শনিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ মীর কাশেম আলী স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

মেধাহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী আন্দোলনকে ধ্বংসের হীন উদ্দেশ্যে সরকার মীর কাশেম আলীকে হত্যা করেছে-আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট ইসলামি অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক ও মিডিয়াব্যক্তিত্ব জননেতা শহীদ মীর কাশেম আলী স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল রাশেদুল ইসলামের পরিচালনায় আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসিবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, সৎ, যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক এবং নেতৃত্বের উজ্জল উদাহরণ ছিলেন শহীদ মীর কাশেম আলী। কিন্তু জাতির দূর্ভাগ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এই কারিগরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। মীর কাশেম আলীকে হত্যার মধ্যদিয়ে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে। বাংলাদেশকে একটি মেধাহীন, অকার্যকর করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যখন দিবালোকের মতো সত্য হয়ে ওঠে, তখন এদেশে শিক্ষাব্যবস্থাকে কুরআনের আলোকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টায় শহীদ মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠা হয়। মূলত জাতিকে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার সুফল থেকে বঞ্চিত করতেই মেধাবী ছাত্রদের প্রিয় সংগঠনের কার্যক্রমকে থমকে দিতেই মীর কাশেম আলীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে ২০১০ পূর্ব পর্যন্ত দেশের কোন থানায় একটি জিডি পর্যন্তও ছিল না। প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ পরবর্তী জন্ম নেওয়া সাক্ষী আর মিথ্যাচারকে পুঁজি করে এ অন্যায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছিলো । সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে যে সব ডকুমেন্ট পেশ করেছে তাতে কোথাও তার নাম ছিলো না। তার বিরুদ্ধে করা প্রতিটি অভিযোগের ঘটনার বিবরণে ভিন্নতা ও তথ্যে অসংলগ্নতা ছিলো স্পষ্ট। যা তার আইনজীবীরা সুস্পষ্ট ভাবে আদালতে তথ্য প্রমাণসহ পেশ করেছেন। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষী সরকারের উদ্দেশ্যে ছিলো তাকে হত্যা করা। ফলে অবৈধ ট্রাইবুনালে কোন ন্যায় বিচার হয়নি বরং বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে একজন নিরপরাধ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণেই সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। তবে সরকার যে উদ্দেশ্যে মীর কাশেম আলীকে হত্যা করেছে সে উদ্দেশ্যে কোন দিনই পূরণ হবে না। আইন-আদালত চিরদিন ফ্যাসিবাদীদের অবৈধ দখলে থাকবে না। যে মাটিতে নিরপরাধ শহীদ মীর কাশেম আলীর রক্ত ঝরানো হয়েছে সেই মাটিতেই সময়ের ব্যবধানে বিচারের নামে হত্যাকারীদের বিচার হবে, ইনশা’আল্লাহ। আমরা মনে করি, শহীদ মীর কাশেম আলী তার সর্বোচ্চ সফলতায় পৌঁছে গেছেন। কিন্তু অবৈধ সরকার নিজেদের অসভ্য ও নিকৃষ্টদের কাতারে স্থান করে নিয়েছে।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, মীর কাশেম আলী অনাড়ম্বর জীবনযাবনে অভ্যস্ত অসাধারণ একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শহীদ মীর কাশেম আলী এ দেশে কল্যাণধর্মী একটি ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছাত্রসমাজের প্রিয় কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সংগঠক, শিল্পোদ্যোক্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা, জনকল্যাণ ও সমাজকল্যাণমূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেও সকলের নিকট তিনি পরিচিত ও সমাদৃত। তিনি ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ বহু মসজিদ, মাদরাসা, বিভিন্ন ইসলামী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। লজ্জার বিষয় হলো, যিনি মানবতার সেবায় জীবন নিয়োজিত করেছেন তাকেই হত্যা করা হয়েছে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের সাজানো অভিযোগ দিয়ে। অথচ দেশে গণহত্যাকারী, খুনি, কোটি-কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী, সশস্ত্র সন্ত্রাসী, দূর্নীতিবাজ, লম্পট, চরিত্রহীনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তবে দেশবাসী সজাগ এবং সচেতন। জনগণ বিশ্ববরেণ্য ইসলামী আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলীদের ব্যপারে আওয়ামী প্রপাগান্ডা বিশ্বাস করেনি। বরং দেশ ও ইসলাম প্রিয় জনগণ তাদেরকে হৃদয়ে ধারন করেছে এবং শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, শহীদ মীর কাশেম আলী ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশে ইসলামী বিপ্লবের ব্যাতিক্রমী এক স্বপ্নদ্রষ্টা। ইসলামকে শুধুমাত্র কিছু নিয়ম পালনের ভিতর সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজসেবা, শিক্ষা, মিডিয়া, সাংস্কৃতিসহ সমাজের সকল সেক্টরকে ইসলামের আলোকে সাজানোর এক প্রবল বাসনা ছিল শহীদ মীর কাশেম আলীর। হাজারো উদ্যোক্তার মনে যে বীজ তিনি বুনেছেন তার ফল এখনও বহমান। তার চিন্তায় তিনি সফলও হয়েছেন। কেয়ামত পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। তাঁর এই সাফ্যল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েই বর্তমান অবৈধ সরকার তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নামের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হন। ইসলামী বিপ্লবের ঝান্ডাবাহী ছাত্রসমাজ এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর এ হত্যাকান্ডের বদলা নিবে, ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বিদ্বেষী দেশ-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শহীদ মীর কাশেম আলীসহ জাতির পরীক্ষিত আদর্শবান সন্তানদের হত্যা করা হয়েছে। বাতিল শক্তির মূল উদ্দেশ্যেই ছিলো বাংলার জমিন থেকে ইসলামী আন্দোলনকে বিতড়িত করা। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন বুমেরাং হয়েছে। শহীদদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদৌলতে এ দেশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম নতুন মাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দৃঢ়তার সাথে ঘোষনা করছি, শহীদদের পবিত্র রক্ত ও ত্যাগ বৃথা যেতে দেবো না। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও শহীদ মীর কাশেম আলীর রেখে যাওয়া দ্বীন বিজয়ের কাজকে সম্পূর্ণ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শহীদ মীর কাশেম আলীকে হত্যা করে যারা ইসলামী আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করার স্বপ্ন দেখছে, তাদের সে স্বপ্ন কখনোই পূরণ হবে না। শহীদ মীর কাশেম আলীর প্রতি ফোঁটা রক্ত এ দেশের ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগণকে উজ্জীবিত করবে। শহীদ মীর কাশেম আলীর স্বপ্নের ইসলামী সমাজ কায়েম করার মাধ্যমে বাতিলের চূড়ান্ত জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ