শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

১১ মার্চের খুনিদের পুরস্কৃত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল—নূরুল ইসলাম বুলবুল

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রীর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল শিবির নেতা সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব ও জব্বারকে। আদালতে খুনিদের শাস্তিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার আদালতের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের শুধু ছেড়েই দেয়নি; বরং খুনিদের হাইকোর্টের বিচারপতি বানিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল। আর ১১ মার্চের খুনিদের পুরস্কৃত করার মাধ্যমেই দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল।"


তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত ১১ মার্চ শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামী পাবনা জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডল। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কর্মকাণ্ড বাতিলশক্তির জন্য অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। সে কারণেই ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের শান্তিপূর্ণ আয়োজনে সন্ত্রাসীরা সদলবলে হামলা চালিয়েছিল। সে সময় পৈশাচিক কায়দায় খুন করা হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ মেধাবী ছাত্র সাব্বির, আব্দুল হামিদ, আইয়ুব ও আব্দুল জব্বারকে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সেদিন ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে বাতিলের আঘাত মোকাবিলা করেছিল। এ হামলার মধ্যে দিয়ে ইসলামবিদ্বেষী আদর্শহীন শক্তির প্রতিহিংসা ও হায়েনার রূপ দেখেছিল দেশবাসী। তবে আল্লাহর পথে শাহাদাত আমাদের হতাশ নয়; বরং উজ্জীবিত করে। আমরা জানি এ পথ শাহাদাতের পথ। ফলে শহীদের সাথীরা রক্তপিচ্ছিল পথে থেমে যায়নি। জাতির জন্য লজ্জার বিষয় হলো—এ বর্বরতায় জড়িত খুনিদের বিচার হয়েছিল। পরে তাদের সাজা শুধু মওকুফই করা হয়নি; বরং চিহ্নিত খুনিদের হাইকোর্টের বিচারক বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একই সাথে এ ঘটনা বিচারহীনতার সংস্কৃতির নির্লজ্জ উদাহরণ।"


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেন, "১১ মার্চের শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি; বরং শহীদদের প্রতিটি ফোঁটা রক্ত বাংলার সবুজ জমিনকে ইসলামের জন্য উর্বর করেছে। শহীদেরা আজ ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রেরণার বাতিঘর আর খুনিরা ইতিহাসে ঘৃণিত হয়ে আছে। ছাত্রশিবিরকে আদর্শ দিয়ে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সেদিন ঘৃণিত হায়েনারা চেয়েছিল শহীদি কাফেলাকে থামিয়ে দিতে; কিন্তু তা বুমেরাং হয়েছে। ছাত্রশিবির আজ জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সৎ, দক্ষ, আদর্শিক নাগরিক ও নেতৃত্বের জন্য ছাত্রশিবিরের দিকেই তাকিয়ে আছে দেশের জনগণ।"


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামী পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মণ্ডল বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮২ সালের ১১ মার্চের নবাগত সংবর্ধনা ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের জন্য মনোমুগ্ধকর একটি আয়োজন। কিন্তু এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল বাতিলের কাছে আতঙ্কের কারণ। কেননা, বাতিল সব সময় মহাসত্যের আলোর সামনে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। সেদিন যারা অন্যায়ভাবে মেধাবী ছাত্রদের হত্যা করেছিল, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। সামরিক আদালতে ১৪ জনের যাবজ্জীবন সাজাও হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকার খুনিদের সাজা মওকুফ ও পুরস্কৃত করে। সেদিন যদি খুনিদের সাজা বহাল থাকত, তাহলে আজ শিক্ষাঙ্গনে শাসকগোষ্ঠীর প্রেতাত্মারা অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের হত্যা করার সুযোগ পেতো না।"


সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান বলেন, "ইসলাম ও শাহাদাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলামী আন্দোলনের বিজয়ের জন্য আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করা ঐতিহাসিক বাস্তবতা। ইসলামের জন্য জমিন উর্বর হয় শহীদের রক্তে। ১১ মার্চের শহীদেরা তাদের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার জমিনকে উর্বর করেছেন। সেই শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে ছাত্রশিবির আজ ২৩৪ জন শহীদের কাফেলা। শত সহস্র জুলুম নির্যাতন চালিয়ে এ কাফেলার অগ্রযাত্রাকে থামানো যাবে না। শহীদের রক্তে গড়া ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো ছাত্রশিবির আজ ছাত্রসমাজের প্রিয় ঠিকানা ও জাতির প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। আদর্শহীন জুলুমবাজ নেতৃত্বের কারণে দেশ আজ সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। চলমান জুলুমতন্ত্র থেকে জাতিকে রক্ষা সময়ের দাবি। দেশ ও ইসলামের জন্য ছাত্রশিবির যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে ছাত্রশিবির ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাবে।"