রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালে শোক প্রকাশ

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বেফাকের সহসভাপতি ও আল-হাইয়া বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহিমাহুল্লাহ আজ দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। তাঁর ইন্তেকালে জাতি একজন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীনকে হারালো। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ার একজন উজ্জল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন ইসলামী জ্ঞানে পণ্ডিত, দক্ষ ও সাহসী রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ইসলামী বক্তা ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায় জামাতে জালালাইন (স্নাতক) সমাপ্তির পর উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। এখানে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সমাপ্তির পর আরবি সাহিত্য ও দর্শনে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন।

তিনি শত নির্যাতন, হুমকি, হয়রানির পরও বাতিলের কাছে মাথা নত না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকা এক প্রেরণার নাম। তিনি বাংলার জমিনে লক্ষ লক্ষ আলেম গড়ার কারিগর। তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা এবং জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়াও অসংখ্য মাদরাসার পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি দেশের লক্ষ লক্ষ আলেম-ওলামার উস্তাদ। একই সাথে তিনি ইসলাম ও দেশ রক্ষা এবং নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন।

অন্যদিকে তিনি ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সবার নিকট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তিনি দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রসার, আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধকরণ ও ইসলামবিরোধী সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। ইসলাম, দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি ছিলেন আপোষহীন। ভারতে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ, ফারাক্কাবাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ, সরকারের ইসলাম ও ফতোয়াবিরোধী আইন প্রণয়নের প্রতিবাদ এবং নাস্তিক্যবাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে তিনি আলেম সমাজ ও সাধারণ জনগণকে একত্রিত করে তীব্র গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আল্লাহর রহমতে নাস্তিক্যবাদের আস্ফালন স্তব্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁর ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত বলিষ্ঠ। জাতির ক্রান্তিকালে তাঁর মত প্রবীণ আলেমে দ্বীনের ইন্তেকাল হলো। ইসলাম, দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আলেম সমাজ ও জাতি চিরকাল মনে রাখবে ইনশা-আল্লাহ।

আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় এ আলেমে দ্বীনকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।