বুধবার, ০৭ মার্চ ২০১৮

মোস্তফা মনোয়ার

মালেক চাচাকে দেখিনি কিন্তু যেভাবে চিনেছি

তখনও আমরা অনেক ছোট। যতটুকু মনে পড়ে মাদ্রাসায় যাওয়া শিখেছি। মানুষ ছোটবেলায় যাদের আদর আর স্নেহে বড় হয় তাদের মধ্যে অন্যতম চাচা, ফুফু, মামা ও খালা। কিন্তু একমাত্র ফুফু ছাড়া আমি এরকম আর কাউকে পাইনি। তবে সেই ছোটবেলা থেকেই শুনেছি শহীদ আবদুল মালেক নামে আমাদের একজন চাচা ছিলেন। যিনি ছিলেন খুবই মেধাবী ছাত্র। গ্রামের শিক্ষিতজনেরা পড়ালেখার বিষয় এলেই বলতেন তোমাদেরকে ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে, শহীদ মালেকের মতো ছাত্র হতে হবে। গ্রামের কেউ বলত শহীদ আবদুল মালেক, আবার কেউবা বলত শহীদ মালেক। আমরা শহীদ শব্দটা চাচার নামের অংশই মনে করতাম। তখনও জানতাম না এই শহীদ শব্দটা তার শাহাদতের পর যোগ হয়েছে। এটাও জানতাম না যে, আল্লাহর কাছে শাহাদাত বা শহীদের মর্যাদা কতটা বেশি।

আমরা জানতাম না যে আমার চাচা কত মানুষের সাথে মিশেছেন, কত মানুষ তাকে সম্মান করত। তার ভালোবাসায় সিক্ত মানুষগুলোই আজ আমাদেরকে অনেক বেশি সম্মান করে। যখন বড় হতে থাকি এবং অনেক কিছুই জানতে শিখি। আট ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমরা ছোট চার ভাই একেবারে পিঠাপিঠি ছিলাম। পড়ালেখাও করতাম থ্রি, ফোর, ফাইভ এবং সিক্সে। একসাথে পড়তে বসা ও খেলাধুলা করা ছিল আমাদের নিত্যদিনের কাজ। বাবা-মা মাঝে মধ্যেই মালেক চাচার প্রখর মেধা ও পড়ালেখার প্রতি যে প্রচণ্ড মনোযোগ ছিল তা আমাদের কাছে তুলে ধরতেন। তারা বলতেন, মালেক কখনো কোন ক্লাসে সেকেন্ড হয়নি বরং সবসময় ছিল প্রথম। আর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বেশিদিন পড়তে চাইতো না।

কোন ক্লাসে প্রথম হওয়ার পর সে বলতো, আমি আর এখানে পড়তে চাই না, ভালো স্কুলে যেতে চাই, মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চাই। তাই একেবারেই বাড়ির কাছের খোকশাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বাদ সাধে তিন আর ওখানে পড়বেন না। পড়বেন এলাকার স্বনামধন্য গোশাইবাড়ী স্কুলে। বুঝানোর মতো কাউকে না পেয়ে দাদা মালেক চাচাকে নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নিকট গেলেন। সব কিছু খুলে বললেন এবং পরামর্শ চাইলেন । নিজ প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফলের জন্য আবদুল মালেকের মতো মেধাবী ছাত্রের বড় প্রয়োজন, সে কথা চিন্তা না করে তিনি বলেন, দ্যাখেন, “আবদুল মালেক আমার প্রিয় ছাত্র। সে কোনো সাধারণ ছাত্র নয়, তার এই বয়সে যা জানার কথা সে তার চেয়েও বেশি জানে। সুতরাং তার মেধা বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। আমার দোয়া থাকবে।”

প্রধান শিক্ষকের কথায় মালেক চাচা সন্তুষ্ট হলেও দাদা-দাদী তাদের কনিষ্ঠ ও আদরের সন্তানের ব্যাপারে চিন্তায় পড়ে গেলেন। গোশাইবাড়ী স্কুল প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের পথ। যোগাযোগব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, যে রাস্তাঘাট ছিল না বললেই চলে। স্কুলপথে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকতো। এই ছোট বয়সে সে কিভাবে যাতায়াত করবে? কিন্তু কে আছে যে জ্ঞান পিপাসু আবদুুল মালেককে বুঝাবে? যাই হোক, উপায়ান্তর না পেয়ে দাদা তাকে সেখানে ভর্তি করে দিলেন। চাচা নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? এতো ছোট মানুষ ছিল যে, পানিপথ পাড়ি দিতে তাকে অন্যের সহযোগিতা নেয়া লাগতো। কোনদিন কোন ছাত্র, আবার কোনদিন কোন পথচারী তাকে পার করে দিত। প্রখর মেধা ও প্রবল ইচ্ছার কারণে সবাই তাকে উৎসাহিত করতো। সবাই স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা করলেও তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি স্কুলের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এত অসচ্ছল ছিল যে, তাকে মেসে রেখে পড়ানোর মতো কোন সামর্থ্য দাদার ছিল না। অর্থনৈতিক অনটনের কাছে মাথা নত না করে জ্ঞানপিপাসু শিশু আবদুল মালেক ৪র্থ শ্রেণী পড়া অবস্থায় পাশের জোড়খালি গ্রামের মাওলানা মহিউদ্দীনের বাড়িতে লজিং থাকা শুরু করলেন।

জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ ক্ষণজন্মা এই শিশু সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফলে তিনি ৫ম শ্রেণীতে বৃত্তি পান। পরে ১৯৬০ সালেও জুনিয়র স্কলারশিপ পেয়ে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়লেন। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্র, শিক্ষক ও সুধীমহলে আবদুল মালেক প্রিয় ছাত্রে পরিণত হলেন। এবার যথারীতি বায়না ধরলেন তিনি আর এখানে পড়বেন না। এখন তার টার্গেট বগুড়া জিলা স্কুল। ভর্তিও হলেন সেখানে। এবার সেখানেই শুধু সেরা রেজাল্ট নয় বরং ১১তম বোর্ডে স্ট্যান্ডও করলেন। নিজ জেলায় সেরা ছাত্রের কৃতিত্ব অর্জন করে বিভাগীয় শহর রাজশাহী গভ. কলেজে ভর্তি হন। সেখানেও এইচএসসিতে কলেজের সেরা ছাত্র ও ৪র্থতম বোর্ডে স্ট্যান্ড করলেন। এরপর ভর্তি হলেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামেস্ট্রিতে। সেখানেও তিনি বিভিন্ন ইয়ারের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। স্কলারশিপের টাকা দিয়ে নিজের পড়ালেখা ও বাবা- মাকে সহযোগিতা করার পরও তিনি এত সুন্দর রেজাল্ট করেন। অভাব অনটনসহ সব প্রতিকূলতাই যেন তার প্রখর মেধা ও প্রবল ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে ।

তার এ অসাধারণ মেধা ও যোগ্যতার কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়, আমাদের ক্যারিয়ারকে সুন্দর ও আন্দোলনমুখী করে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতেন। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমার বড় তিন ভাই ছাড়া আমরা কেউ মালেক চাচাকে দেখিনি। ছোটবেলা থেকে চাচাকে দেখতে না পেলেও তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানার সুযোগ পেয়েছি। প্রতি বছর সংগঠন ১৫ আগস্টকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয় তন্মধ্যে কুরআনখানি ও আলোচনা সভা অন্যতম। আর এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জায়গা থেকে গুণীজন, ছাত্র, শিক্ষক, সংগঠক, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব¡শীলসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। আলোচকগণ সমসাময়িক বিষয়সহ তার জীবনীর ওপর স্মৃতিচারণ করেন। প্রত্যেকের কথায় শহীদ আবদুল মালেকের অসাধারণ মেধা, সংগঠনের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা, সহজ সরল জীবন যাপন ও শাহাদাতে তামান্নার কথা উঠে আসে। সাথে সাথে ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বের কথাও ফুটে ওঠে।

তাদের আলোচনায় উঠে আসে, শহীদ আবদুল মালেক সেরা বিদ্যাপিঠের সেরা ছাত্র হওয়ার পরও মনের দিক থেকে ছিলেন নিরহঙ্কার। তার জীবনযাপন ছিল একেবারে সহজ সরল। একটি মাত্র পাজামা আর পাঞ্জাবিই ছিল তার অধিকাংশ সময়ের পোশাক। সারাদিন কাজ করে রাতের বেলায় ক্লান্ত শরীরের কথা না ভেবে সেই একমাত্র পাজামা-পাঞ্জাবি ধোয়া ছিল তাঁর রুটিন মাফিক কাজ। রাতের বেলায় নিজ হাতে তিনি তা পরিষ্কার করতেন। যেন পরদিন তা আবার পরা যায়। কোনদিন একটু বেশি সময় পেলে কাপড়টি শুকিয়ে বালিশের নিচে রেখে লন্ড্রির কাজও সেরে নিতেন। তাঁর পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি চলাফেরায় এসব কিছুতেই বোঝা যেত না। কোন এক রাতে সেটি ধোয়া সম্ভব না হওয়ায় সকালে ধোয়া পাঞ্জাবি আধা ভেজা অবস্থায় গায়ে জড়িয়ে তিনি কার্যকরী বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর একটি মাত্র পোশাক, দীন-হীনতা কোন কিছুই যেন তাঁকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ও দায়িত্বশীলের আনুগত্য থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সহজ সরল জীবন যাপনের পরও তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ, যোগ্যতা, প্রতিভা, আমল-আখলাক ও জবাবদিহিতার মানসিকতা তাঁকে সবার নিকট প্রিয়ভাজন করে তুলেছিল।

শহীদ আবদুল মালেক জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে এত বেশি সতর্ক ছিলেন যে নিজের কষ্টের চেয়ে অন্যের কষ্টকে বড় করে দেখতেন। একবার তিনি বৃহত্তর মোমেনশাহী এলাকার জামালপুরে সফরে যান। গাড়ি থেকে নেমে বাসায় পৌঁছতে অনেক রাত হয়ে যায় । তখন সবাই ঘুমিয়ে গেছে মনে করে কাউকে না ডেকে দাঁড়িয়েই রাত কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। সকালে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য উঠে কামারুজ্জামান ভাই দেখেন তার রুমের সামনের বারান্দায় একটি হালকা ব্যাগ হাতে প্রিয় দায়িত্বশীল আবদুল মালেক দাঁড়িয়ে আছেন। কামারুজ্জামান ভাই জিজ্ঞেস করলেন কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন, ডাক দিলেন না কেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন তিনটার দিকে পৌঁছেছি। ভাবলাম সকালে তো ফজর নামাজ পড়তে উঠবেই, তা ছাড়া চিন্তা করলাম সাংগঠনিক কাজের চাপ যাচ্ছে, অনেক পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়েছ, তোমার ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে লাভ কী ? দু’জনের বদলে একজন কষ্ট করাই ভালো। তাই এখানে দাঁড়ালাম। আমার কোনো অসুবিধা হয়নি।

দায়িত্ব সচেতনতায়ও শহীদ আবদুল মালেক ছিলেন অনন্য। ১৯৬৭ সনের মাঝামাঝিতে ঢাকার গুলশানে একটি শিক্ষাশিবির ছিল। শিক্ষাশিবিরের দায়িত্ব ছিল মালেক চাচার ওপর। নদীর পাড়ে (এখনকার গুলশান লেক) ডেলিগেটদের জন্য অস্থায়ী টয়লেটের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কয়েকটার অবস্থা ছিল একেবারেই নড়বড়ে। দুপুরের দিকে মতিউর রহমান নিজামী ভাই জরুরি প্রয়োজনে তাঁকে ডেকে পাঠালেন। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে খুঁজে দেখা গেল তিনি একবুক পানিতে নেমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য ল্যাট্রিন মেরামতের কাজে ব্যস্ত। কতটুকু দায়িত্বসচেতনতা তাঁর মধ্যে ছিল তা এখান থেকেই অনুমেয় ।

মাঝে মধ্যেই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে সংগঠনের কর্মী ও দায়িত্বশীলরা আমাদের বাসায় আসতেন। এসেই বলতেন মালেক ভাইয়ের কবর কোথায়? জিয়ারত করব। মেহমানদের সাথে আমরাও কবরের পাশে দাঁড়াতাম, দেখতাম ভাইয়ারা হু হু করে কাঁদতেন আর দোয়া করতেন। আবার কখনো কেউ সরাসরি গিয়ে কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তারপর বাসায় আসতেন। আমরা বুঝতেই পারতাম তারা কবর জিয়ারত করে এসেছেন। কারণ তখনো তাদের চোখের কোণে টলমল করা অশ্রু দেখতে পেতাম। কী যে ভ্রাতৃত্ব, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তা না দেখলে বোঝা যাবে না। আমরা গিয়ে বাবাকে মেহমানদের কথা বলতাম। বাবা আসা মাত্রই দেখতাম কেউ সালাম, শ্রদ্ধা আর কোলাকুলিতে ব্যস্ত। তারপর তারা বাবার চারপাশে ঘিরে বসে মালেক চাচা সম্পর্কে জানতে চাইতেন। বাবা যখন তার সম্পর্কে বলতেন তখন দেখতাম ভাইয়ারা কথাগুলো এমন মনোযোগের সাথে শুনতেন।

অনেক সময় বাবা তার হারানো প্রিয় ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যেতেন, আর কোন কথা বলতে পারতেন না। ভাইয়াদের চোখ দিয়েও পানি ঝরতো। সেখানে একেবারে নীরবতা লক্ষ্য করতাম। পরিবেশ এমন হতো যে সেখানে নতুন করে কেউ হারিয়ে গেছে। শুধু দেশীয় নয় বহির্বিশ্বের অনেক সুধীজনরাও বিভিন্ন সময়ে আসতেন। তারাও একইভাবে দু’হাত তুলে চিৎকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। একজন মানুষ তার আপন ভাই মৃত্যুবরণ করলে এভাবে কাঁদে কি না আমার জানা নেই, এতদিন তার মৃত্যুর শোক ধরে রাখে না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই মালেক চাচার প্রতি তার সাথীদের যে শ্রদ্ধা দেখে আসছি তাতে মনে হয় না এ ভ্রাতৃত্ব কখনো পরিবর্তন হবার। আসলে তিনি কোন ভ্রাতৃত্বইবা গড়ে গেছেন, আর কোন ভ্রাতৃত্বের পরশই বা রেখে গেছেন যে, দেশী-বিদেশীসহ সর্বস্তরের মানুষ তার অনুপস্থিতিতে আজ ব্যথিত, ব্যথিত তার পরিবার।

একটি প্রস্ফুটিত ও সুবাসিত গোলাপ অকালে ঝরে যাক, এটা কখনো বাগানের মালিক মেনে নিতে পারে না। কিন্তু মালিক তার বাগানে রোপণকৃত ফুলবৃক্ষের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি গ্রহণ করতে পছন্দ করে। পরওয়ারদেগার হয়তো তাঁর জমিনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে সুন্দর, প্রস্ফুটিত এবং তার পছন্দনীয় আবদুল মালেক নামের ফুলটিই গ্রহণ করেছেন। এতে কোন দুঃখ নেই। কারণ তার রক্তে ভেজা জমিনে যদি আল্লাহর দ্বীন কায়েম হয় এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর শহীদ আবদুল মালেকের তামান্নাও ছিল জীবন বিলিয়ে দিয়ে যুবসমাজকে আল কুরআনের পথে ডাকা। তাই তো তিনি যথারীতি বলেছেন, “আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে ইসলামের দিকে আমার ডান হাত দিয়ে ডাকবো, ইসলামের শক্ররা যদি আমার ডান হাত কেটে ফেলে তাহলে বাম হাত দিয়ে ডাকবো, ওরা যদি আমার বাম হাতও কেটে ফেলে দুটো পা দিয়ে হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার দুটো পা-ও কেটে ফেলে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছেলেকে ইসলামের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার চলার গতিকেও স্তব্ধ করে দেয় তাহলে আমার যে দু’টি চোখ বেঁচে থাকবে সে চোখ দু’টি দিয়ে হলেও ছাত্রদেরকে ইসলামের প্রতি ডাকবো। আমার চোখ দু’টিকেও যদি ওরা উপড়ে ফেলে, তাহলে হৃদয়ের যে চোখ রয়েছে তা দিয়ে হলেও আমি আমার জীবনের শেষ গন্তব্য জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকবো।” তিনি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আল্লাহর পথে ডেকে গেছেন। আজ সেই রঞ্জিত পথে জালিমশাহিদের নির্যাতনে শত শত ভাইয়ের জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে।

আজ আবদুল মালেক আমাদের মাঝে অনুপস্থিত কিন্তু তার দেখানো শিক্ষা আমাদের কাছে পরিষ্কার। যিনি জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন কিন্তু বাতিলের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। দুর্বল ঈমান নিয়ে আমরা বেঁচে থাকবো আর ইসলামের শক্ররা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করবে, তা হতে পারে না। হে আমাদের প্রভু! হে আমাদের রব! আমাদরেকে তোমার দ্বীনের পথে অবচিল রাখো এবং কন্টকাকীর্ণ এ যাত্রাপথকে তুমি আমাদের জন্য সহজ করে দাও। আমিন ।

লেখক : শহীদ আবদুল মালেকের ভাতিজা ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

সংশ্লিষ্ট