শুক্রবার, ১২ জুন ২০২০

২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে ছাত্রশিবিরের প্রতিক্রিয়া

প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করে শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবেঃ ছাত্রশিবির

চলমান বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ খাতে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু ২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না রেখে গতানুগতিক বাজেট পেশ করা হয়েছে, উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান বিপর্যয়ের কারণে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সেখানে বাংলাদেশে ২০২০-২১ সালের বাজেটও গতানুগতিকভাবেই পেশ করা হয়েছে। আসলে ভোটারবিহীন অনির্বাচিত সরকার কখনো জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারেনা তা ২০২০-২১ সালের বাজেটের মাধ্যমে আবারো প্রমাণ হয়েছে। এ বাজেটে সরকারের চরম অযোগ্যতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জনগণকে ধোঁকা দিতে সরকার বিশাল ঘাটতির ঋণনির্ভর ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। এই অবাস্তব ও অতি উচ্চাভিলাষী বাজেটকে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বাজেট বলে অভিহিত করেছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ। কেননা প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। বিশাল অংকের ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে জনগণের ঘাড়ে করের বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র জাতিকে প্রতিনিয়ত দেখতে হচ্ছে। এ দুর্নীতির মাধ্যমে যেমন জনগণের অধিকার হরণ করা হয় তেমনি অগ্রগতির ধারাও ব্যহত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়সম টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা দুর্নীতিকে সরাসরি প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল। এ বাজেট জনগণের নয় বরং দলীয় দুর্নীতিবাজদের জনগণের অধিকার হরণের রাস্তা সহজ করে দেওয়ার নামান্তর। বিশেষজ্ঞের মতে, প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন না ঘটিয়ে ধনীকে আরো ধনী ও গরীবকে আরো গরীব করায় সহায়ক হবে। আর দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের লুটপাটের দরজা খুলে দেওয়া হবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হওয়ায় এই সরকারের বাজেট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এ বাজেট যে রাজনৈতিক,গণবিরোধী ও দুর্নীতি বান্ধব তাতে কোন সন্দেহ নেই।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এবারও বাজেটে শিক্ষাখাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রী এটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বললেও তা জিডিপির অনুপাতে সামান্যই। আর আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের শিক্ষাখাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বা বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দকে আদর্শ ধরা হয়। তাছাড়া এই খাতে গত বছরের চেয়ে এ বছরে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে তা শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। অথচ চলমান করোনা বিপর্যয়ে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা ছিল শিক্ষাখাতে অনুপাতিক হারে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। কিন্তু এখানেও গতানুগতিক ধারা বজায় রাখা হয়েছে। শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রসমাজ দাবী করে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন পণ্যের দাম কমানো হলেও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানো হয়নি। প্রয়োজন ক্রমবর্ধমান থাকলেও আলাদা পরীক্ষার হল নির্মাণ ও শিক্ষাখাতে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। আগের মতই প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সুকৌশলে ধর্মীয় শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নে পর্যাপ্ত বাজেট দেওয়া হয়নি। শিক্ষা নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তার উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা নেই বরং শিক্ষাখাতে বৈষম্যকেই বহাল রাখা হয়েছে। এই বাজেট শিক্ষাখাতে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।

Muaz, [15.06.20 20:29]
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যেই এই গণবিরোধী বাজেট বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, সংস্থা, দল ও জনগণের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ বাজেট সংশোধন করতে হবে। দেশের বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমাদের প্রস্তাবনা হলো, মোট বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ শিক্ষা খাতে দিতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষাখাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য সুস্পষ্ট কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষায় যা বরাদ্দ হবে তার ৬০ শতাংশ শিক্ষা উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। তাই শিক্ষাখাতের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। নতুন জাতীয়করণকৃত ও বিদ্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেই সাথে গবেষণাগুলোকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষাখাতে দুর্নীতি বন্ধ করে বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ছাত্রদের শিক্ষাব্যয় কমাতে হবে। শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে হবে। বিনামূল্যে সর্বস্তরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করতে হবে। আলাদা পরীক্ষা হল নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ ইন্টারনেট সংযোগ সময়ের দাবী। দেশে মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাতে শিক্ষা ব্যয় কমাতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করার কার্যকরী ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বিরাজমান করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন স্কুল ও কলেজের ক্লাস বন্ধ থাকায়, শিক্ষার গুণগত মানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখি করতে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সকল শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য অ্যাসিসটিভ ডিভাইস তথা হুইল চেয়ার, ক্রাচ ও হেয়ারিং সুইচ প্রভৃতি সরবরাহ করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিশুদের জন্য বাংলার পাশাপাশি নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরী। সর্বোপরি, কাঙ্খিত নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ও মেধা যাচাই পদ্ধতিসহ সামগ্রীক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। সেসব নিশ্চিত করার জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ।

 

 

সংশ্লিষ্ট