বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দিনের ইন্তিকালে শোক প্রকাশ

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দিনের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, ডাঃ মঈন উদ্দিনের ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে দেশ একজন মানবদরদী চিকিৎসককে হারালো। ডাঃ মঈন উদ্দিন গত ৫ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের একটি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, যথাসময়ে এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি এবং সরকারের পক্ষ থেকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়নি। পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করে পারিবারিকভাবে এম্বুলেন্সের ব্যাবস্থা করে তাঁকে ঢাকায় আনা হয় এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। ডাঃ মঈন উদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম করোনা যোদ্ধা যিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিজেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছেন। সিলেটের চিকিৎসা অঙ্গনের প্রিয়মুখ ও জনদরদী চিকিৎসক ডাঃ মঈন উদ্দিনের ইন্তেকালে জাতি একজন মানবতাবাদী চিকিৎসককে হারালো। যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, তিনি এক মানবদরদী চিকিৎসক ছিলেন। সর্বমহলে তিনি ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সিলেটের একজন জনপ্রিয় ডাক্তার ছিলেন যাকে সবাই মানবিক ডাক্তার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। মানবতার সেবায় তিনি সদা তৎপর ছিলেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সেবা দিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে তিনি একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

নেতৃবৃন্দ সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে বলেন, ডা: মঈন উদ্দিন বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক যিনি করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ডা: মঈন চিকিৎসা সেবায় নিজের জীবন দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা এ পেশায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তার ৭ ও ১২ বছর বয়সের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বাবাকে হারিয়ে পরিবারটি যেমন শোকে স্তব্ধ তেমনি তাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তাঁর পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোড় দাবী জানাচ্ছি। অন্যদিকে এখনো অনেক চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যাদের উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই। ইতিমধ্যে বহু চিকিৎসকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সুতরাং অবিলম্বে চিকিৎসকদের উন্নত মানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করতে হবে। তাছাড়া খেটে খাওয়া মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী নিশ্চিত না হওয়া এবং তদুপরি সরকার-দলীয় লোকজন কর্তৃক গরীবের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল-তেল চুরি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে সামাজিক দূরত্ব এখনো নিশ্চিত হয়নি। যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এ অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে সঠিক প্রক্রিয়ায় ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করা, সচেতনা বৃদ্ধি ও আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আমরা মহান আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে দোয়া করছি তিনি যেন ডাঃ মঈন উদ্দিনকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। একই সাথে তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন। অন্যান্য যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের শোক প্রকাশ করছি এবং স্বজন হারানো শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দোয়া করছি মহান আল্লাহ যেন অসুস্থদের দ্রুত সুস্থ করে দেন এবং বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন।