রবিবার, ১০ মে ২০২০

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহের এর ইন্তেকালে ছাত্রশিবিরের শোক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের (৭০) এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ আবু তাহের ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় দায়িত্বশীল। তিনি ২০১০ সাল থেকে অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৯ই মে রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার মগবাজারস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। তাঁকে হারিয়ে ছাত্রশিবিরের প্রতিটি দায়িত্বশীল, কর্মী, সমর্থক আজ গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর ইন্তেকালে জাতি একজন সর্বজন দক্ষ নেতৃত্ব হারালো। ইসলামী আন্দোলন হারালো একজন নির্ভীক সৈনিককে। আর দেশবাসী হারালো একজন সৎ, যোগ্য ও মানবদরদী নেতাকে।

তিনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের বীর সৈনিক। ছাত্রজীবনেই তিনি জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মহান প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত হন এবং সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত শহীদি কাফেলার কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি দ্বীনি আন্দোলনের কাজ শক্তিশালী করায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাস ও জনপদে ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া ও সংগঠন বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একইসাথে দেশের সুস্থধারার ছাত্ররাজনীতি বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে ‘তাহের-কাদের পরিষদে’ ভিপি পদে নির্বাচন করেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং সেখানেও তিনি একইভাবে নিজের সবটুকু সামর্থ দিয়ে জমিনে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে, ২ মেয়ে ও সহধর্মীনিকে রেখে গেছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, তিনি ছিলেন আলেমে দ্বীন ও মানুষ গড়ার কারিগর। শুধু সংগঠনে নয় বরং সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি পরিচিত ছিলেন একজন নির্ভীক, হাস্যোজ্জল, পরোপকারী, সাধারণ জীবন যাপনকারী গণমানুষের নেতা হিসেবে। কর্মজীবনে তিনি ১৯৮১ সালে মগবাজারের আইইএ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে অসংখ্য সামাজিক ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি অকুতোভয় সৈনিকের ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন আজীবন। ইসলামী আন্দোলনে দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বাতিলের রোষানলে পড়ে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু দেশ ও ইসলাম রক্ষায় তাঁর অবস্থান ছিল অটল অবিচল। ইসলাম, দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। মহান এ রাহবারকে হারিয়ে আমাদের হৃদয় আজ ব্যথিত, শোকাহত। বাংলার জমিনে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর নাম অবিস্বরণীয় হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ। তাঁর দেশপ্রেম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য কর্মস্পৃহা, ত্যাগ-কুরবানী আগামী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তার রুহের মাগফিরাত ও জান্নাত কামনায় মোনাজাত করছি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার যেন ধৈর্য ধারণ করতে পারে সেজন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি।