শুক্রবার, ০১ মে ২০১৫

ইসলামী রাষ্ট্রে শ্রমিকের অধিকার


রাসূল (সঃ) মজুরদের অধিকার সম্বন্ধে বলেন- “তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের দায়িত্ব তোমাদের উপর অর্পণ করেছেন। কাজেই আল্লাহ যাদের উপর এরূপ দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন তাদের কর্তব্য হলো তারা যে রকম খাবার খাবে তাদেরকেও সেরকম খাবার দেবে, তারা যা পরিধান করবে তাদেরকে তা পরাবার ব্যবস্থা করবে। যে কাজ করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ও সাধ্যাতীত তা করার জন্যে তাদেরকে কখনও বাধ্য করবে না। যদি সে কাজ তাদের দিয়েই করাতে হয় তাহলে সে জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য অবশ্যই করতে হবে।” (বুখারী)

অন্যত্র রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রমিকদের সম্পর্কে বলেছেন, “শ্রমিককে এমন কাজ করতে বাধ্য করা যাবেনা, যা তাদেরকে অক্ষম ও অকর্মণ্য বানিয়ে দেবে।” (তিরমিযী)

রাসূল সঃ আরও বলেছেন, “তাদের উপর ততখানি চাপ দেওয়া যেতে পারে, যতখানি তাদের সামর্থ্যে কুলায়। সাধ্যাতীত কোন কাজের নির্দেশ কিছুতেই দেওয়া যেতে পারে না।” (মুয়াত্তা, মুসলিম)

মজুরদের বেতন, উৎপাদিত পণ্যে তাদের অংশ ইত্যাদি সম্পর্কে নবীজী সঃ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন- “মজুরের মজুরী তার গায়ের ঘাম শুকাবার পূর্বেই পরিশোধ কর।” (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)

হাদীসে আরো এসেছে, “মজুরকে তার কাজ হতে অংশ দান কর। কারণ, আল্লাহর মজুরকে কিছুতেই বঞ্চিত করা যেতে পারে না।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল)

আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) এ সম্পর্কে কঠোর উক্তি করেছেন। হাদিসটি এ রকম- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবাদী হব। যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে, অতঃপর বিশ্বাসঘাতকতা করে, যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে এবং যে ব্যক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ করিয়ে নেয়, কিন্তু তার মজুরী দেয় না। (বুখারী, কিতাবুল বুয়ু, অধ্যায় ১০৬, নং ২২২৭)।


উপরোক্ত হাদীসসমূহ হতে যেসব মূলনীতি পাওয়া যায় সেগুলোই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রদর্শিত মানবিক শ্রমনীতি। সংক্ষেপে এগুলো হচ্ছে-

১। উদ্যোক্তা বা শিল্প মালিক মজুর-শ্রমিককে নিজের ভাইয়ের মতো মনে করবে। সহোদর ভাইয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এ ক্ষেত্রেও সে রকম সম্পর্ক থাকবে।

২। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি মৌলিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিক উভয়ের মান সমান হবে। মালিক যা খাবে ও পরবে শ্রমিককেও তাই খেতে ও পরতে দিতে হবে।

৩। সময় ও কাজ উভয় দিক দিয়েই শ্রমিকদের সাধ্য অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তার বেশী নয়। শ্রমিককে এত বেশী কাজ দেওয়া উচিৎ হবে না যাতে সে ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তাকে শ্রম দিতে বাধ্য করা যাবে না, যার ফলে সে অক্ষম হয়ে পড়ে। শ্রমিকের কাজের সময় নির্দিষ্ট হতে হবে এবং বিশ্রামের সুযোগ থাকতে হবে।

৪। যে শ্রমিকের পক্ষে একটি কাজ করা অসাধ্য তা তাকে দিয়েই সম্পন্ন করতে হবে, এমন কথা ইসলাম বলে না। বরং সে ক্ষেত্রে আরও বেশী সময় দিয়ে বা বেশী শ্রমিক নিয়োগ করে তা সম্পন্ন করা যেতে পারে।

৫। শ্রমিকদের বেতন শুধুমাত্র তাদের জীবন রক্ষার জন্যে যথেষ্ট হলে হবেনা। তাদের স্বাস্থ্য, শক্তি ও সজীবতা রক্ষার জন্যে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ব্যায়ের ভিত্তিতেই বেতন নির্ধারণ করতে হবে।

৬। অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করা যেতে পারে। এটা ইসলামী অর্থনীতির একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে উৎপন্ন দ্রব্যের অংশবিশেষ বা লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকরা পেয়ে থাকেন। এটা ছাড়াও শ্রমিকদের কে তাদের কাজের বা উৎপাদনের মধ্য থেকে কিছু অংশ দান করার জন্যও রাসূল (সঃ) বলেছেন।

৭। শ্রমিকদের কাজে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে তাদের প্রতি অমানুষিক আচরণ বা নির্যাতন করা চলবে না। বরং যথাযথ সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করতে হবে।

৮। চুক্তিমত কাজ শেষ হলে অথবা নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে শ্রমিককে দ্রুত মজুরী বা বেতন পরিশোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন ওজর-আপত্তি বা গাফলতি করা চলবে না।

৯। পেশা বা কাজ নির্বাচন করার ও মজুরীর পরিমাণ বা হার নির্ধারণ সম্পর্কেও দর-দস্তর করার পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার শ্রমিকের রয়েছে। বিশেষ কোন কাজে বা মজুরীর বিশেষ কোন পরিমাণের বিনিময়ে কাজ করতে জবরদস্তি করা যাবে না।

১০। কোন অবস্থাতেই মজুরদের অসহায় করে ছেড়ে দেয়া চলবে না। তারা অক্ষম ও বৃদ্ধ হয়ে পড়লে পেনশন বা ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সরকারী কোষাগার ব্যবহৃত হতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট