সোমবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাথী মেধা যাচাই পরীক্ষা'২১ এ জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান সম্পন্ন।

মেধার চর্চা ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে আদর্শিক জাতি গঠন করতে ছাত্রশিবিরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে- আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ


বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেছেন, শিক্ষা ব্যতীত কোন ধরণের অগ্রগতি সম্ভব নয়৷ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যে জাতি জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় নিজেদের যতবেশি নিয়োজিত করেছে তারাই পৃথিবীকে তত বেশি নেতৃত্ব দিতে পেরেছে। একুশ শতাব্দীর এই যুগে পৃথিবী হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। শিক্ষা অর্জন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। এমতাবস্থায় ছাত্রশিবিরকে আরো বেশি মেধার চর্চা করতে হবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। সাম্য ও ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়তে মেধার চর্চার পাশাপাশি নীতি নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে আদর্শিক জাতি গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আজ রাজধানীর শহীদ আব্দুল মালেক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে সাথী মেধা যাচাই পরীক্ষা'২১ এ জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল জব্বার। এই সময় কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মুসলিম দেশ হিসেবে শিক্ষার ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন-অগ্রগতি একটি স্বাভাবিকতা হিসেবে আকাঙ্ক্ষার বিষয় হলেও ছাত্র সমাজ নষ্ট ও লেজুরবৃত্তি রাজনীতির কবলে পড়ে শিক্ষার আদর্শিক পথ হারিয়ে ফেলে। শিক্ষাঙ্গনগুলো আজ পরিণত হয়ে পড়ে সন্ত্রাসীদের আখড়ায়। ক্যাম্পাসগুলো হয় অস্ত্রের গোডাউন। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে মেধাবীরা ছাত্র হিসেবে হারিয়ে ফেলে স্বকীয়তা। হত্যা-খুন, গুম ও ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট অপরাধে জড়িয়ে পড়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। মেধা চর্চার বিপরীতে রাজনীতির বড় ভাইদের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ছিনতাই রাহাজানিতে জড়িয়ে হারিয়ে যায় লাখো ছাত্র। আজকের বাংলাদেশ দুর্নীতি অবিচার ও শোষণ নিপীড়নের পেছনে জড়িয়ে আছে সে সময়ের নষ্ট রাজনীতি। ছাত্রশিবির একটি আদর্শ ও স্বপ্নের নাম। যার প্রতিটি পাতায় জড়িয়ে আছে এই দেশের কোটি কোটি মানুষের স্পন্দন। ছাত্রশিবির পথভ্রষ্ট ছাত্র রাজনীতি থেকে মেধাবী ছাত্রদের রক্ষায় আলোর মশাল নিয়ে দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা ছাত্রশিবিরকে ঘিরে নতুন সূর্যদ্বয়ের স্বপ্ন দেখে।
তিনি আরো বলেন, মেধা চর্চার পাশাপাশি নৈতিকতার বিকাশ সাধন একান্তভাবে জরুরি। দেশের অন্যান্য ছাত্রসংগঠন গুলো যখন নীতি নৈতিকতা হারিয়ে জাতি বিধ্বংসী কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। ঠিক সে সময় ছাত্রশিবির মেধার চর্চা ও নৈতিকতা বিকাশ সাধনের জন্য নিবিড় ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি জাতির জন্য আশাব্যঞ্জক। দেশের সচেতন নাগরিকরা বিশ্বাস করে ছাত্রশিবিরের হাত ধরে বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে বহুদূর।
জনাব ওবায়েদুল্লাহ বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার গুণগত মানের উন্নতি আবশ্যক। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়নে কোন সরকার ধারাবাহিক ভাবে কাজ করেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার আদর্শিক রূপরেখা বাস্তবায়ন হয়নি। ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি উন্নত জাতি গঠনে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে গবেষণা খাতে বরাদ্ধ অপ্রতুল। হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। খাবারের মান অতি নিম্মমানের। সর্বোপরি শিক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দ নাম মাত্র। এভাবে একটি জাতির উন্নতি হতে পারে না। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্রশিবিরের সাথীদের মেধা যাচাইয়ের আজকের এই আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। সরকার যখন করোনার অজুহাতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে ঠিক সে সময় স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছাত্রশিবির প্রমাণ করেছে শত বাঁধা দিলেও ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রা রুখা যাবে না। ছাত্রশিবিরের এই আয়োজন আগামী দিনেও অব্যাহত থাকুক। দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্রশিবির তার পথচলা আরো জোরদার করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, একটি দেশের উন্নতি অগ্রগতি নির্ভর সে দেশের যোগ্য, মেধাবী ও সৎ নেতৃত্বের উপর। তাদের মেধাকে সঠিক পরিচর্যায় গড়ে তোলার উপর নির্ভর করবে জাতির সফলতা ও ব্যর্থতা। আজকে জাতির ঘাড়ে ব্যর্থতার পাহাড় চেপে বসেছে মেধার অপব্যবহার ও অবমূল্যায়নের কারণে। আমাদের বিশাল
মেধা সম্পদ থাকলেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্খিত নাগরিক তৈরী করা অসম্ভব। চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। উল্টো নৈতিকতা শিক্ষার যেসব সামান্য সুযোগ ছিলো সেগুলোকেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে শিক্ষাব্যবস্থায় অতি রাজনীতিকরণ ও ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যার ভয়াবহ কুফল জাতিকে প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে।
অন্যদিকে তরুণ ও যুবসমাজ একটি জাতির অমূল্য সম্পদ হলেও এদেশে তাদের প্রতি যে বৈষম্য ও অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে তা নজিরবিহীন। চলমান করোনা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে লাখো শিক্ষার্থীর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এখনো শিক্ষা জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা যখন তাদের অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমে এসেছে সে সময় রাষ্ট্রীয় শক্তি ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছাত্রসমাজের উপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক। ছাত্রসমাজের উপর প্রতিটি আঘাত ও বঞ্চনা দেশবাসীর হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আগামীর ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন অবহেলা ও ধ্বংস যাত্রার চিত্র বিরল।
বর্তমানে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, নব্বই ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে যেখানে তাহজিব তামাদ্দুন ইসলামিক আদলে চলমান, সেখানে স্কুলের প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে চাতুরতার সাথে মৌলিক ইসলাম শিক্ষা উঠিয়ে দিয়ে এবং প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়নহীন করে নতুন কারিকুলাম সাজানো হয়েছে। অপর দিকে শিল্পকলা শিক্ষার আড়ালে ইসলামী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শিশুদের মনে মজবুত ইসলাম বিরোধিতার দেয়াল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেশের সকল সচেতন নাগরিকদের এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। তা নাহলে পাশ্চাত্যের নীতি-নৈতিকতাহীন পরিবেশকে বরণ করতে হতে পারো সোনার বাংলাদেশকে।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে উদাসীন ও আদর্শহীন নেতৃত্বের কাছে আমরা জাতির ভবিষ্যতকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। শত শঙ্কার মধ্যেও আমরা আশাহত নই। ছাত্রশিবির এদেশের ছাত্রসমাজ নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। ছাত্রশিবির গতানুগতিক কোন ছাত্রসংগঠন নয় বরং বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা যখন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য মেধা ও নৈতিকতা সমন্বয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে ব্যর্থ। শত প্রতিকূলতার মাঝেও ছাত্রশিবির তখন জাতির সেই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে চলছে। সাথী মেধা যাচাই পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রশিবির আদর্শিক জাতি গঠনে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কাজ করছে। ছাত্রশিবির দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে, কথার ফুলঝুড়ি দিয়ে কাঙ্খিত সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্ব সৃষ্টি। আর সেই নাগরিক ও নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্যই ছাত্রশিবির তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং ভবিষ্যতে রাখবে।