় ৭৮,০০০। ড. আব্দুল আজিজ গবেষণা করে দেখেছেন, আমরা নিয়ত থেকে শুরু করে নামাজের মধ্যে যেসব দোয়া-দরুদ, সূরা ফাতিহাসহ কুরআনের শেষ পারার ছোট ছোট সূরা এবং কুরআনের সুপরিচিত আয়াত হামেশা তেলাওয়াত করি, তাতে যতগুলো শব্দ রয়েছে সেগুলো কুরআনে ৫৫,০০০ বার এসেছে, যা কুরআনের মোট শব্দ সংখ্যার ৭০ শতাংশ। কুরআনের মোট মৌলিক শব্দের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৮৫০। ড. আব্দুল আজিজের হিসাব মতে মাত্র ২৫০টি মৌলিক শব্দ শিখতে পারলেই কুরআনের ৭০ শতাংশ শব্দ জানা হয়ে যায়। সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো, নামাজের প্রয়োজনীয় দোয়া ও সূরা পড়তে গিয়ে আমরা প্রায় ৫০টি বাক্য তেলাওয়াত করি, যার মধ্যে রয়েছে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০টি শব্দ। কেবল এই বাক্যগুলো বোঝার চেষ্টা করলেই বাড়তি কোনো পরিশ্রম ছাড়া আরবি ভাষার কাঠামো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। ড. আব্দুল আজিজ হিসাব কষে দেখিয়েছেন, মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে তার পদ্ধতি অনুসরণ করলে মাত্র ২০০ ঘণ্টার মধ্যে পুরো কুরআনের অর্থ আয়ত্তে আনা যায়। কেউ যদি সপ্তাহে কুরআন শিক্ষার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা করে সময় বের করতে পারেন তাহলে এক বছরের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

কুরআন তেলাওয়াত করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি নাজিল হয় (মুসলিম শরিফ ১১৬৭)। রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের প্রতি আমি দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি জিনিস অঁাঁকড়ে ধরে রাখবে। এ দু’টি জিনিস হলো, আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার সুন্নাহ। (আবু দাউদ ৪৫৩৩)

আল কুরআন অনুধাবন করলে জাতি যেসব সুবিধা লাভ করতে পারে :
মুসলিম হিসেবে সমাজের অধিকাংশ মানুষ যদি আল কুরআন অনুধাবন করতো তবে তাদের মধ্যে এমন কতিপয় গুণাবলি অর্জিত হতো, যাতে তারা সৎ মানুষে পরিণত হতে পারতো। সুতরাং কুরআন অনুধাবন করা মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে সমাজ তত সুখী ও সমৃদ্ধ হবে। কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে সামাজিক যেসব উন্নয়ন সম্ভব তার কতিপয় দিক হলো :

১. মৌলিক সৎ গুণাবলি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে;
২. মৌলিক দোষ-ত্রুটি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা কমে আসবে;
৩. মদ, জুয়া, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই ও ধর্ষণের মত ভয়াবহ অন্যায় সমাজ থেকে হ্রাস পাবে;
৪. সমাজে সৎ ও ভালো ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়বে, ফলে ভোক্তাগণ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল, ওজনে কম দেয়া, মুনাফাখোরি, চোরাকারবারি, প্রতারণা ইত্যাদি থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবে;
৫. সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্র্রে জেঁকে বসা দুর্নীতি ও ঘুষ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পাবে। অফিস-আদালতে যে হয়রানি হচ্ছে সাধারণ মানুষ তা থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাবে;
৬. অসৎ টেন্ডারবাজির কারণে মানুষ আজ সরকারি যেসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং জনগণ উপকৃত হবে;
৭. রাজনীতির নামে আমাদের দেশে যেসব অনাচার এবং জনগণের অর্থ লুণ্ঠনের মহোৎসব চলে আসছে তা হ্রাস পাবে, ফলে জনগণ লাভবান হবে;
৮. সমাজ থেকে ভেজাল ও প্রতারণা কমলে মানুষের খাদ্যের মান উন্নত হবে, দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যবান ও কর্মক্ষম হবে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পাবে।
৯. দুর্নীতি কমলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো বেগবান হবে;
১০. মানুষের মধ্যে সামাজিক শান্তি ফিরে এলে তাদের হতাশা হ্রাস পাবে, ফলে তা মানুষকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে, সমাজ থেকে আত্মহত্যার পরিমাণ হ্রাস পাবে;
১১. শুধু মুসলিমরাই নয়, যদি কোন অমুসলমানও কুরআনের পার্থিব শৃঙ্খলা সম্পর্কিত নির্দেশনা মেনে চলে তবে তারাও এর কল্যাণ ও শান্তি ভোগ করবে।

কুরআন অনুধাবনে আমাদের করণীয়
আমরা সমাজের একজন মুসলিম নাগরিক হিসেবে, যার যার অবস্থান থেকে বাংলা ভাষায় কুরআন অনুধাবনের ক্ষেত্রে কী করতে পারি সে বিষয়ে কতিপয় সুপারিশমালা পেশ করা হলো।
১. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি ধারায় (সাধারণ, ইংরেজি মাধ্যম, কারিগরি ও মাদরাসা) প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ নম্বরের আল-কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং তাতে কুরআন পড়তে শেখা ও বুঝতে শেখার মত প্রয়োজনীয় বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা;
২. সরকারিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রত্যেক জুমার মসজিদে বড়দের জন্য কুরআন পড়া ও অনুধাবনের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রোগ্রাম চালু করা;
৩. বাংলাদেশের হিফজ মাদরাসাসমূহে কুরআন মুখস্থের পাশাপাশি ন্যূনতম কুরআন বুঝার মত কতিপয় কুরআনিক শব্দার্থ ও মৌলিক প্রয়োজনীয় আয়াতগুলোর অর্থ শেখানোর ব্যবস্থা চালু করা;
৪. দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে এবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে ন্যূনতম শরহে বেকায়া শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ নম্বরের বাংলাভাষা চালু করা। ভালো বাংলা বুঝতে পারলে তা কুরআন অনুধাবনে সহায়তা করবে।
৫. কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণের বিভিন্ন দিক দেশের প্রচার মিডিয়ায় ইতিবাচকভাবে প্রচার করা;
৬. কুরআন পড়ি ও কুরআন বুঝি শ্লোগানে দেশকে মুখরিত করা;
৭. পরিবারের একজন সদস্যও যদি এমন থাকেন যিনি কুরআন পড়তে ও বাংলা অর্থ পড়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতিদিন অন্যদের নিয়ে আধা ঘণ্টার এমন একটি বৈঠক করা যেখানে ২/৩টি আয়াত পড়ে তার বাংলা অর্থ সকলকে বুঝিয়ে দেয়া যায়;
৮. সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে তাফসির লেখা ও প্রকাশ করার চেষ্টা করা, মানুষের পকেটে বহনযোগ্য স্ব-স্ব তাফসির মুদ্রণ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা;
৯. মসজিদের ইমাম সাহেবদের কুরআনকেন্দ্রিক ধারাবাহিক আলোচনার আয়োজন করা, জুমার খুতবার মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা যথাযথভাবে তুলে ধরা;
১০. প্রত্যেকটি জুমার মসজিদে একটি করে তাক রাখা এবং তাতে কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা সংবলিত পর্যাপ্ত তাফসির রাখার ব্যবস্থা করা;
১১. কুরআনের ব্যাপারে যারা আন্তরিক তাদেরকে কুরআনের যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদেরকে অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যাতে অন্যরা কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

আল কুরআন প্রজ্ঞাময় ও হিকমাহপূর্ণ
কুরআন হলো জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তরের উপলব্ধি যার জন্য রাসূল (সা)কে পাঠানো হয়েছে এবং এর ব্যবহারিক দিকের দয়া, রাহমাহ ও সৌন্দর্য আমরা রাসূল (সা) এর যুগ থেকে সোনালি যুগের ইতিহাসে দেখতে পাই। সুবহানাল্লাহ!! আল্লাহর এতো এতো দয়া (সূরা আর রাহমান ১-২) যে তিনি একে প্রজ্ঞাময় কুরআন (সূরা ইয়াসিন ২) করে দিয়ে আমাদের চিন্তার, গবেষণার (সূরা মুহাম্মাদ) এবং এর থেকে সর্বোচ্চ উপকারের বাণী নাজিল করেছেন।
আর এ কুরআনের সর্বোচ্চ হিকমাহর উপকারিতা পাওয়ার জন্য আল্লাহ পথও দেখিয়ে দিয়েছেন চিন্তার লেভেলের বিভিন্ন মাধ্যমে। সেগুলো:

১. তাজাক্কুর-চিন্তা-ভাবনা করা।
২. আকল খাটানো- সহজাত (ফিতরাত) সত্য-মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধি।
৩. ফিকর করা- চিন্তাকে আরো গভীরে নিয়ে যাওয়া।
৪. তাদাব্বুর করা- সর্বোচ্চ লেভেলের চিন্তা-গবেষণা করা যা প্রজ্ঞার কাছে নিয়ে যাবে।

এভাবে সমস্ত কুরআন জুড়েই শত শত আয়াতের শেষেই পাবেন আল্লাহ বিভিন্ন চিন্তাসূচক শব্দের মাধ্যমে আমাদের চিন্তাধারাকে শাণিত করে উপলব্ধির জন্য আহবান জানাচ্ছেন। লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন তা’কিলুন, তাজাক্কারুন, তাফাক্কারুন শব্দগুলো প্রায় প্রত্যেক বড় বড় সূরাতেই আছে।
“তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” (সূরা মুহাম্মাদ : ৩৩)
হজরত উমর (রা)-এর সূরা বাকারাহ শেষ করতে ৩ বছর লাগার কারণ কী? চিন্তা, ফিকির, গভীরতর চিন্তা ও গবেষণা এবং প্রাজ্ঞতার উপলব্ধির মাধ্যমে আমল। তাঁরা কুরআন বুঝতে এসেছিলেন আল্লাহর শর্তকে সামনে নিয়ে। এজন্য সেই যুগ সোনালি যুগ ছিল সর্বোচ্চ শান্তি ও উন্নতির যুগ।

কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করার বা বিমুখ হওয়ার পরিণতি:

মানুষকে হেদায়েতের জন্য কুরআন মজিদের জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা ছাড়া হেদায়েত ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান কোন দিকনির্দেশনা নেই। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত কুরআন থেকে আলো গ্রহণ করতে হবে, দিকনির্দেশনা গ্রহণ করতে হবে ও হেদায়েত গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (সা) সম্বোধন করে বলছেন যে অবস্থায় থাকেন, যেখান থেকে পারেন, কুরআন পড়েন। কুরআনের মর্যাদা যদি আমরা বুঝতাম তাহলে বিশ্বের মুসলিমরা আজ লাঞ্ছিত হতাম না। আমরা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছি। কুরআন থেকে যারা বিমুখ হয় তারা চারটি বিপদে পড়বে। তিনটি আখিরাতে আর একটি দুনিয়াতে।

১. রাসূল (সা) নিজে অভিযোগ পেশ বা নালিশ করবেন: কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তাআলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী (সা) তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবেন। কুরআনে এসেছে : “আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।’ (সূরা আল-ফুরকান : ৩০) ইবন কাসীর বলেন, কুরআন না পড়া, তা অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়েত গ্রহণ না করা, এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল।

২. কুরআন আমাদের বিপক্ষে দলিল হিসেবে আসবে : কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসেবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেছেন : “কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলিল।” (সহীহ মুসলিম : ৩২৮)

৩. সরাসরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন: তোমাদের মধ্যে যে ৬০ বছর, ৭০ বছর, ৮০ বছর বয়স পেয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেছে এবং বিভিন্ন লেখকের বই পড়েছে কিন্তু কুরআন কতটুকু পড়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে এবং তোমার প্রভুর শপথ আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।” (সূরা আল হিজর : ৯১-৯২)

৪. কুরআন থেকে যে বিমুখ পৃথিবীতে তার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ: আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি রহমানের জিকির বা কুরআন থেকে বিমুখ হয়ে জীবন যাপন করবে আমরা তার পেছনে নিয়োগ করে দেই একটা শয়তান, সে হয়ে যায় তার সঙ্গী। এই শয়তানেরাই মানুষকে বাধা দিয়ে রাখে আল্লাহর পথ থেকে। অথচ তারা মনে করে তারা সঠিক পথে আছে।” (সূরা আয্ যুখরুফ : ৩৬-৩৭)

আমরা কুরআন থেকে বিমুখ কিনা সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা করলে বুঝতে পারবো:

কুরআনের শিক্ষা চর্চা: কুরআন নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সবসময় চর্চা বা গবেষণায় থাকতে হবে। হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা) বলেন- তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে তা শিক্ষা দেয়।
কুরআন তেলাওয়াতে চর্চা করা: কুরআন তেলাওয়াত আলাদা একটি ইবাদত। সবচেয়ে বড় জিকির হলো কুরআন তেলাওয়াত। আবু দাউদের সহীহ হাদিস, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাসূল (সা) কে প্রশ্ন করলেন আমাকে প্রতিদিন কতটুকু কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। রাসূল (সা) বললেন, কমপক্ষে ১ মাসে ১ বার কুরআন খতম দিতে হবে। সে বলল, আমি তার চেয়ে কম সময়ে পারি তাহলে ২০ দিনে পড়, তার পর ৭ দিনে পড়, ৩ দিনে পড়। সাহাবায়ে কিরাম প্রতি সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাজ্জুদের নামাজে প্রতি রাকাতে তিন পারা কুরআন তেলাওয়াত করতেন। সূরা বাকারায় ৫২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব।”

কুরআন গবেষণার চর্চা করা: কুরআন নিয়ে গবেষণা করলে হেদায়েত পাওয়া যায়। দুনিয়ায় অনেক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন কিন্তু কুরআন নিয়ে গবেষণা করা হয় না।
কুরআন শুনার চর্চা করতে হবে: রাসূল (সা) প্রতি রমজানে একবার করে কুরআন শুনতেন এবং শুনাতেন এবং সাহাবীরাও তার করতেন। “যখন কুরআন তেলাওয়াত হয় তখন তোমরা মনোযোগসহ তা শোনো এবং চুপ থাক যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।” (সূরা আরাফ : ২০৪)
কুরআনের পরিপূর্ণ বিধান জীবনে সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের চর্চা করা: কুরআনের পরিপূর্ণ বিধান জীবনে সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে চেষ্টা করা, লেগে থাকা। বাস্তবায়নের চেষ্টা আমার মাঝে আছে কিনা চিন্তা করা।
কুরআন দিয়ে দাওয়াত দেয়ার চর্চা করা: সকল নবী-রাসূল আল্লাহর বিধানের দাওয়াত দিয়েছেন।
কুরআন দিয়ে চিকিৎসার চর্চা করা: তিরমিজির হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা) একবার নামাজ পড়ছিলেন এমন সময় হাতের আঙ্গুলে বিচ্ছু কামড় দিল, তখন বাটিতে পানি আনলেন এবং লবণ দিলেন তা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে হাত পানিতে দিলে তিনি সুস্থ হলেন।

সমাপনী:

পবিত্র কুরআন হচ্ছে আল্লাহর এক মহা-নেয়ামত, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের একমাত্র সহায়ক হাতিয়ার, ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর করার মাধ্যম, স্রষ্টার সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ, মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শক, পথের দিশা, পুঞ্জীভূত সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ সম্পদ, রোগাক্রান্ত অন্তরের আরোগ্যকারী, শয়তানের বিরুদ্ধে সবচাইতে শক্তিশালী মিত্র, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী। বদিউজ্জামান সাইদ নুরসী বলেন, demonstrate and prove to the world that the Qur’an is an undying and inextinguishable sun.”
কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,

কুরআন হাদিস রহিল পড়িয়া,
দৃষ্টি দিলে না তাই
মুসলিম ব’লে কর ফখর!
মোনাফেক তুমি সেরা বে-দীন!
ইসলামে যারা করে জবেহ্,
অন্য জায়গায় কবি বলেন,
শক্তি সিন্ধু মাঝে রহি হায় শক্তি পেল না যে,
মরিবার বহু পূর্বে জানিও মরিয়া গিয়াছে সে।
তুমি তাহাদেরি হও তাবে।
তুমি জুতো-বওয়া তারি অধীন।

লেখক :সেক্রেটারী জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির