শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১

সদস্য মেধা যাচাই পরীক্ষা'২১ এ জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান সম্পন্ন।

মুসলমানদের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে আবারো জ্ঞান চর্চাকে প্রাধান্য দিতে হবে —ছাত্রশিবির সভাপতি


বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী বলেছেন, জ্ঞান আহরণ ও চর্চায় ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করেই বিশ্ববাসীকে সোনালী যুগ উপহার দিয়েছিলো মুসলিমরা। আমাদের সেই সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে আবারো জ্ঞান চর্চাকে প্রাধান্য দিতে হবে।


তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য মেধা যাচাই পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দপ্তর সম্পাদক রাজিবুর রহমান পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলামসহ কার্যকরী পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
শিবির সভাপতি বলেন, উত্তম জ্ঞান চর্চা কিভাবে করতে হয় তা রাসূল সা. এর আদর্শেই সর্বোত্তমভাবে প্রদর্শিত রয়েছে। রাসূল সা. বলেছেন, মৃত্যুর পর ব্যক্তির সকল আমলনামা বন্ধ হয়ে গেলেও সেই ব্যক্তির জ্ঞানের দ্বারা যতদিন মানুষ উপকৃত হতে থাকবে ততদিন তিনি সাদাকায়ে জারিয়ার সওয়াব পেতে থাকবেন। ইসলামে ঈর্ষা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও আদর্শিক ও সমাজের জন্য কল্যাণকর জ্ঞানের ব্যপারে তা বৈধ করা হয়েছে। রাসূল সা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে বলেছিলেন‘ হে আল্লাহ আপনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে জ্ঞান দিন’। আর ইতিহাস সাক্ষী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস মুফাসসির ও ইসলামের ইতিহাসে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। আজ যারা সদস্য মেধা যাচাই পরীক্ষায় পুরস্কৃত হয়েছেন তারাও যেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর মত দ্বীনের দাঈ হন এবং রাসূল সা. এর দেখানো পথে জ্ঞান চর্চা করার সুযোগ পান সেই দোয়া করছি।
তিনি বলেন, যে জ্ঞান মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কল্যাণকর সে জ্ঞান মেধাবীদের জন্য ঈর্ষার কারণ হওয়া জরুরি। সাধারনত মানুষ তার অর্জিত জ্ঞানকে শুধু নিজের কল্যাণ ও ব্যক্তিগত স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। কিন্তু ছাত্রশিবির এমন মানুষ তৈরি করেছে যারা নিজেদের জ্ঞান দেশ, জাতি ও ইসলামের জন্য কাজে লাগাচ্ছে। শুধু জ্ঞান অর্জনই নয় তারা আমলের দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে ২৪০ কোটি মুসলমান। যা দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জাতি। কিন্তু সবচেয়ে পিছিয়ে আছে মুসলমানরা। অথচ এক সময় মুসলমানদেরই সোনালী ইতিহাস ছিলো। ২১৫ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা মামুনুর রশিদ ৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বায়তুল হিকমাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিজ্ঞানের অনন্য উৎস ছিলো বায়তুল হিকমাহ। বায়তুল হিকমায় শুধু বিজ্ঞানের বই ছিলো ৪০ লক্ষ। তৎকালীন মুসলিম শাসিত কর্ডোভা ছিলো জ্ঞান চর্চায় ইউরোপিয়ানদের মূল জায়গা। সেখানে মুসলমানদের ঘরে খাবার না থাকলেও বই থাকতো। এটাই ছিলো মুসলমানদের ইতিহাস। কিন্তু আজ বইয়ের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক তেমন নেই। অনেকে বই কিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালালেও বাস্তবে প্রকৃত অর্থে পড়াশুনা করছে না। এর বিপরীতে ছাত্রশিবির কর্মী, সাথী ও সদস্যদের মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়ে সেই কর্ডোভা, বাগদাদ ও সোনালী যুগের ইতিহাসের মত লোক তৈরি করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি ছাত্রশিবিরের এ জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে জ্ঞান চর্চার দ্বার উন্মোচন করার জন্য লোক তৈরি করবে ইনশাআল্লাহ। ইসলামের সোনালী যুগ ফিরিয়ে আনতে মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লামা ইকবাল, ইমাম হাসান আল বান্নাহ, সাইয়েদ বদিউজ্জামান নুরসি, আল্লামা মওদূদী, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে খালদুন, ইবনে সিনা গড়ে উঠতে হবে। ইহুদি, নাসারা, মুশরিকরা এখন আর অস্ত্র দিয়ে মূল আঘাত করছে না। তারা আমাদের ঘায়েল করছে, চিন্তা, বুদ্ধি ও কলম দিয়ে। আমাদেরকেও তাদের মোকাবেলা করতে হবে সেই কলম, চিন্তা ও বুদ্ধি দিয়ে। কেউ চেষ্টা না করলেও ছাত্রশিবির সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে ইনশাআল্লাহ। আজকের এ আয়োজন সেই দ্বারই উন্মোচন করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আজকের মেধাবীদের মাঝ থেকেই সেই সোনালী মানুষ তৈরি করে দিন।
তিনি আরো বলেন, বাতিল আদর্শের ধারকরা আমাদের জ্ঞানের আকাশের তারকাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। হত্যা করেছে মীর কাসেম আলীকে যিনি ৪র্থ শ্রেণীতে তার ক্লাসে ক্যাপ্টেন ছিলেন, ৫ম শ্রেণীতে বিভাগের সেরা ছাত্র ছিলেন ও স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্র হিসেবে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছিলেন। তারা হত্যা করেছে শহীদ মালেককে যিনি তার অঙ্গনে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। আসলে এই হত্যাকারীদের মূল উদ্দেশ্যে ইসলামী জ্ঞান ও জ্ঞানের চর্চা থেকে এ প্রজন্মকে বঞ্চিত করা। এ সমাজে নতুন আল্লামা সাঈদী, মীর কাসেম আলী, অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তৈরি করে আমরা তাদের এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবো ইনশাআল্লাহ।
নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান রেখে শিবির সভাপতি বলেন, শুধু মুসলমানদেরই নয় বরং বিশ্ববাসীকে সোনালী যুগ উপহার দিয়েছে মুসলমানরা। আজকের বিকশিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মুল উৎস মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমাহ, আল হামরাগুলো। মুসলিম বিশ্বে আবারো সেই সোনালী যুগের প্রত্যাবর্তনের দিকে তাকিয়ে আছে। উম্মাহর এ প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব মুসলিম তরুণ যুবকদেরই নিতে হবে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের এ মহা যাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যার যার অবস্থানে থেকে জ্ঞান চর্চায় আরো মনোনিবেশ করতে হবে। এদেশে জ্ঞান চর্চায় ছাত্রশিবিরের প্রতিই মানুষের প্রত্যাশা বেশি। কারণ ছাত্রশিবির জাতির কাছে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাদৃত। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে যে, জাতির প্রত্যাশা পুরণে আমরা সফল হবই ইনশাআল্লাহ।