মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪

হাদীসের মৌলিক জ্ঞান-২

হাদীস সংকলনঃ-

রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায়ঃ
ঐতিহাসিক বালাযুরির মতে রাসূল (সাঃ)-এর নবূয়াতি জীবনে তখন মক্কায় শিক্ষিত লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ জন। এমতাবস্থায় রাসূল (সাঃ) যখন প্রেরীত হন তখন তাঁর সামনে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ন কাজ ছিল,ক্রমাগতভাবে নাজিল হওয়া কুরআন এমনভাবে সংরক্ষণ করা যাতে এর মধ্যে কোন জিনিসের সংমিশ্রণ না ঘটে । এজন্য তিনি এই মর্মে নির্দেশ দেন-
হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন-“তোমরা আমার কোন কথা লিখনা । কেউ যদি কুরআন ছাড়া আমার কথা লিখে থাকে সে যেন তা মুছে ফেলে” ।

হাদীস লেখার সাধারণ অনুমতিঃ
রাসূল (সাঃ) মদীনায় পৌঁছার অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সাহাবী এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখার ব্যবস্থার ফলে রাসূল (সাঃ) সুন্নাহ শেখার অনুমতি দেন।

এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন-
১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আল-আস (রাঃ) (লিখনির মাধ্যমে)
২. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) (মুখস্ত করার মাধ্যমে) (৫৩৭৪ টি হাদীস )
৩. আব্দুল্লাহ ইবনুল আব্বাস (রাঃ)
৪. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)
৫. যাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রাঃ)
৬. উম্মুল মুমিনীন আয়শা (রাঃ) (২২০০ টি হাদীস )

রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পরঃ খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলঃ
* প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর (রাঃ) এর আমলে সুন্নাহ সংগ্রহ ও সংকলনের সরকারী কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। এই সময় অপরাপর সকল সাহাবী (রাঃ) জীবিত থাকা,খিলাফতের ব্যস্ততম অবস্থা তথা খলিফা মাত্র দুই বছর ছয়মাস সময় পেয়েছিলেন । হযরত আবুবকর (রাঃ) ১৪২ খানা হাদীছ বর্ণনার কথা ইমাম সুয়ুতী মারফত জানা যায়।
* দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর আমলে তিনি হাদীস সংকলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন কিন্তু তিনি দীর্ঘ একমাস ইস্তেখারা করার পর এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
* তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রাঃ)ও রাসূল (সঃ)-এর সতর্কতার প্রতি অতীব সাবধানতার কারনে হাদীস সংকলনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
* চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ), যে কজন সাহাবী নিজেদের হাতে রাসূল (সঃ)-এর নিকট শ্রুত হাদীস লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) অন্যতম। হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট সাদকা, যাকাত এবং ব্যাবহারিক কাজকর্ম সম্পর্কিত হুকুম আহকামের কয়েকটি হাদীস লিখিত ছিল । এই হাদীস সমষ্টির তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘সহীফা’। পরবর্তীতে তিনি এই সহীফাখানাকে হাদীসের একখানি দস্তবেজ হিসেবে হযরত উসমান (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দেন।
* তবে এই সময়ে সরকারী উদ্যোগে হাদীস সংকলন না হলেও মহান সাহাবী এবং তাবেঈদের একটি বিশাল অংশ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে হাদীস সংগ্রহের কাজে লিপ্ত ছিলেন। বয়োজ্যেষ্ঠ তাবেঈগনের মধ্যে ৯৯ জনের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। হিজরী ১ম শতকের শেষে এবং দ্বিতীয় শতকের শুরুতে বয়োকনিষ্ঠ তাবেঈ ও তাবেতাবেঈগনের ২৫২ জনের নাম পাওয়া যায়। যাদের নিকট হাদীসের লিখিত পান্ডুলিপি বিদ্যমান ছিল। এইভাবে সাহাবী তাবেঈ এবং তাবেতাবেঈ মিলে ৪০৩ জন রাবীর নাম পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট