রবিবার, ২৯ আগস্ট ২০২১

শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা প্রদান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রক্ষার্থে সেপ্টেম্বরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে-ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী ও সেক্রেটারী জেনারেল রাশেদুল ইসলাম আজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, করোনা মহামারীর কারণে গত দেড় বছরের অধিক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অসংখ্য শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে কর্মমুখী হয়ে পড়ছে। এটি জাতির জন্য অশনিসংকেত। তাই আর দেরি না করে অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রক্ষার্থে সেপ্টেম্বরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা প্রদান করতে হবে।

ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, বিজ্ঞ নাগরিকরা সরকারের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দেওয়ার কথা বললেও সরকার অনলাইন ক্লাসের কথা বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন জরিপে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শতকরা ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের অভাবে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তো অনলাইন ক্লাসের সুবিধাটুকুও পায়নি। এই বৃহত্তর শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করার মত কোনো সুবিধা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিলেও শিক্ষা খাত উপেক্ষিত থেকে গেছে। যেসকল শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পেরেছে তাদের বড় অংশ আবার মান সম্মত শিক্ষা পায়নি। কেননা আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষকের অনলাইনে পড়ানোর মত দক্ষতা নেই এবং দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন ব্যবস্থাও ছিলোনা। তাই অনলাইন ক্লাস বুমেরাং হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে আমাদের দেশের তুলনায় বেশী সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রেখেছে। নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ করছে। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দফায় দফায় বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই কঠিন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা জাতির সামনে পেশ করা হয়নি। মার্কেট-শপিং মল, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং নতুন করে পর্যটন কেন্দ্র হতে শুরু করে গণপরিবহন সবই স্বাভাবিক গতিতে চলছে শুধু চলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের করোনার ঝুঁকিতে ফেলতে চান না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা প্রদানের কোন উদ্যোগও তারা নিচ্ছেন না।

ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে জাতির জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা কিভাবে পূরণ করা যাবে এটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের শিক্ষাবিদ হতে শুরু করে অভিভাবক সমাজ জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা প্রতিনিয়ত সরকারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আবেদন করলেও সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। অথচ এই সময়ে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব কিছু খুলে দিচ্ছে। দেশের মানুষ মনে করছে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। এটি কোনভাবে কাম্য হতে পারে না। ইতিমধ্যে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর কথায় যা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুন। অনৈতিক রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার বানাবেন না। আপনাদের এই জঘন্য ও ছাত্রসমাজ বিরোধী সিদ্ধান্ত দেশকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। অন্যথায় দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। আমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে যেকোন অনৈতিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।