বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২

রাজনীতির নিয়মতান্ত্রিক ধারাকে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা করেছিলো আওয়ামী লীগ- মাওলানা আবদুল হালিম


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশ, ইসলামী আন্দোলন ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদীদের ষড়যন্ত্র ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তৎকালীন ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী শেখ হাসিনা। ২৮ অক্টোবর রাজনীতির নিয়মতান্ত্রিক ধারাকে লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা করেছিলো আওয়ামী লীগ।

তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘২৮ অক্টোবর ইতিহাসের কালো অধ্যায়‘ শীর্ষক আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এসময় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, চার দলীয় জোটের ক্ষমতার মেয়াদ শেষের দিকে জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ শুকরানা সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতির সময়ই সকাল ৮টায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিস জ্বালিয়ে দিয়ে নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্বল্প সংখ্যক জনশক্তি সেদিন হাজার হাজার সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীকে প্রায় খালি হাতে রুখে দিয়েছিলো ঈমানের দৃঢ়তা দিয়ে। সেদিন দেশপ্রেমিক জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছিলো, কিন্তু বাতিলের কাছে মাথা নত করেনি।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর আমাদের জন্য প্রেরণার। কেননা যে মহান আদর্শের ওপর মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাঠিয়েছেন সে আদর্শের ওপর টিকে থাকতে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে টিকে থাকব; এতেই আমাদের আনন্দ। ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৪ জন ভাই জীবন দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইবুনালের রায় প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক দিনই ৬১ মানুষ জীবন দিয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের ধারাবাহিকতায়ই অবৈধ আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ শত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বার বার প্রমাণ করেছে কোনো হুমকি, হত্যা, জুলুম নির্যাতন বা কোনো ষড়যন্ত্র ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে দমাতে পারে না। তবে ২৮ অক্টোবরের সেই ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। একের পর এক দেশ ও ইসলাম বিরোধী যড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সেই ধারাবাহিকতারই ফলাফল।

তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেছিলো। ২৮ অক্টোবরের রাজপথ রক্তাক্ত করেছিলো কেয়ার টেকার সরকারের জন্যই। এখন অবৈধ পন্থায় দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার জন্যই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে আ.লীগ। কিন্তু সে স্বপ্ন সফল হবে না ইনশাআল্লাহ। ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রাকেও ব্যাহত করা যায়নি এবং যাবেও না। আমি আশা করি, জনগণের অধিকার আদায়, দেশ ও ইসলাম রক্ষায় ২৮ অক্টোবরের চেতনাকে ধারণ করে ছাত্রশিবির ময়দানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ২৮ অক্টোবর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তা হক ও বাতিলের সংঘাতের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা মাত্র। হক-বাতিলের সংঘাত শেষ হয়ে যায়নি, বরং কালের বাঁকে বাঁকে হকপন্থীদের সামনে তা বার বার আসবে। এটাই মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা। ২৮ অক্টোবরের খুনিরা আবারো হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আরেকটি ২৮ অক্টোবর হবে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ইতিহাস ইনশাআল্লাহ। ২৮ অক্টোবরসহ সকল শহীদের রক্তের বদলা নেয়া হবে বাংলাদেশের জমিনে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম বলেন, ২৮ অক্টোবরের ষড়যন্ত্রের কালো পথ ধরেই পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামাদের ওপর গণহত্যা হয়েছে, হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে জেলে রাখা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে শহীদ করা হয়েছে। এ ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়েছে, হত্যা-জুলুম-নির্যাতন করে শহীদি কাফেলাকে স্তব্ধ করা যাবে না। যে জমিনে দেশ ও ইসলাম রক্ষায় তরুণরা জীবন দিতে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে চলে, সে জমিন থেকে ইসলামকে কেউ মুছে দিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।


সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ইসলামকে ধূলিসাৎ, দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিচারহীনতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবরের কলঙ্কজনক ইতিহাস রচনা করেছিলো আওয়ামী লীগ। যারাই বাংলার জমিনে ইসলামের জন্য কাজ করছেন, তাদেরকে অবশ্যই ২৮ অক্টোবরকে মূল্যায়ন করতে হবে। যারা শত জুলুম নির্যাতনের পরও জমিনে দ্বীন কায়েমের কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে ২৮ অক্টোবর থেকে বার্তা গ্রহণ করতে হবে। ২৮ অক্টোবর আমাদের চেতনা, আমাদের প্রেরণা, যা ইসলামের শুরু দিককার হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং এ চেতনা ধারণ করেই আমরা বিজয় নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ।