বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮

আসন্ন নির্বাচনে ছাত্রসমাজকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে-শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগামী দিনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইসলাম রক্ষা, ছাত্রসমাজের অধিকার আদায় এবং জুলুম থেকে মুক্তির প্রশ্নের সাথে আসন্ন নির্বাচন জড়িত। এক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনে ছাত্রসমাজকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের বার্ষিক সেক্রেটারিয়েট বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইনের পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিনসহ সেক্রেটারিয়েটবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, বাকশালী সরকার জনগণের উপর সীমাহু জুলুম নিপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রসমাজের উপর যে নিপীড়ণ চালানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণের শিকার হয়েছে। ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী আদায় করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের মন্ত্রী এমপিদের হুমকি ধামকি কটুক্তি সহ্য করেছে। পুলিশের বর্বর হামলা গুলি নির্যাতনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। পুলিশী হামলায় ছাত্ররা চোখ হারিয়েছে, রঞ্জিত হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। নির্বিচারে গ্রেপ্তারের শিকার হয়ে বহু ছাত্র বিনা অপরাধে জেল খেটেছে। একই ভাবে অবৈধ সরকারের নির্দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় ছাত্রসমাজের উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়েছে। নিরপরাধ মেধাবী ছাত্রদেরকে বর্বর নির্যাতন ও হাতুড়িপেটা করেছে জঙ্গি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্য ছাত্রীদের উপর হামলে পড়ে শ্লীলতাহানী করেছে। ছাত্রলীগ নামক হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। নিরাপদ সড়কের দাবী জানাতে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ যে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে তা শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বিশ্বেও নজীরবিহীন। প্রতিটি ক্যাম্পাসে সরকার ও প্রশাসনের মদদে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ছাত্রলীগ। এরা পবিত্র শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস, মাদক, অশ্লীলতা ও অস্ত্রের মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে সরকারের শিক্ষা বিরোধী কার্যক্রম ও ছাত্রলীগের সার্বিক সন্ত্রাসে শিক্ষা ব্যবস্থা চূড়ান্ত ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, শুধু ছাত্র সমাজ নয় বরং দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ আজ নির্যাতিত নিপীড়িত ও অধিকার বঞ্চিত। জনগণ চরম অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যে জীবন যাপন করছে। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি ও নতজানুর নীতির মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আইন আদালতকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে প্রতিপক্ষকে দমনের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। দেশে স্থাপন হচ্ছে একের পর এক অবিচারের নিকৃষ্ট নজির। অন্যদিকে দলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ছাত্রজনতার জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলা হয়েছে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীরা জুলুম নির্যাতন চালিয়ে গোটা দেশকে ভীতির জনপদে পরিণত করেছে। এমনকি দলীয় সন্ত্রাসীরা নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও নির্মম ভাবে খুন করছে। আর পুলিশ প্রশাসন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দায়িত্বকে ভুলে গিয়ে নিরাপরাধ ছাত্রজনতার বুকে গুলী চালাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের এই বিভীষিকাময় অবস্থার পরিবর্তনে আগামী নির্বাচন জাতির জন্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ অবৈধ বাকশালী সরকারের রাহু গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে প্রহর গুনছে। দেশের মানুষ ছাত্রসমাজের দিকে তাকিয়ে আছে। ছাত্রসমাজের দৃঢ় অবস্থান ও ভূমিকার উপর নির্ভর করছে আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সুতরাং নিজেদের কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ ও জাতিকে মুক্ত করতে, বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে আসন্ন নির্বাচনে ছাত্রসমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।