শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

মো: আবু তালেব

প্রেরণার একটি নাম শহীদ আমিনুর রহমান

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

সকল প্রকার জুলুম নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন নিয়ে রাসুল (স:) এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। একটি আত্মনির্ভরশীল সুখী সমৃদ্ধ ও আদর্শিক জাতি উপহার দেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য।

ঐতিহাসিক এই কাফেলার অগ্রযাত্রাকে রুখে দেওয়ার জন্য অত্যাচার, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের পথ প্রশস্ত হতে থাকে। নির্যাতন ও শাহদাতবরন করিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা অংকুরে বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা অব্যহত। দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়দীপ্ত সংগঠন শহীদি কাফেলা নাম ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে তার অভিষ্ট লক্ষ্যপানে। আন্দোলনের বৃক্ষকে সতেজ ও সজীব রাখার জন্য বৃক্ষের গোড়ায় রক্ত সিঞ্চন করে চলেছে কুরআনের বিপ্লবী সৈনিকেরা। 

প্রশাসনের সমস্ত বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে শৃঙ্খলিত মানবতার কর্ণে পৌঁছে দিচ্ছে আল কুরআনের শাশ্বত বানী। আওয়ামী লীগ সরকারের পৈশাচিক কর্মকান্ড সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। যাবে না লেখা রিমান্ড ও শাহাদাতের বিভিন্ন অপ্রকাশিত কথাগুলা। কারাগার থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিও ৫ অর্জন করেছে শিবিরের জনশক্তিরা। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শিবিরের প্রয়োজন কতটুকু ।

মাঝে মাঝে মনে হয় এ পথ থমকে যাচ্ছে, দুর্দান্ত প্রতাপে চলা এ মিছিল থেমে যায়! কিন্তু আবার চলে, কেনইবা থামবে, এ মিছিল থামতে পারে না, কোন দিনও না। পাড়ি দিতে হবে অনেক রক্ত পিচ্ছিল পথ। এ মিছিলের মঞ্জিল অনেক দূর ....

আল্লাহ তা’আলা নিজেই আমাদের শান্তনা দিচ্ছেন
“ وَلاَ تَهِنُوا وَلاَ تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ” অর্থাৎ তোমার দূর্বল হয়ো না, তোমরা হতাশ হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। (আলে ইমরান-১৩৮)

শহীদ আব্দুল মালেক থেকে শুরু করে শহীদ আলী মোস্তফা, আমানউল্লাহ, সামসুজ্জামান খান রেজা, রফিকুল ইসলাম, মোস্তফা অরিফুজ্জামান, আরিজুল ইসলাম, হোসেন আলী, ইকবাল হাসান তুহিন, আলী মোস্তফা (২), আবু হানিফ ছোটন, আবুল কালাম ও শহীদ আমিনুর রহমান সহ অসংখ্য ভাই শাহদাৎ বরণ করেছে বাতিল শক্তির হাতে। রক্ত দানের ইতিহাস এককথায় প্রমাণ করে, বাংলার জমিনে ইসলামী বিল্পব প্রতিষ্ঠার পথে কোন শক্তিই আর বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না ।

ইসলামী আন্দোলনের মদীনা নামে খ্যাত সাতক্ষীরা। ইসলামী ছাত্রশিবির সকল ছাত্র-জনতার ভালবাসায় সিক্ত হয়ে তার আদর্শিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাতিলের পাহাড় সমান ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ৩৭ জন ভাই এর শাহাদাৎ এবং অসংখ্য ভাইয়ের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে সাতক্ষীর 'শহীদি জনপদ' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

শহীদের বিষয়ে কুরআনে একাধিকবার বলা হয়েছে, তাঁরা অমর। তাদের কে মৃত বলা হারাম করা হয়েছে ।
আল্লাহর ঘোষনা -
وَلَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ يُّقۡتَلُ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اَمۡوٰتٌؕ بَلۡ اَحۡيَآءٌ وَّلٰكِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ‏

যারা আমার রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না , বরং তারা জীবিত কিন্তু সে বিষয়ে তোমরা উপলদ্ধি করতে অক্ষম ( সুরা বাকারা-১৫৪)
“ وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاء عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُون
সাবধান, আল্লাহর রাহে যারা জীবন উৎসর্গ করেছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলোনা। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তাদের জন্য জান্নাতের রিজিক বরাদ্দ রয়েছে” ( সুরা ইমরান -১৬৯)

কবি Binyon বলেন“As the stars that are starry in the time of our darkness. To the end , to the they remain”
শহীদেরা বৃদ্ধ হয় না , অসুস্থ ও নিস্ক্রিয় হয় না । শাহদাতের সময় যে উন্মাদনা নিয়ে তাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছে অনন্তকাল সে জীবনী শক্তি নিয়ে বেচে থাকে ।

যে স্মৃতি প্রেরণার

৩৭ শহীদের পূণ্যভূমি ইসলামী আন্দোলনের মদীনা নামে খ্যাত সাতক্ষীরা জেলা। ৩৭ শহীদের মিছিলে হয়তো একজন নেতার প্রয়োজন ছিল। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দা আমিনুর রহমানকে শহীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাছাই করেছেন।

শহীদ আমিনুর, শাহদাতের চেতনায় উজ্জীবিত একটি নাম, বিষ্ময়কর প্রতিভা ও জীবন্ত ইতিহাস। শহীদ আমিনুরের রেখে যাওয়া প্রতিটি মুহুর্ত আমাদের কাছে কষ্টের, বেদনার ও প্রেরণার । শহীদ আমিনুর ভাইয়ের স্মৃতি আমাদের কাছে সম্পদ, সেটা কোনদিন হারাবার নয়।

শহীদ আমিনুর জান্নাতের সবুজ পাখি। স্বপ্নের ডানা মেলে আর আসেনা, আসবেও না, পথ হারা ছাত্রদের মাঝে সুমহান আদর্শের দাওয়াত দিতে। আসবেনা মিছিলে নারায়ে তাকবীর ধ্বনি ও সমাবেশে বলিষ্ঠ কন্ঠে বক্তব্য দিতে। পুলিশের রাইফেল থেকে বের হওয়া বুলেটের আঘাতে যার বেঁচে থাকার ইচ্ছাগুলো মুহুর্তে ম্লান করে দিয়েছে, স্তব্ধ করে দিয়েছে জীবন চলার পথকে। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে তার স্বপ্নগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছে লাখো স্বতীর্থের হৃদয়ে।

মাকে বলা কথা : আমিনুর ভাই একদনি মাকে একান্তে ডেকে এ কথাগুলো বললেন : ওমা! মাগো তোমার তো অনেক সন্তান। তুমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করোনা। আমার যদি কোনোদিন কিছু হয়ে যায় তুমি কোন কষ্ট পাবে না তো? কেননা আমার তো অনেক ভাই আছে তাদেরকে নিয়ে তুমি ভাল থেকো। মা কান্না জড়িত কন্ঠে বললো- আজ থেকে আমি তোকে আল্লাহর পথে দিয়ে দিলাম।

শাহদাতের তামান্না যদি কোন মুমিনের জীবনে থাকে, তিনি আল্লাহর পথে গাফেল হতে পারে না । কারো জীবনে তামান্না আছে কিনা তা তার কর্মতৎপরতায় পরিলক্ষিত হয়। দুনিয়ার কোন লোভ লালসা, ভয়-ভীতি তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। আমিনুর রহমান ছিলো সেই শাহদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত এক নাম।

ব্যক্তিগত পরিচয় : ১৮ মার্চ ১৯৮৪ সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ থানার রঘুনাথপুর গ্রামে মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ১২ ভাই বোনের মধ্যে ১১ তম। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২১১ তম শহীদ।

শিক্ষা জীবন : শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি রহমতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১ম-৫ম শ্রেনী। নবযুগ শিক্ষা সোপান থেকে ২০০২ সালে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। ২০০৪ সালে শ্যামনগর সরকারী মহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ২০০৯ সালে (বিএ সম্মান) এবং খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১১ সালে এমএ (বাংলা) সমাপ্ত করেন। আমিনুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। স্বপ্ন ছিলো সামাজের অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো। সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল জুলুমবাজ সরকারের হিংস্র থাবা। দুনিয়ার কোন সফলতা, আখেরাতের তুলনায় যার কাছে ছিলো মূল্যহীন । তাইতো দুনিয়ার কোন মোহ বা পুরুস্কার তাকে আকৃষ্ট করতে পারিনি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন -

فَلۡيُقَاتِلۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ الَّذِيۡنَ يَشۡرُوۡنَ الۡحَيٰوةَ الدُّنۡيَا بِالۡاٰخِرَةِ‌ؕ وَمَنۡ يُّقَاتِلۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ فَيُقۡتَلۡ اَوۡ يَغۡلِبۡ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيۡهِ اَجۡرًا عَظِيۡمًا

সমাজসেবক : তিনি আন্দোলনের সাথে সাথে পরিবার ও সমাজের মানুষেকে নিয়ে ভাবতেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য নিজে ছুটে যেতেন। পরিবারের একমাত্র আস্থা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অসুস্থ বোনকে নিজে রক্ত দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে রক্তদাতার নাম জানাতে নিষেধ করেন। এভাবে পরিবার ও সমাজের মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। অসুস্থ মানুষের দেখার জন্য ছুটে যেতেন হাসপাতালে ও বাসা-বাড়ীতে। এলাকার যে কোনো সমস্যায় আমিনুর রহমান ছুটে যেতেন তাদের পাশে এবং সমাধানের চেষ্টা করতেন। এলাকায় সকল মানুষের আস্থার একটি নাম আমিনুর রহমান। তারা আমিনুর রহমানকে এলাকার জনগনের নেতা হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।

আমানাতদারী ও তাকওয়া : আমানাতদারী ও তাকওয়ার ব্যাপারে নিজেকে উদাহারণ হিসেবে পেশ করেছে । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন ..
وَمِنَ الَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ‌ۖ عَسٰىۤ اَنۡ يَّبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحۡمُوۡدًا‏
আর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ো এটি তোমার জন্য নফল। তোমার রব তোমাকে “প্রশংসতি স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন। (বনী ইসরাঈলঃ ৭৯)

নিয়মিত কুরআন হাদীস অধ্যয়ন , নফল রোজা ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রীয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করতেন । কুরআন-হাদীসের আলোকে নিজের জীবন পরিচালনায় উজ্জল দৃষ্টান্ত । আমানতের ব্যাপারে স্বচ্ছ চিন্তার অধিকারী ছিলেন । আমি, কোন একটা বিশেষ কাজে, কিছু টাকা দিয়েছিলাম । আমি জানতাম সকল টাকা নিদ্দিষ্ট কাজে খরচ হয়ে গেছে । কিন্ত শাহদাতের পরে ২ জন ভাই অর্থ সম্পাদকের কাছে ৪০,০০০/ (চল্লিশ হাজার ) টাকা ফেরত দিয়েছিলো । তারা বললো , আমিনুর ভাই শাহদাৎ বরণ করার আগে এই টাকাটা আমাদের কাছে রেখেছিলো। আমিনুর ভাই টাকা রাখার পরে অর্থ সম্পাদকের সাথে সমন্ময় করেছিলো । শাহদাতের ২ দিন পূর্ব পর্যন্ত নিজ ডায়েরীতে সংগঠনের সকল হিসাব সংরক্ষিত ছিলো। ব্যক্তিগত রিপোর্ট লেখা ছিলো ২৪.৪.১৪ পর্যন্ত ।
পবিত্র কুুরআনে আমানাতের হুকুম, শহীদ আমিনুর রহমান পুঙ্খানু-পুঙ্খানু রূপে বাস্তবায়নে সদা তৎপর --

اِنَّ اللّٰهَ يَاۡمُرُكُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوۡا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰٓى اَهۡلِهَاۙ وَاِذَا حَكَمۡتُمۡ بَيۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡكُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمۡ بِهٖ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ سَمِيۡعَۢا بَصِيۡرًا‏

সাংগঠনিক জীবন : ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি। তৎকালীন জেলা সেক্রেটারী আব্দুল আলিম ভাইয়ের কাছে কর্মী কর্ন্টাক দেন । ৫ দফা কর্মসুচি ,কর্মীর শর্ত , কেন শিবির করবা ইত্যাদি প্রশ্ন করার পর মেহমান আমিনুর ভাইকে কর্মী ঘোষনা করেন । সেই থেকে আমিনুর রহমান শহীদি কাফেলার কর্মী । নবযুগ স্কুল সভাপতির দায়িত্ব কাধে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে । ২০০১-০৪ সাল পর্যন্ত কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন সেক্রেটোরী । সেক্রেটারীর দায়িত্বরত আবস্থায় সংগঠনের সাথী শপথ নেন। ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন । ২০০৭ কালিগঞ্জ পুর্ব থানা সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । কঠোর পরিশ্রমে থানা শাখার কাজকে জেলার দৃষ্টি গোচরে আনতে সক্ষম হন । পাশ্ববর্তী থানা, আশাশুনি সংগঠন মজবুতির জন্য হিজরত করিয়ে ২০০৮ সালে আশাশুনি থানা সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আশাশুনি থানা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে সংগঠনের মজবুত ঘাটি তৈরি করতে সক্ষম হন । আশাশুনি দায়িত পালনকালে ২০০৮ সালে সংগঠনের সদস্য হয়েছিলেন । ২০১০ সালে সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । নির্ভীক সাহসিকতার সহিত সরকারী কলেজের কাজকে এগিয়ে নিতে কঠোর পরিশ্রম করেন ।

২০১১ সালের জুন, সাতক্ষীরা শহর শাখার ছাত্রকল্যাণ ও ফাউন্ডেশন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । ফাউন্ডেশনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দিন রাত পরিশ্রম করে । ২০১২ সালে শহরের স্কুল ও প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন । অমিনুর ভাইয়ের পদচারনায় শহরের স্কুলগুলো মুখরিত ছিলো । তার একটাই চিন্তা ছিলো শহরের স্কুলে কোমলমতি ছাত্রদের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌছানো। ২০১৩-১৪ সাল শহরের সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালনকালে ২৭.৪.১৪.শাহদাৎ বরণ করেন । শাহদাতের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি একজন সফল সংগঠক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন । স্কুল সভাপতি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন সেক্রেটারী , সভাপতি ,থানা সভাপতি কলেজ সেক্রেটারী ,সভাপতি সহ শহরের বিভিন্ন বিভাগে নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন করেন । যেখানে দায়িত্ব পালন করেছে নিষ্টা ও পরিশ্রম প্রিয়তার কারনে সকল জায়গায় সংগঠনকে গড়তে সক্ষম হয়েছে ।

সে কারণে উদ্ধতন দায়িত্বশীলরা বার বার ভিন্ন ভিন্ন শাখা মযবুতি অর্জনের জন্য আমিনুরকে বেছে নিয়েছে । সর্বশেষ শহর স্কুল সম্পাদক থেকে শহর সেক্রেটারী হিসেবে মনোনিত হয়েছে ।যিনি সর্বদা বৈষায়িক কাজের থেকে সাংগঠনিক কাজকে বেশি গুরুত্ব দিতেন । আল্লাহর হুকুম পালনে সদা তৎপর... নিন্মোক্ত আয়াতের প্রতিচ্ছবি ।

وَلۡتَكُنۡ مِّنۡكُمۡ اُمَّةٌ يَّدۡعُوۡنَ اِلَى الۡخَيۡرِ وَيَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ‌ؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

” আল্লাহ যাকে ভালবাসে , ফেরেস্তাদের ডেকে বলে, ওহে ফেরেস্তারা শোন ! আমি (আল্লাহ ) ওই ব্যক্তিকে ভালবাসি তোমরা ও ভালবাস । ফেরেস্তারা দুনিয়ার মানুষদের ডেকে বলে , ওহে মানুষেরা শোন ! ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালবাসে ,আমরা ( ফেরেস্তারা ) ভালবাসি তোমরা ও ভালবাস ” ।
আল্লাহ যাকে ভালবাসে দুনিয়ার মানুষতো তাকে ভালবাসবেই ।

নির্ভীক ও সাহসী : সাতক্ষীরা শহর শাখায় নির্ভীক , সাহসী একটি নাম আমিনুর রহমান । সরকারী কলেজে দায়িত্ব পালন কালে প্রতিটি মুহুর্ত পেরেশানীর মধ্যে কাটাতো দায়িত্বশীলরা । কিন্তু আমিনুর রহমানের পদচারনায় মনে হতো কোন ভয় তাকে তাড়া করতে পারিনি । অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপের জন্য কঠিন সময়ে ও সরকারী কলেজের অবস্থান ভাল ছিলো।

২০১৩ সালে সাতক্ষীরার আন্দোলন- সংগ্রামে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন । কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচি ঘোষনা হলেই তা বাস্তবায়নের জন্য অমিনুর রহমান সদা তৎপর । ২০১৩ সালে নব মনোনীত সভাপতি মো: রোকনুজ্জামান ভাই এর পা ভেঙ্গে যাওয়াতে ১৩ সালের কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রেফতার ,দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ,শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মুক্তির দাবিতে সাতক্ষীরায় আন্দোলনের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো তার নেতৃত্ব দিয়েছিল আমিনুর রহমান । সারা বাংলাদেশ থেকে সাতক্ষীরা বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের অগ্রসৈনিকের দায়িত্ব পালন করেন আমিনুর রহমান । শহরের যে স্পটে মিছিল ও পিকিটিং- এ সমস্যা ও ঝুকিপুণ মনে হতো , নিজে সেই এলাকা বেছে নিয়ে আমাকে ঝুকিমুক্ত স্থানে পাঠাতো ।

একাধারে তিনি ছিলেন একজন ভালো অলোচক । নিয়মিত মিটিংয়ে তার অলোচনায় কর্মী ও সাথীরা খুজে পেত কাজের প্রেরণা ও মান উন্নয়নের আকাঙ্খা । অবরোধে দীর্ঘ সময় অবস্থানে জনশক্তি প্রেরনা ছিলো আমিনুর ভাইয়ের আলোচনা । সাহসী নেতৃত্ব ও আলোচনার মাধ্যমে ১৮ দলীয় নেতৃবিন্দ ও সকল স্থরের মানুষের কাছে একজন সফল নেতা হিসেবে অল্প দিনে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয় ।

গ্রেফতার ,মিছিলে গুলি ও প্রশাসনের ঘোষণা সভাপতি , সেক্রেটারীকে যেখানে পাবে গুলি করে মারবে । কোন কিছুই যেন তাকে দমাতে পারি নি । হার না মানা এক নাম । এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও কেন্দ্রের সকল কর্মসূচি সফল করার ব্যাপারে আপোষহীন।

১৮ জানুয়ারী ২০১৪ যৌথ বাহীনির গুলিতে শাহদাতবরণ করেন শহর শাখার কর্মী আবু হানিফ ছোটন । সকালে আমিনুর ভাইকে ছোটন ভাইয়ের বাড়ীতে পাঠালাম । পরিবারের সকলকে সান্তনা দিয়ে , উপস্থিত শহীদের সাথীদের দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করলো । বিকাল গড়িয়ে সন্ধার পরে লাশের কফিন পুলিশ প্রহরায় বাসায় পৌছায় । উপস্থিত সকলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে জানাযার পরামর্শ দেন । আমি , আমিনুর ভাই ও ইকবাল হুসাইন ভাই পরামর্শ করে একমত হই যে, আমাদের প্রীয় ভাই যিনি শাহদাত বরণ করেছে , আমরা আমাদের ভাইকে এ ভাবে বিদায় দিতে পারি না । জানাযা পূর্ব সমাবেশ হবে, তারপর জানাযা সম্পন্ন হবে । আমিনুর ভাই অশ্রুসিক্ত নয়নে শহীদ ছোটন ভাইয়ের কফিনের সামনে দাড়িয়ে স্মৃতিচারণ করে । স্পষ্ট ঘোষনা করে এক আবু হানিফ ছোটন নয় , প্রয়োজন হলে অনেকে শহীদ হতে প্রস্তুত, শহীদ করে আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবেনা । কে জানতো দীপ্ত কণ্ঠে স্মৃতিচারণকারী ব্যক্তিটি ২ মাস পরে শাহদাত বরণ করে নিজেই স্মৃতিচারণের পাত্র হবেন । সেদিন আমিনুর ভাইয়ের সাহসী ভুমিকায় আমরা আমাদের প্রিয় ভাইকে সকল ভয়- ভীতির উর্ধ্বে সন্তোষ জনক ভাবে বিদায় দিতে পেরেছিলাম।

কবি গোলাম মোস্তফা - কেউ বা হবে সেনানায়ক গড়তে নুতুন সৈন্যদল
সত্য ন্যায়ের অস্ত্র ধরি , নাই বা থাকুক অন্যবল ।

অনুকরনীয় ও অনুসরনীয় : পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন -
لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِىۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنۡ كَانَ يَرۡجُوۡا اللّٰهَ وَالۡيَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَذَكَرَ اللّٰهَ كَثِيۡرًاؕ‏
আসলে তোমাদরে জন্য আল্লাহর রসূলরে মধ্যে ছলি একটি উত্তম আর্দশ এমন প্রত্যকে ব্যক্তরি জন্য যে আল্লাহ‌ ও শষে দনিরে আকাঙ্ক্ষী এবং বশেী করে আল্লাহকে স্মরণ কর।ে (আল আহযাবঃ ২১ )

আমিনুর রহমান ছিলেন রাসুল (স:) আদর্শ অনুসরনের অনন্য প্রতিক । প্রতিটি মুহুর্ত রাসুল স: এর আদর্শের মধ্যে জীবন পরিচালনা করতে চেষ্টা করতেন । ইসলামী ছাত্রশিবিরের এই নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল সংগঠনের জন্য সব সময় পেরেশান থাকতেন, কিভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নেয়া যায়। বাড়ী থেকে দীর্ঘ ২০ কিঃ মিঃ কর্দমাক্ত পথ পায়ে হেটে মাসিক সাথী বৈঠক ও দায়িত্বশীল বৈঠকে কালিগঞ্জ এ আসতেন । কোন মিটিং-এ দেরি করে আসতেন না । নরমল জামা- কাপড় পরে, আর ভাল শার্ট-প্যান্ট ব্যাগে নিয়ে আসতেন । বৈঠকে প্রবেশের পূর্বে কাদা-পানিতে ভেজা ড্রেস পরিবর্তন করে, ভালো ড্রেজ পরে বৈঠক করতেন। ১১ মার্চ-১৪ দিনব্যাপি ওয়ার্কশপ ছিল । সন্ধা ৭ টায় হটাৎ যৌথ বাহিনী আভিযান। আমিনুর ভাই সকলকে নিরাপদে সরিয়ে দিয়ে , সকলের শেষে মিটিং স্থল থেকে নিরাপদে যায় । থানা শাখায় দায়িত্ব পালন কালে উর্দ্ধতন শাখা থেকে ধার্যকৃত বায়তুলমাল ও এককালিন টাকা নিদ্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করে দিতো। কোন দিন সুপারিশ করেন নি বা সময় নেননি । প্রয়োজনে ঋণ করে পরিশোধ করেছে । শাহদাতের ২ দিন পূর্ব পর্যন্ত নিজের ডায়েরীতে সকল হিসাব সংরক্ষিত ছিল । ২৪ তাং পর্যন্ত ব্যক্তিগত রিপোর্ট লেখা ছিল । কোন দায়িত্ব দেওয়ার পরে ঐ দায়িত্ব পরিপূর্ণ ভাবে পালন করাই ছিল একমাত্র লক্ষ । ভয়-ভীতি ,ক্ষুধা ও কোন প্রতিবন্ধকতা ওই দায়িত্ব পালন থেকে পিছিয়ে রাখতে পারিনি । আমাকে ছাড়া তিনি একা কোনদিন খাবার খেতেন না । একান্ত সফরে থাকলে ফোন করে আমি খেয়েছি কিনা খোজ নিয়ে নিজে খেতেন ।

শাহদাতের প্রেক্ষাপট : ২৭ এপ্রিল ২০১৪ কেন্দ্রের নিয়মিত সফর । রাত্রে দেলোওয়ার ভাই জানালেন আগামী কাল খুলনা মহানগর সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী ভাই আপনাদের শাখায় সফর করবেন । ভাইয়ের সাথে কথা বললাম । আমি ও আমিনুর ভাই একত্রে সে কন্টাক এবং সাথী পাঠচক্র এর স্থান ও সময় ঠিক করি । ফারাজী ভাই সকাল ১০ টায় পৌছায় সফর সঙ্গী ছিল আক্তার হোসেন । ২ স্থানে কন্টাক্টের ব্যবস্থা করা হয় । ১২ টা পর্যন্ত সিটি কলেজ মেচে কন্ট্রাক্ট নেয়। এর পর ফারাজী ভাইকে নিয়ে আমিনুর ভাইয়ের ওখানে পৌছে দিয়ে আসি । নিরাপত্তার বিষয়গুলো ঠিক আছে কিনা জিঞ্জাসা করি এবং ভালভাবে মেহমানদারী করার কথা বলি । কন্টাক্ট শেষ হলে আমাকে ফোন দিতে বলি । প্রায় তিনটায় কন্টাক্ট শেষ হয় । আমি ভাইকে নিয়ে কামালনগর মেসে যাই এবং আমিনুর ভাইকে খাবার নিয়ে আসতে বলি । বাসায় পৌছে যোহরের নামাজ আদায় করলাম । ভাই পরবর্তী কর্মসুচি সম্পর্কে জানতে চায়। খাওয়া শেষ হলে পিছনে এক বাসায় বিশ্রাম নেবো। ৪ টায় পাঠচক্র । প্রশ্ন করলো কত দুর ? ৩ কি:মি:। রাত্রে এক বাসায় থাকবো। এরমধ্যে আমিনুর ভাই খাবার নিয়ে চলে আসলো। খাবার শুরু করলাম । আমিনুর ভাই মেহমানদারী করছে । ফারাজী ভাই আমিনুর ভাইকে আমাদের সাথে বসার জন্য পিড়াপিড়ি করলো । ইতিপুর্বে আমিনুর ভাই কোন মেহমানের সাথে বসে খেতো না । মেহমানকে নিজে হাতে খাইয়ে পরে নিজে খেতো। কিন্তু আজ ঘটলো ব্যতিক্রম । সবাইকে খাবার উঠিয়ে দিয়ে পরে নিজে নিচ্ছে । ফারাজী ভাই আমিনুর ভাইয়ের থালায় একটা চিংড়ি,কলিজা এবং আমি একটা চিংড়ি মাছ তুলে দেই । কে জানতো এটাই হবে আমিনুর ভাইয়ের শেষ খাওয়া।

খাওয়ার পরে ভাইকে পিছনের বাসায় বিশ্রামের জন্য নিয়ে যেতে চাই ,ভাই বললো এখানে তো ভালো আছি , আর ৪ টায় পাঠচক্র সময়ও তো কম, এখানে থাকি । ৩.৪৫ হটাৎ গেটে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিলো ,আমি কিছু বুঝে উঠার আগে বললাম খুলেন না । এরমধ্যে বাহিরে তাকিয়ে দেখি ৪/৫ জন রাইফেল হাতে পাচিল টপকে ভিতরে প্রবেশ করলো। সাথে সাথে ২৫/৩০জন ডিবি অস্ত্র তাক করে ঘিরে ফেললো। মুহুর্তের মধ্যে শতাধিক পুলিশ বাড়ির ভিতরে বাহিরে আবস্থান নিল। আমি গেটের কাছে দাড়ালাম ডিবি ওসি আব্দুল হান্নান আমাক বললো ,তালেব তুমি এখানে থাক ? আমি বললাম হ্যা। ঘরে প্রবেশ করতে করতে জিঞ্জাস করলো খুলনা থেকে ২ জন আসছে তারা কই । সবাইকে একরুমের মধ্যে নিয়ে গেল । আমি ও আমিনুর ভাই ২ জন কিংকত্যর্ববিমূঢ় । আমার ও আমিনুর ভাইয়ের গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি ছিলো । উনি আলনা থেকে আমার একটা টি-শার্ট পরলো । আমি আমিনুর ভাইকে আলনা থেকে একটা টি-শার্ট দিতে বললাম । এটাই আমি ও আমিনুর ভাইয়ের মাঝে শেষ কথা । আবার সকলের উদ্দেশে জানতে চাইলো খুলনা থেকে ২ জন আসছে তারা কোথায় । এরমধ্যে ফারাজী ভাই বললো আমি এবং আক্তার । পরিচয় জানতে চাইলো ফারাজী ভাই আজিজুর রহমান বললো ,সাবেক সদস্য খুলনা । ভাইকে ৩ থাপ্পড় দিয়ে বললো আমি কিন্তু তোমার পারচয় জানি । সত্য না বললে আমরা বাহির করতে পারি । সকলের হাতে হ্যান্ডকাফ পরায় এবং পরিচয় শোনে ও লেখে, আমি ছাড়া । কেননা আমাকে তারা পূর্ব থেকে চিনতো। আলমারীর চাবী ,ও গাড়ীর চাবী কোথায় আমার কাছে জানতে চায় । এক,এক করে সকলের নাম, ঠিকানা ও দায়িত্ব জানতে চায় ।

আমিনুর ভাই নাম ,ঠিকানা ও শহর সেক্রেটারী পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে পিস্তল দিয়ে বুকে ধাক্কা দেয় এবং বলে তুই কি পিস্তল ব্যবহার করিস, তোর কাছে পিস্তল থাকে ,কই । হটাৎ বাহিরে গুলির শব্দ । তারা বলে ঐ তোদের লোকজন গুলি করছে । মুহ!মুহ!গুলির শব্দ, আমার বুঝতে বাকি রইল না বড়ো কোন ঘটনা অপেক্ষমান। প্রথমে আমাকে চোখ বেধে বাহিরে নিয়ে গেল। আমিনুর ভাই বললো ভাইকে বাহিরে নিয়ে গেছে মেরে ফেলতে পারে। প্রচন্ড গুলির শব্দের মাঝে হটাৎ চিৎকার শুনলাম ,অনুমান করলাম কাউকে গুলি করছে । এক এক করে সকলের পায়ে গুলি করলো সকলের আর্তচিৎকারে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। সর্বশেষ আমার পায়ে একটা গুলি করলো , ২য় গুলির পরে নিজেকে দাড় করে রাখতে পারলাম না, পড়ে গেলাম । মনে হলো এটা যুদ্ধক্ষেত্র। মাত্র ১০মিনিটে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি করেেছ । আমার চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে হাতে পিস্তল দিয়ে ছবি তুললো । আমি ঘরের ভিতর ও বাহিরের পরিবেশটা দেখার চেষ্টা করলাম । বাহিরে তাকাতেই চোখ দাড়িয়ে গেল । আমিনুর ভাইয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে । আমিনুর ভাইকে ৪ জন হাত-পা ধরে বাহিরে নিচ্ছে । আমি বুঝে ফেললাম আমিনুর ভাই শাহদাৎ বরণ করেছে ( ইন্না লিল্লাহি .....রাজিউন ) নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না ।

অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় ভাইকে দেখে নিলাম । মনে হলো পৃথিবীর সব থেকে ভারী বোঝা আমার কাধে। নিজের কাছে ব্যর্থ দায়িত্বশীল বলে মনে হলো । আমার চোখের সামনে আমার সেক্রেটারী শাহদাৎ বরণ করেছে। এক ,এক করে ৭ জন (আজিজুল ইসলাম ফারাজী , আমি, ইমরান হোসেন, আব্দুল গফুর ,আক্তারুজ্জামান , নূর মোহাম্মাদ এবং আবুস সবুর ) পুলিশের কাঁধে ভর করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠলাম। ফারাজী ভাই এ্যাম্বুলেন্সে উঠার পরে বললো আপনি আছেন? আমি ভাবলাম আপনি নেই । আমি বললাম , আমিনুর ভাই নেই। আমিনুর ভাইকে যখন আমাদের সাথে এ্যাম্বুলেন্সে নিলোনা তখন শাহদাতের বিষয়টা ১০০% নিশ্চিত হলাম । যে ভাইটি আমাকে না বলে খাবার খেত না । সেই ভাইটি আমাকে না বলে চলে গেলো না ফেরার দেশে।

হাসপাতালে নেওয়া হলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার করা হলো শিবিরের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে শিবিরের শহর সেক্রেটারী আমিনুর রহমান নিহত হয়েছে ,এবং বাকী ৭ জন গুলিবিদ্ধ । আমি নিজে অসুস্থ। আপরদিকে আমার প্রিয় সেক্রেটারী এই ভূবন ছেড়ে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন । ভাইকে শেষ বিদায় দিতে পারবোনা । দায়িত্বশীল মারাফত জানতে পারলাম , আমিনুর ভাইয়ের শাহদাতের খবর এলাকায় পৌছালে , গোটা এলাকার পরিবেশ শোকে ভারী হয়ে উঠে। একনজর প্রিয় সাথীকে দেখার জন্য সন্ধা থেকে মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করলো । ২৮ বিকাল ৫ টায় পুলিশ প্রহরায় লাশের কফিন গ্রামের বাড়িতে পৌছায়। শোকার্ত সাথীরা একপলক প্রিয় ভাইকে দেখার জন্য পাগলপারা । কিন্তু এখানে ও প্রশাসনের নগ্ন হস্তক্ষেপ । জানাযার জন্য মাত্র ১০ মিনিট সময় দেওয়া হল । হাজার ,হাজার মানুষের আবেগ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয় । তাতে ও প্রশাসনের হৃদয়ে মানবিকতার ছোয়া জাগেনি। তাদের প্রিয় শহীদ ভাইটিকে শেষ বারের মতো অনেকের দেখা হলো না । অনেকে আক্ষেপ করে বললো , হে আল্লাহ আমাদের প্রীয় সাথীকে যেন জান্নাতে নয়ন ভরে দেখতে পারি ।

শাহদাতর তামান্না যার একান্ত আকাঙ্খা । আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা যাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে সর্বক্ষন। ,তিনি সকলকে পশ্চাতে ফেলে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার প্রতিযোগিতায় এগুয়ে ,চলে গেছেন মহান প্রভুর ডাকে--

وَسَارِعُوۡۤا اِلٰى مَغۡفِرَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيۡنَۙ‏

এমন কি অপরাধ করেছিলো ! যে তাঁদেরকে আত্মপক্ষ সমার্থনের কোন সুযোগ , বিচার পাওয়ার আধিকারটুকু পর্যন্ত দেওয়া হলো না ? পবিত্র গ্রন্থে আল্লাহ বলেন -

وَمَا نَقَمُوۡا مِنۡهُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ يُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ الۡعَزِيۡزِ الۡحَمِيۡدِۙ‏ الَّذِىۡ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ‌ؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ شَهِيۡدٌؕ‏

পিতা মাতাকে সান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা :
সন্তান হারিয়ে নির্বাক বারবার মুর্ছা যাওয়া পিতা-মাতাকে সান্তনা টুকু দিতে পারলাম না। মা ,ওমা, মাগো এসব ভেবে নিজেকে খুব বড়ো স্বার্থপর বলে মনে হচ্ছে। ওমা তোমার প্রিয় আমিনুর কে হারিয়ে তুমি যখন পাগলপারা। কোন সান্তনার বাণী তোমার কান্না থামাতে পারছেনা । এই মুহুর্তে আমি তোমাকে মা ডেকে শুন্য হ্দয়ে একটু সান্তনা দেব সেটা পারলামনা । নিজে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভাই হারানোর বেদনায় ও নিজ যন্ত্রনায় নিস্তেজ প্রায়।

মাগো তোমার আমিনুর আজ অনেক দুরে ,শহীদের মিছিলে। আর কোন দিন তোমাকে মা বলে ডাকবে না , তোমার কাছে খাবার চাইবে না । নিশ্চয় , এসব মনে করে তোমার হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে

ওমা ,মাগো ..আমি তোমার হৃদয়ে আমিনুরের শুন্যতা পূরণ করার জন্য আজ থেকে নিজেকে তোমার কাছে আমিনুর হিসেবে সন্তানের স্নেহ ভালবাসার বন্ধনে আগলে রাখার আবদার করছি । তুমি আমার এ আবদার টুকু রাখবে না ? বলো মা ! আমার মা ডাক তোমার হৃদয়ে শুস্ক মরূভুমিতে এক পশলা বৃষ্টির অনুরূপ প্রশান্তি দিতে পারবে কি জানি না । তবু ও আমাকে মা ডাকার আধিকার থেকে বঞ্চিত করোনা । যতদিন বেঁচে থাকবো শহীদ আমিনুর ভাইয়ের শুন্য জায়গা পুরন করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা অব্যহত রাখবো তোমাকে ডাকবো , মা- ওমা- মাগো । এতে যদি তোমার আন্তরে সাময়িক প্রশান্তি জাগে তাতে আমার স্বার্থকতা ।

মা ! আকাশের বিশালতায় চাঁদের জ্যোতির যে হাসি , তোমার আমিনুর এমন ই এক জ্যোতি হিসেবে তোমার বংশের উজ্জল নক্ষত্র হয়ে এসেছিলো । তোমার ভাগ্যাকাশে এমন নক্ষত্রের উদয় তোমার আল্লাহর দয়ার-ই প্রমান । আল্লাহ তোমার আমিনুরকে তোমার কাছে ২৭ বছরের অধিক আমানাত হিসেবে বুকে জড়িয়ে আদর করার ও ভালবাসার সুজোগ দিয়েছেন। এখন, মালিক তোমার কাছ থেকে আমিনুরকে মালিকের হেফাজাতে নিয়ে গেছেন । তবে আমার বিশ্বাস , তোমার থেকেও আমার মালিক আমাদের প্রিয় ভাইকে অধিক যন্ত ও মর্যাদায় রাখবেন । কেননা তিনিতো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের জন্য রক্ত দিয়েছেন ।

আব্বা ও আম্মার অভিব্যক্তি : আমার সবথেকে ভালো ছেলেটাকে তারা শহীদ করেছে । মায়ের অভিব্যক্তি ,আমি গর্বিত মা । আমার ছেলে অনেক আগে আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলো । সেদিন থেকে আমি তাকে ইসলামের জন্য দিয়ে দিয়েছিলাম ।

শেষ কথা :
বিজয় পতাকা উড্ডীন করার প্রত্যয় নিয়ে শহীদ আলী মোস্তফা, আমানউল্লাহ ,সামসুজ্জামান খান রেজা,রফিকুল ইসলাম,মোস্তফা অরিফুজ্জামান , আরিজুল ইসলাম, হোসেন আলী , ইকবাল হাসান তুহিন,আলী মোস্তফা (২), আবু হানিফ ছোটন ,আবুল কালাম ও শহীদ আমিনুর রহমান ভাইয়ের উত্তরসরী হিসেবে শাহদাতের তামান্না নিয়ে খালিদ ,তারিক ও মুসার মত সাহসীকতা ও হিম্মত বুকে নিয়ে দুনিয়ার লোভ-লালসা পিছনে ফেলে আমরা সামনের দিকে এগুয়ে চলছি । শাহদাৎ যাদের অদম্য বাসনা ,তাদের রুখতে পারে এ সাধ্য কার ?

আমরা পৃথিবীতে এসেছিলাম শহীদ হওয়ার জন্য । প্রতিটি গোলাপের মাঝে আমরা আমাদের শহীদের অস্তিস্থ খুজে পাই । আমরা আপনাদেরকে ভুলিনি । যে নষ্ট পৃথিবী আপনাদেরকে আমাদের থেকে অন্য এক ভূবনে চলে যেতে বাধ্য করেছে , সে নষ্ট পৃথিবীর ধংসস্তুপে একটি নতুন পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি । যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে আপনারা ছুটে বেড়াতেন দিন-রাত । একই স্বপ্ন বুকে নিয়ে আজও লাখো তরূন এগুয়ে চলেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে । আপনারা একটুও চিন্তা করবেন না , নতুন সূর্যদয়ের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব দিগন্তে ।

আল্লাহ বলেন ,
قَاتِلُوۡهُمۡ يُعَذِّبۡهُمُ اللّٰهُ بِاَيۡدِيۡكُمۡ وَيُخۡزِهِمۡ وَيَنۡصُرۡكُمۡ عَلَيۡهِمۡ وَيَشۡفِ صُدُوۡرَ قَوۡمٍ مُّؤۡمِنِيۡنَۙ‏
তাদরে সাথে লড়াই করাে, আল্লাহ‌ তােমাদরে হাতে তাদরে শাস্তি দবেনে, তাদরেকে লাঞ্ছতি ও অপদস্ত করবনে, তাদরে মােকাবলিায় তােমাদরে সাহায্য করবনে এবং অনকে মুমনিরে অন্তর শীতল করে দবেনে। (আত তওবাঃ ১৪ )
সর্বশেষ মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করে ,নিজেদের সকল কষ্টকে ভুলে দৃপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করতে চাই - আল্লাহর এ আন্দোলনকে অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রহমতের চাঁদর দিয়ে আবৃত করবেন এবং বিজয় দান করবেন ।, ইনশায়াল্লাহ ।

এসো কুরআনের পথে
এসো রাসুলের পথে , যে পথ মিশে গেছে জান্নাতে ........

হে আল্লাহ ,শহীদ আমিনুর ভাই সহ সকল শহীদ ভাইদের শহীদ হিসেবে কবুল করে নিন। শাহদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন । জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন ।( আমিন )