বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচি ঘোষনা : গঠনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিবির দেশের ছাত্র সমাজের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান বলেছেন, শিবির তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আদর্শকে যথাযথভাবে লালন করে পথ চলছে। ছাত্র সমাজের মেধা-মননের বিকাশের লক্ষ্যে সবসময় যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ৩৯ বছরের পথ পরিক্রমায় শিবির তার গঠনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছাত্র সমাজের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে মাসিক সেক্রেটারীয়েট বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ সময় সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সেলিম উদ্দিন ও আবদুল জব্বারসহ কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীয়েট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৭ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে পথচলা শুরু করে একে একে ৩৯টি বছর পিছনে ফেলে এ সংগঠন রচনা করেছে এক গৌরবময় ইতিহাস। একটি গঠনমূলক গতিশীল সংগঠন হিসেবে, একটি একক ও অনন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে, মানুষ তৈরীর কারখানা হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জনতার মনে, লাখো তরুণের হৃদয়ে করে নিয়েছে তার স্থায়ী আসন। কালের বিবর্তনে আজ সে সংগঠন বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে, যার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী ও মুক্তিকামী ছাত্র-তরুণ। আলোকবর্তিকা হাতে অগ্রসরমান যে কাফেলাটি অতি দ্রুতই মেধাবী তরুণ-ছাত্রদের হৃদয়ের স্পন্দনে পরিণত হয়, তার নাম “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির”।

৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচি ঘোষণা:
৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপি বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সারা দেশে শাখা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালী;আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ এবং সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান;রচনা, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা; মেধাবী ও গরীব অসহায় ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ; পঙ্গু মেধাবী ছাত্রদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ; অনাথ ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ; শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ;মেধাবী ছাত্রদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ; ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন; পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এ কর্মসূচি চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

শিবির সভাপতি তার বক্তব্যে কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বস্তরের নেতা কর্মীর প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শের চর্চার লক্ষ্যেই এ দেশের ছাত্র রাজনীতিতে শিবিরের আবির্ভাব। শিবির তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আদর্শকে যথাযথভাবে লালন করে পথ চলার চেষ্টা করছে। ছাত্র সমাজের মেধা-মননের বিকাশের লক্ষ্যে সবসময় যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রদের যে কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সামনে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অতীতের গৌরবোজ্জল অবদান রাখা এ দেশের ছাত্র রাজনীতিতে কলুষতা প্রবেশ করলেও শিবির কলুষমুক্ত থেকে রাজনীতি পরিচালনা করছে। ৫২, ৭১ এর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শিবির ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জল ঐতিহ্যকে ধারণ করেই পথ চলছে।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করেছে আওয়ামী সরকার। দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতন এবং খুন-জখমের টার্গেটে পরিণত হয় শিবিরের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাড়িতে থাকা মা-বোনেরাও। শিক্ষাঙ্গনের পবিত্র পরিবেশ নস্যাতের লক্ষ্যে তাদের ছাত্রসংগঠন রক্তপিপাসু ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে তারা। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নিবার্চনকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের নতুন মাত্রা শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। যৌথ বাহিনীর নামে সাধারন ছাত্র জনতাকে গ্রেফতার করে হত্যা করে ক্রসফায়ার বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। শিবির ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে নতুন ধারা তৈরি করে যেভাবে পথ অতিক্রম করে চলছে তা স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলগুলোর সহ্য হয়নি। তারা শিবিরের পথচলায় পদে পদে বাঁধার প্রাচীর তৈরি করেছে। আদর্শিক রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে শিবিরের ২২৫ জন শহীদ হয়েছে। অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবুও শিবির প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেই পথচলা অব্যাহত রেখেছে। শিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার গোয়েবলসীয় রীতিকেও হার মানিয়েছে। নৈতিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলায় ব্যর্থ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা শিবিরের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডায় মেতে উঠেছে। শত মিথ্যাচার সত্ত্বেও আদর্শবাদী হিসেবেই শিবিরের পরিচিতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও শিবির নিধনে উঠে পড়ে লেগেছে। যেখানে শিবির দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনকে সত্যিকার বিদ্যাপীঠ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত রাখতে চাইছে সেখানে সরকার শিক্ষাঙ্গনকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের আঁখড়া বানানোর পাঁয়তারা করছে। যার ফলশ্রুতিতে ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে শিবির ও সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা-নির্যাতন করছে। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশকে বিনষ্ট করে তারা দেশের ভবিষ্যৎকেও অন্ধকার করে দিতে চাইছে।

শিবির সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, শিবির একমাত্র ছাত্র সংগঠন হিসেবে আদর্শের ধারক হিসেবেই কাজ করে চলবে। যে নৈতিক দৃঢ়তা নিয়ে আমরা পথ চলি সে পথ চলা অব্যাহত থাকবে। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে শিখিনি। অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই শিবিরের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ

সংশ্লিষ্ট