রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০

আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবীতে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি

আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবী জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দীন আইউবী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস মহামারিতে রুপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ ১৭৩টি দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দুই সপ্তাহ বাংলাদেশের জন্য পিক টাইম। আল্লাহ না করুন, দেশের ভেতরে এখন করোনা ভাইরাস ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গতকাল (২১ মার্চ) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে লকডাউন ও জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। অন্যদিকে এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও সরকারের উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা ও মন্ত্রী এমপিদের ভারসাম্যহীন প্রলাপে দেশের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অথচ চীনের উহানে প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ তিন মাস সময় পেয়েছে। কিন্তু তেমন কোনও প্রস্তুতি না নিয়ে সরকার চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। এখন তারা বলছে হাসপাতাল প্রস্তুত করছে, আইসিইউ ব্যবস্থা করছে। আবার সেসবেরও হ-য-ব-র-ল অবস্থা, যা জনগণ গণমাধ্যমের কল্যাণে দেখতে পাচ্ছে। শুরু থেকে দেশে করোনা শনাক্তকরণ কিট নেই, হাসপাতাল প্রস্তুত নয়, চিকিৎসকদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই বলে জানা যাচ্ছে। সরকার দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের কোনও কথাই কানে নেয়নি। আল্লাহ না করুন, যার ভয়াবহ মাশুল দিতে হতে পারে জনগণকে। এ অবস্থায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর সমাগমে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার আয়োজন কোনভাবে নিরাপদ নয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নি:সন্দেহে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রশিবির সব সময়ই চায় যে সুনির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হোক, শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকুক এবং সেটাই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রত্যাশিত। কিন্তু তা মূল্যবান জীবনের চেয়ে বড় নয়। পরবর্তীতে উপযুক্ত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভবও নয়। এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষার্থীরা জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। তারা দেশের ভবিষ্যত। শিক্ষকমন্ডলী ও পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জীবন মূল্যবান। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই পরিস্থিতিতে এইসএসসি ও সমমান পরীক্ষা গ্রহণ এই মূল্যবান জীবনগুলোকে ঝুকির মধ্যে ঠেলে দিবে, যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

বাস্তবতা বিবেচনায় ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল বন্ধ ও সীমিত হয়ে পড়েছে। চলমান কঠিন বাস্তবতায় আগামী ১ এপ্রিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাস্তব সম্মত হবেনা। কেননা পরীক্ষার ছাপাকৃত প্রশ্ন অনেকগুলো হাত বদল হয়ে পরীক্ষার্থীদের নিকট দেওয়া হবে। এই হাত বদলের কোন পর্যায়ে ভাইরাস আক্রান্ত কোন ব্যক্তি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। চীনের সরকারি এপিডেমিওলজিস্টের একটি দল গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাসটি কাঁচ, কাপড়, ধাতু, প্লাস্টিক ও কাগজের ওপর ২-৩ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। অতএব প্রশ্নপত্রের কাগজের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সেটা হলে, কী ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়!
আবার কোন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত হতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তার মাধ্যমে পরীক্ষা কক্ষ, পরীক্ষা কেন্দ্র ও যাতায়াতের সময় যানবাহনে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা সহজেই সংক্রমিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাইরাস সংক্রমনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। ফলে অনিরাপদ হয়ে যাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পরীক্ষা গ্রহণের কাজে সহায়তাকারী লাখো মানুষ এবং তাদের মাধ্যমে তাদের পরিবার পরিজনের জীবন।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাদেশে উৎকণ্ঠার মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল অর্জন করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কঠিন হবে। তাদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ বাধাগ্রস্থ হবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জীবন হুমকির মধ্যে ফেলার মত ঝুঁকি নেওয়ার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে দেশবাসী মনে করে না। সুতরাং অবিলম্বে আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন ও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা সরকারের নিকট জোড় দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।