بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ عَنِ وَالَّذِينَ هُمْ (2) الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ (1) قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ (5)وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (4)وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ (3) اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ (6) إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (8) وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ (7) ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ (10) أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ (9) وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ (11) الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خ

সরল অনুবাদ : ১) নিশ্চিত ভাবেই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা। ২) যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী ও নম্র। ৩) যারা বাজে বা বেহুদা কথা ও কাজ থেকে দুরে থাকে। ৪) যারা তাজকিয়া বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়। ৫) এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। ৬) তবে তাদের স্ত্রীদের ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। ৭) তবে যদি কেউ তাদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌন ক্ষুধা মেটাবার জন্য) কামনা করে তবে তারা হবে সীমালংঘনকারী। ৮) এবং যারা তাদের আমানতসমূহ এবং ওয়াদাচুক্তির (অঙ্গীকার) রক্ষনাবেক্ষন করে। ৯) এবং যারা তাদের নামাযসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষন করে। ১০) তারাই (এসব গুনের অধিকারী) উত্তরাধিকার লাভ করবে ১১) তারা উত্তরাদিকার হিসাবে ফিরদাউস পাবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।

নামকরন :
সুরার নামকরন দুই ভাবে হয়ে থাকে-
১. বহুল আলোচিত শব্দ (শব্দ ভিত্তিক) নাস, ফালাক 
২. বিষয়ভিত্তিক - সুরা ফাতেহা, ইখলাস
এ সুরাটি ১ম আয়াতের আল মুমিনুন শব্দ থেকে নামকরন করা হয়েছে।

নাযিলের সময়কাল/ শানে নুযুল :
সুরার বর্ণনাভঙ্গি ও বিষয়বস্তুর উৎস হতে এটি প্রমাণিত হয় যে, এটি নবী (সা:) এর মাক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময়ে নাযিল হয়েছে।
প্রেক্ষাপটে এ কথা স্পষ্ট যে,
এ সময় নবী (সা:) ও কাফেরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল কিন্তু তখনও অত্যাচার চরমে পৌঁছেনি।
(৭৫-৭৬) আয়াত মক্কায় দুর্ভিক্ষের সময় মাক্কী যুগের মধ্যভাগে নাযিল হয়।
উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা:) বলেন, এ সুরাটি নাযিল হবার পূর্বেই উমর (রা:) ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আবদুর রহমান ইবনে আব্দুল কারীর বরাত দিয়ে হযরত উমর (রা:) থেকে এ উক্তি উদ্বৃত্ত করেন। উমর (রা:) বলেন- ‘একদিন ওহীর বিশেষ অবস্থা (মৌমাছির ন্যায় গুঞ্জনের) লক্ষ্য করে ওহী শোনার জন্য থেমে গেলাম। ওহীর অবস্থা কেটে গেলে রাসূল (সা:) বলেল এক্ষনে দশটি আয়াত নাজিল হয়েছে। যদি কেউ এ আয়াতগুলি পুরোপুরি পালন করে সে সোজা জান্নাত যাবে। অতপর তিনি উপরোল্লিখিত দশটি আয়াত পাঠ করে শোনান।

বিষয়বস্ত ও আলোচ্য বিষয় : 
এই সুরাটির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে রাসূল (সা:) এর আনুগত্য।
তিলাওয়াতকৃত ১১টি আয়াতের মূল বিষয়বস্তু হলো, যেসব লোক এই নবীর কথা মেনে নেবে, তাদের মধ্যে এসবগুন সৃষ্টি হবে আর নি:সন্দেহে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভ করবে। ইমাম নাসাঈ তার কিতাবের তাফসীর অধ্যায়ে ইয়াজীদ ইবনে কাবনুস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি হযরত আয়েশা (রা:) কে প্রশ্ন করেছিলেন : রাসূল (সা:) এর চরিত্র কেমন ছিল? তিনি বলেন, তার চরিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে। অত:পর তিনি এই দশটি আয়াত তেলাওয়াত করে শোনান। এবং বলেন এসব ছিল রাসূল (সা:) এর চরিত্র।
পটভূমি ঃ অত্র সুরা বিশেষ করে তেলাওয়াতকৃত আয়াতগুলো নাজিলের মক্কার কাফেররা যেমন ছিল ইসলামের চরম বিরোধী তেমনি পার্থিব উপকরণ সব ছিল তাদের হাতের মুঠোয় (বাণিজ্য)। অপরদিকে মুসলমানদের অবস্থা ছিল শোচনীয়। (আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানগত)

এই অবস্থায় কাফেররা নিজেদের অধিক সফল এবং মুসলমানদের ব্যর্থ মনে করত। তখন মুমিনদের প্রকৃত সফলতার ঘোষণা দিয়ে এ আয়াতগুলি নাজিল করেন।
প্রকৃত সফলতার অর্থ : তাফসীর কারকগণ ব্যাখ্যা করেছেন কোন একটি সুন্দর দালানে এক ব্যক্তি ৫দিন থাকতে পারবে এবং যদি কুড়েঘরে থাকে তবে সারাজীবন থাকতে পারবে- এক্ষেত্রে একজন বুদ্ধিমান কোনটি বেছে নেবে।
অথচ আখেরাতে চিরজীবনের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :  
অর্থ- নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মুমিনরা।
এখানে মুমিন বলতে তারা যারা রাসূল (সা:) এর উপর ঈমান এনে তার আনীত বিধান মেনে নিয়েছে এবং তার দেখানো জীবনপদ্ধতি অনুসরন করেছে।
“নিশ্চিতভাবেই সফলতা লাভ।”
দিয়ে বাক্য শুরু করার তাৎপর্য বুঝতে হলে নাজিলের পরিবেশকে সম্মুখে ব্যাখ্যা দরকার।
১) কাফিরদের ইসলাম বিরোধীতা।
২) সামাজিক ও আর্থিক উন্নতি।
৩) মুসলমানদের সামাজিক ও আর্থিক পশ্চাদপদতা।

 আল্লাহ যখন এই মুসলমানদেরই সফল বললেন তখন বোঝা যায় আল্লাহর নিকট সফলতার মানদন্ড ঈমান অর্থ নয়। প্রকৃত সাফল্য আখেরাত। (পূর্ব দ্রষ্টব্য)
আল কোরআনে সাফল্য অর্থ : যে নিজেকে পাপ থেকে পবিত্র রেখেছে সেই সফল।
সফলতা লাভের জায়গা আখেরাত-
অর্থাৎ (হে মানুষ) তোমরা দুনিয়াকেই পরকালের উপর অগ্রাধিকার দিচ্ছ। অথচ দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের জীবন অতি উত্তম এবং স্থায়ী।
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তায়লা সেসব মুমিনকে সাফল্য দান করার ওয়াদা করেছেন। যারা আয়াতে উল্লিখিত সাতটি গুনে গুনান্বিত। পরকালের পূর্ণাঙ্গ সাফল্য এবং দুনিয়ার সম্ভাব্য সাফল্য সবই এই ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত।
মুমিনদের সাতটি গুন ঃ সর্বপ্রথম গুন হলো ঈমানদার হওয়া। কিন্তু এটা একটা বুনিয়াদী ও মৌলিক বিষয় বিধায় এটাকে এই সাতটি গুনের মধ্যে শামিল না করে পর পর সাতটি গুন বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথম গুন : অর্থ্যাৎ ‘যারা তাদের নামাযে বিনয়ী নম্র।”

নামাযে খুশু বলতে বিনয় ও নম্র হওয়া বুঝায়। খশুর আভিধানিক অর্থ স্থিরতা। শরীয়তের পরিভাষায় এর মানে অন্তরে স্থিরতা থাকা। অর্থ্যাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর কল্পনা অন্তরে ইচ্ছাকৃত ভাবে না করা এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা।

দিলের খুশু হয় তখন যখন কারো ভয়ে বা দাপটে দিল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। আর দেহের খুশু এভাবে প্রকাশ পায় যে, কারো সামনে গেলে তার মাথা নিচু হয়ে যায়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়ে পড়ে চোখের দৃষ্টি নত হয়ে আসে, গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে যায়।
হাদীসে হযরত আবু যার (রা:) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা:) বলেন- নামাযের সময় আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ না নামাযী অন্যদিকে ভ্রুক্ষেপ করে। যখন সে অন্যকোন দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তার দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। (নাসায়ী) (আবু দাউদ)

করীয়তে বর্ণিত নামাযের নিয়ম নীতি নামাযে খুশু পয়দা করতে সাহায্য করে।

 যেসব কাজে নামাযে খুশু সৃষ্টিতে বাধা দেয় : 
(১) নামাযের মধ্যে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে খেলা করা বা নাড়াচাড়া করা।
হাদীস- একবার নবী (সা:) এক ব্যক্তিকে নামাযের মধ্যে মুখের দাড়ী নিয়ে খেলা করতে দেখে বললেন- “যদি এ লোকটির দিলে খুশু থাকত তাহলে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের উপরও খুশু থাকত। (বায়হাকী)
(২) নামাযে এদিক ওদিক তাকালে নামাযে একগ্রতা বা খুশু নষ্ট হয়ে যায়। এ সম্পর্কে নবী (সা:) বলেন- এটা নামাযীর (মনোযোগের) উপর শয়তানের থাবা।
(৩) নামাযে ছাদ বা আকাশের দিকে তাকালে নামাযের খুশু নষ্ট হয়ে যায়। নবী করিম (সা:) বলেন- লোকেরা যেন নামাযে তাদের চোখকে আকাশমুখী না করে। (কেননা তাদের চোখ) তাদের দিকে ফিরে নাও আসতে পারে।
(৪) নামাযে হেলা-ফেলা করা ও নানাদিকে ঝুকে পড়া।
(৫) সিজদায় যাবার সময় বসার জায়গা বা সিজদার জায়গা বার বার পরিস্কার করলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। (তবে ক্ষতিকারক হলে একবার সরানো যাবে)
মহানবী (সা:) বলেন- কোন ব্যক্তি যেন নামাযের অবস্থায় (সিজদার জায়গা হতে) কংকর না সরায়। কেননা আল্লাহর রহমত নামাযী ব্যক্তির উপর প্রসারিত হয়। (আহমেদ, নাসায়ী, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ)
(৬) একটানা গর্দান খাড়া করে দাড়ানো এবং খুব কর্কশ স্বরে কোরআন পড়া কিংবা গীতের স্বরে কুরআন পাঠ।
(৭) জোরে জোরে হাই এবং ঢেকুর তোলা। ইচ্ছা করে গলা খেকরা বা কাশি দিলে নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়।
রাসূল (সা:) বলেন- নামাযে হাই ওঠে শয়তানের প্রভাব থেকে যদি কারো হাই ওঠে তার উচিত সে যেন সাধ্যমতো হাই প্রতিরোধ করে। (মুসলিম, তিরমিযী)
(৮) তাড়াহুড়ো করে নামায আদায় করা। নামাযে রুকু সিজদা কিয়াম সঠিক ভাবে আদায় না করা।
নবী (সা:) বলেন- মদখোর, ব্যভিচারী ও চুরি করা কবীরা গুনাহ এবং তার সাজাও খুব তবে সবচেয়ে জঘন্য চুরি হলো সেই যে ব্যক্তি নামাযে চুরি করে। সাহাবীরা বললেন নামাযে কিভাবে চুরি হয়। রাসূল (সা:) বললেন নামাযে রুকু ও সিজদা ঠিকমতো না করা। (মালেক, আহমেদ, দারেমী)
(৯) নামাযীর সামনে পর্দায় কোন ছবি থাকলে নামাযে খুশু বা একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়।

নামাযে খুশু সৃষ্টির জন্য যা করতে হবে :
(১) আল্লাহ তায়ালাকে সবসময় হাজির নাজির জানা।
হাদীসে জীবরীলে ইহসান সম্পর্কে মহানবী (সা:) কে রাসূল (সা:) প্রশ্ন করলে তার প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে (নামাযে) যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তোমার পক্ষে এটা সম্ভব না হয়। তবে তুমি অবশ্যই মনে করে নেবে যে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।
(২) নামাযে পঠিত দোয়া, কালাম অন্তর থেকে পড়া।
(৩) নামাযে খুশু সৃষ্টি করার জন্য নামাযীর দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে।
(৪) নামাযে একাগ্রতা সৃষ্টির জন্য নামাযে যা পড়া হয় তার অর্থ জানা।

দ্বিতীয় গুন :
‘যারা বেহুদা কাজ ও কথা থেকে দুরে থাকা 
বলা হয় এমন প্রতিটি কাজ এবং কথাকে যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন ও নিস্ফল। যেসব কথা এবং কাজের কোনই ফল নেই।
“এর অর্থ উচ্চস্তরের গুনাহ যাতে ধর্মীয় উপকার তো নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান।
রাসূল (সা:) বলেন- মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে তখন ইসলাম সৌন্দর্যমন্ডিত হয়। আল্লাহ বলেন-
অর্থ্যাৎ- “যখন এমন কোন জায়গা দিয়ে তারা চলে যেখানে বাজে কথা হতে থাকে অথবা বাজে কাজের মহড়া চলে তখন তারা ভদ্রভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে চলে যায়। (আল ফুরকান-৭২)

মুমিনের মাঝে সবসময় দায়িত্বনুভুতি জাগ্রত থাকে। 
তার কাছে দুনিয়াটা পরীক্ষাগার। পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ে সবকিছু করতে হয়। 
ফুটবল, ক্রিকেট খেলা দেখায় পার্থিব বা আখেরাতের কোন কল্যাণ নেই।

তৃতীয় গুন :
“যারা যাকাত বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়।
যাকাত দেয়া বা যাকাতের পথে কর্মতৎপর সক্রিয় হওয়ার মধ্যে অর্থের দিক দিয়ে বিকট পার্থক্য বিদ্যমান।

মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে কুরআনের বিশেষ ধরনের অর্থের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটা বলার পেছনে তাৎপর্য
আরবী ভাষায় যাকাত শব্দের দুটি অর্থ বিদ্যমান
১. পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা, পরিশুদ্ধি।
২. বিকাশ সাধনঃ কোন জিনিসের সাধনে যেসব জিনিস প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায় সেসব দুর করা এবং তার মৌলবস্তুকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করা।
এই দুটি ধারনা মিলিয়ে যাকাতের পরিপূর্ণ ধারনা সৃষ্টি হয়। তারপর এই শব্দটি, ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত হলে এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়-
১) এমন সম্পদ যা পরিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বের করা হয়।
২) বিশুদ্ধ করার মূল কাজটি-
-- যদি বলা হয় পবিত্রতা তবে এর অর্থ হবে তারা সম্পদ পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে সম্পদের একটি অংশ নেয়া।
-- কিন্তু যদি বলা হয় বিকাশ সাধন তবে তার অর্থ হবে তারা পবিত্রতা, পরিশুদ্ধতা তাযকিয়ার কাজ করছে। এ অবস্থায় ব্যাপারটি শুধুমাত্র আর্থিক যাকাত আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং এর অর্থ ব্যাপক হবে। যেমন :
আত্মার পরিশুদ্ধি 
চরিত্রের পরিশুদ্ধি 
জীবনের পরিশুদ্ধি
তার পারিবারিক পরিশুদ্ধি
সে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধি।
অর্থের পরিশুদ্ধি।
উপরোক্ত প্রত্যেকটি দিকের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত এর ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়বে। এছাড়া এর অর্থ কেবল নিজেরই জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। না বরং নিজের চারপাশের জীবনের পরিশুদ্ধি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়বে।
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
অর্থ্যাৎ কল্যাণ ও সফলতা লাভ করল সে, যে পবিত্রতার কাজ করলো এবং নিজের রবের নাম স্মরণ করে নামায পড়লো। (সুরা আ’লা)
আল্লাহ বলেন-
সফলকাম হলো সে, যে নিজের নফসকে পবিত্র বা তাযকিয়া করলো। আর ব্যর্থ হলো সে যে নিজেকে কলুষিত করল।
এ আয়াতে গোটা সমাজ জীবনের কথা বলা হয়েছে।

চতুর্থ গুণ :
অর্থ : এবং যারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করেন। তবে তাদের স্ত্রীদের এবং মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না করলে তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে কেউ যদি এদের ছাড়া অন্য কাউকে কামনা তবে এক্ষেত্রে তারা হবে সীমালংঘনকারী।
লজ্জাস্থান হেফাজত করার দুটি অর্থ হতে পারে।
১. নিজের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা।
২. যৌন শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগামহীন হয় না।
এটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। “লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” বাক্য থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করার জন্য।
লজ্জাস্থানের সাধারণ হুকুম থেকে দু’ধরনের লোককে বাদ দেয়া হয়েছে।
১. স্ত্রী শব্দটি আরবী ভাষায় পরিচিত ব্যবহার এবং কুরআনের ষ্পষ্ট বক্তব্য অনুযায়ী যেসব নারীকে
২. বলতে এমন বাদী যার উপর মানুষের মালিকানা অধিকার আছে। সুতরাং মালিকানাধীন দাসীদের যৌনসম্পর্ক বৈধ এবং বৈধতার ভিত্তি বিয়ে নয়। কারণ এখানে স্ত্রী ও দাসী আলাদা ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ বাক্যটি উপরোক্ত দুটি পন্থা ছাড়া কামনা চরিতার্থ করার যাবতীয় পথ অবৈধ করেছে। হারাম উপায়গুলি-
যিনা যেমন হারাম তেমনি হারাম নারীকে বিয়ে করাও যিনার মধ্যে গণ্য।
স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে হায়েজ-নেফাস অবস্থায় কিংবা অস্বাভাবিক পন্থায় সহবাস হারাম।
পুরুষ, বালক বা জীবজন্তুর সাথে কামনা চরিতার্থ করা হারাম।
অধিকাংশ তাফসীরবিদগণের মতে হস্তমৈথুন এর অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল - বই পড়া, ছবি দেখা।
উপরোক্ত সবকিছুই সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য হবে।

৫ম ও ৬ষ্ঠ গুন :
অর্থ : যারা তাদের আমানতসমূহ এবং ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
আমানত প্রত্যাপর্ন করা ঃ আমানত শব্দের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। আভিধানিক অর্থে এমন একটি বিষয় শামিল যার দায়িত্ব কোন ব্যক্তি বহন করে এবং সে বিষয়ে কোন ব্যক্তির উপর আস্থা রাখা যায় ও ভরসা করা যায়। বিধায় আমানত শব্দটি বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত।
দু’ধরনের আমানত সংক্রান্ত কথা-
১) হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক্
২) হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক।
১) হক্কুল্লাহ : 
শরীয়ত আরোপিত সকল ফরজ ও ওয়াজিব পালন করা এবং যাবতীয় হরারম ও মাকরুহ বিষয় থেকে দুরে থাকা। 
মানুষ আল্লাহর খলিফা। খিলাফতের দায়ি্ত্ব পালনের আমানত রক্ষা করা।
২) হক্কুল ইবাদ : 
কোন ব্যক্তি বা সংগঠন কর্তৃক আরোপিত ধনসম্পদের আমানত। 
গোপন কথার আমানত 
মজুর, শ্রমিক ও চাকরীজীবীদের জন্য যে কার্য সময় নির্ধারন করে দেয়া হয় তা পালন 
দায় দায়িত্বের আমানত। সংগঠন, ব্যক্তি, রাষ্ট্র, পরিবার পরিচালক হিসেবে। 
গণতান্ত্রিক দেশে ভোটারদের ভোট আমানত।
রাসুল (সা:) বলেন - “তার ঈমান নেই যার আমানতদারী নেই।”
তাছাড়া মোনাফেকের যে চারটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১) কোন আমানত তার কাছে সোপর্দ করা হলে সে তার খেয়ানত করে।
অঙ্গীকার পূর্ণ করা ঃ অঙ্গীকার বলতে প্রথমত, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বুঝায় যা কোন ব্যাপারে উভয়পক্ষ অপরিহার্য করে নেয়। এরুপ চুক্তি পূর্ণ করা ফরজ।
দ্বিতীয় প্রকার অঙ্গীকারকে ওয়াদা বলা হয় অর্থ্যাৎ এক তরফাভাবে একজন অন্যজনকে কিছু দেয়ার বা কোন কাজ করে দেয়ার অঙ্গীকার করা।
হাদীসে আছে,
“ওয়াদাও এক প্রকার কসম”

সপ্তম গুন :
“যারা তাদের নামায সমূহকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে।
এখানে পাচওয়াক্ত নামায মুস্তাহাব বা আউয়াল ওয়াক্তে যথাযথভাবে পাবন্দী সহকারে আদায় করা বুঝায়।
এখানে নামায সমূহের সংরক্ষণ বলতে নামাযের বাইরের এবং ভেতরের যাবতীয় নিয়মনীতি যথাযথভাবে পালন করা। অর্থ্যাৎ আরকান-আহকাম পালন।
১. শরীর, পোশাক, পরিচ্ছদ পাক পবিত্র।
২. সময়মত নামায।
৩. অযু ঠিকভাবে করে নামায আদায়।
৪. জামায়াতের সাথে নামায।
৫. শুদ্ধ, ধীরস্থিরভাবে দোয়া কালাম পাঠ করা।
৬. নামায প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নামাযের হেফাজত করা।
৭. এহসানের সাথে নামায আদায়।
কোরআনে, “নামায নিশ্চয়ই মানুষকে অশ্লীল, অপকর্ম থেকে বিরত রাখে।”
আয়াত : ১০-১১
অর্থ : তারাই (এসবগুনের অধিকারীকেই) উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা উত্তরাধিকার হিসেবে ফেরদাউস পাবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।
এখানে উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে এজন্য যে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারদের নিশ্চিত প্রাপ্য। এবং গুনের অধিকারীদেরও জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত।
সফলকাম ব্যক্তিদের গুনাবলী পুরোপুরি উল্লেখ করার পর এই বাক্যে আরও ইঙ্গিত আছে যে পূর্ণাঙ্গ সফল জান্নাতী ব্যক্তি।

ফিরদাউস  শব্দটি এসব ভাষায় এমন একটি বাগানের জন্য বলা হয়ে থাকে যার চারিদিকে পাচিল দেয়া থাকে। বাগানটি বিস্তৃত হয়। মানুষের আবাস গৃহের সাথে সংযুক্ত হয় এবং সব ধরনের ফল বিশেষ করে আঙ্গুর পাওয়া। কোন কোন ভাষায় এর অর্থের মধ্যে এ কথাও বোঝায় যে এখানে বাছাই করা গৃহপালিত পশু পাখি পাওয়া যায়।
কুরআনে বিভিন্ন সমষ্টিকে ফিরদাউস বলা হয়েছে।
“তাদের আপ্যায়নের জন্য ফিরদৌসের বাগানগুলি আছে।”
এ থেকে মনের মধ্যে এ ধারনা জন্মে যে ফিরদৌস একটা বড় জায়গা, যেখানে অসংখ্য বাগ বাগিচা উদ্যান রয়েছে।

শিক্ষা : 
১) সফলতা নিছক ঈমানের ঘোষনা অথবা নিছক সৎ চরিত্র ও সৎকাজের ফল নয়। বরং উভয়ের সম্মিলনের ফল।
২) নিছক পার্থিব ও বৈষয়িক প্রাচুর্য ও সম্পদশালীতা এবং সীমিত সাফল্যের নাম সফলতা নয়। আখেরাতের স্থায়ী সাফল্যই প্রকৃত সাফল্য।
৩) খুশু খুযুর সাথে নামায আদায়।
৪) বাজে কথাও কাজে সময় নষ্ট না করা
৫) সর্ববস্থায় নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া।
৬) অবৈধ পন্থায় কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার চিন্তাও না করা।
৭) আমানতের হেফাজতের করা এবং অঙ্গীকার বা ওয়াদা যথাযথভাবে পালন করা।
৮) নামাযে পাবন্দী করা এবং প্রত্যেক নামায মোস্তাহব ওয়াক্তে আদায় করা।