রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০১৯

ছাত্রশিবিরের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রকাশনা সামগ্রীর মোড়ক উন্মোচন

নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে সৃজনশীল প্রকাশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে-শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন বলেছেন, দু:খজনকভাবে আগামী প্রজন্মের বিশাল একটি অংশ আজ অনৈতিকতা, মূল্যবোধহীন ও বিপদগামীতার পথে হাটছে। তরুণ সমাজকে বিপদগামী করতে অপসংস্কৃতি বিরাট ভূমিকা রাখছে। আর অপসংস্কৃতির প্রসারে অশালীন প্রকাশনার ভূমিকা রয়েছে। এ অশুভ কালো ছায়া দিন দিন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মূল্যবোধহীনতার বিপরীতে নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রকাশে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ছাত্রশিবির প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রকাশনা সামগ্রীর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক রাজিবুর রহমান পলাশের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিবির সভাপতি বলেন, অসভ্য সংস্কৃতির ভয়ঙ্কর রুপ দেখছে দেশাবাসী। যে দেশে আদব, সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, লজ্জাশীলতা ছিল সমাজের অলঙ্কার, সে সমাজেই এখন ২ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সন্তানের হাতে পিতা-মাতা, আবার পিতা-মাতার হাতে সন্তান মর্মান্তিক ভাবে খুন হচ্ছে। ছোট ছোট শিশু কিশোররা পর্যন্ত ভয়ঙ্কর বিভৎস ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। দেশের মানুষ আজ গভীরভাবে শঙ্কিত। এসব কিছুর মূলে রয়েছে মূল্যবোধের অবক্ষয়। আর অবক্ষয়ের জন্য অশালীন ও নোংরা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনেকাংশেই দায়ী। এ চিত্র একটি মুসলিমপ্রধান দেশের জন্য চরম লজ্জার বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের ব্যবধানে জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলবে। আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে বিজাতীয় সংস্কৃতির মাধ্যমে। যার পরিণতি হবে আরো ভয়াবহ।

তিনি বলেন, ছাত্রশিবির একটি আদর্শিক ও গতিশীল সংগঠন। সরকারের শত নির্যাতন এই সংগঠনের ধারাবাহিক কাজে কোন বাঁধার সৃষ্টি করতে পারেনি। যার প্রমাণ আজকের এই অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের মত আল্লাহর রহমতে আমরা যথাসময়ে ছাত্রসমাজ ও দেশবাসীর চাহিদার আলোকে প্রকাশনা সামগ্রী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সামগ্রীর মাধ্যমে আমরা বরাবরই ইসলাম ও বাংলাদেশের ইতিহাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরেছি। ছাত্র ও তরুণ সমাজের কাছে ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার বিপুল চাহিদা রয়েছে। আমাদের নানামুখী গঠনমূলক কার্যক্রমের এটি একটি উদাহরণ মাত্র। নানামুখী গঠনমূলক কার্যক্রমই ছাত্রশিবিরকে দেশের মানুষের হৃদয়ের অভ্যন্তরে পৌছাতে সাহায্য করেছে। ফলশ্রুতিতে দেশের হাজারো তরুণ প্রতিনিয়ত ছাত্রশিবিরের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছাত্রশিবির ও অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পার্থক্য সুস্পষ্ট। বর্তমানে ক্ষমতার আশ্রয়ে থাকা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনসহ ইসলাম বিবর্জিত আদর্শে লালিত সংগঠনগুলো কী করছে, আর নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ছাত্রশিবির কী করছে তা দেশবাসী ভালো করেই জানেন। ছাত্রশিবির যখন মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার নাম, তখন অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। যার ফলে আজ অনেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলেন। আমরা সুস্পষ্ট বলতে চাই, বাংলাদেশকে গড়তে হলে ছাত্রশিবিরের আদর্শিক রাজনীতি ছাত্রসমাজের মাঝে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় সভাপতি বার্ষিক প্রকাশনা সামগ্রী প্রস্তুতিতে অবদান রাখা প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে উত্তম প্রতিদানের জন্য দোয়া করেন। এরপর কেন্দ্রীয় সভাপতি অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে প্রকাশনা সামগ্রীর মোড়ক উন্মোচন করেন এবং প্রকাশনা প্রদর্শনীস্থল পরিদর্শন করেন। প্ররিদর্শন শেষে প্রদর্শনীয় মন্তব্য ডিস্পেøতে মন্তব্য লিখেন।

উল্লেখ্য, প্রতিবছরই নতুন বছরের জন্য আকর্ষণীয় প্রকাশনার আয়োজন করে ছাত্রশিবির। প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে এক পাতা ও তিন পাতা ক্যালেন্ডার, টেবিল ক্যালেন্ডার, ছোট-বড় বাংলা ও ইংরেজি ডায়েরি, ইসলাম ও সচেতনতামূলক বাণী সম্বলিত ষ্টিকার ইত্যাদি।

শাহাদাত হোসাইন
প্রচার সম্পাদক
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

সংশ্লিষ্ট