সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

সরকারের দু:শাসনে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেন, দখলদার সরকারের সার্বিক অপশাসন ও ধ্বংসাত্বক কর্মে জাতি আজ গভীর ভাবে শঙ্কিত। জনগণ গভীর অনিশ্চয়তায় দিন যাপন করছে। সরকারের দু:শাসনে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

তিনি আজ রাজধানীতে শহীদ আব্দুল মালেক মিলনায়তনে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমানসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, ২০১৭ সাল আওয়ামী সরকারের দুংশাসন ও অপকর্মের আরেকটি বৎসর। সরকারের লাগামহীন অপশাসন সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সার্বিক জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেট কর্তৃক চাল, পেয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের নজীরবিহীন উর্দ্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। বিরোধী মতের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ণ, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের খুন সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুম, নির্যাতন, দলবাজী ও হয়রানীতে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বললেও নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী মত দমনে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কর্মকান্ডে তারা শঙ্কিত হয়ে নেতা-কর্মীদেরকে সর্বোপরি নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করছে। অন্যদিকে নির্বিচারে নিজ ও ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন, বদরুলদের প্রকাশ্য ছাত্রীকে কুপানো, স্বামীকে আটকে রেখে নববধু ধর্ষণ, ছয় নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ ও ভিডিও প্রচার, তরুণীকে ধর্ষণের পর লাশ গুম, শিশু ধর্ষণ করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হওয়ার মত লজ্জাজনক ঘটনা নিজেদের মধ্যে সংযোজন করেছে ছাত্রলীগ। এসব ধারাবাহিক অপকর্মের ব্যপারে সরকার, প্রশাসন ও পুলিশের পাশ কাটানো ভূমিকায় মনে হয় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের কাছে তরুণীদের সম্ভ্রম বিক্রি ও নির্বিচারে খুন সন্ত্রাসের লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। ফলে তারা দেশে ধর্ষণ, ইভটিজিং, খুন ও সন্ত্রাসকে মহামারিতে রুপ দিয়েছে।

শিবির সভাপতি বলেন, আজ লাখো শিক্ষার্থী এক বিভীষিকাময় সময় অতিক্রান্ত করছে। ছাত্রলীগ ও সরকার দলীয় লোকজন কতৃক ২য় শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রতিটি পরিক্ষার লাগামহীন ও নজিরবিহীন প্রশ্নফাঁস এবং ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। অব্যাহত প্রশ্নফাঁস ও এই জাতি বিনাশী অপতৎপরতা বন্ধ করতে সরকারের রহস্যজনক ব্যর্থতায় পুরো জাতি আজ শঙ্কিত। প্রশ্নফাঁসের ঘটনার সঙ্গে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও সরকারের কর্মকর্তাদের নাম আসলেও দলীয় বিবেচনায় বিচারের মুখোমুখি না করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে মাদকের বিস্তার, লাগামহীন টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজী, আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীন কোন্দল, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। বিরোধী সংগঠনের নেতা কর্মীদেরকে হল ও ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে পাশ্চাত্য ভাবধারায় একটি ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী ভাবধারায় বিপরীত স্রোতে ধাবিত করার নির্লজ্জ অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

শিবির সভাপতি বলেন, দেশের রাজনৈতিক বিভক্তি এবং গভীর এক আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আগামী বছরে পা রাখছে। এ অবস্থায় জাতির প্রত্যাশা দেশে বিভেদ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখা। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ফ্যাসীবাদী চরিত্র, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিহিংসা ও অগণতান্ত্রিক চর্চা ছেড়ে নতুন ভাবে অপরূপ রূপময় ও খনিজ সম্পদে ভরপুর এই প্রিয় দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। ইসলামী ভাবধারার আলোকে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী কোন কর্মকান্ড কোন ভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বরং সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রশিবির প্রতি বছরের মত এবারো সমৃদ্ধ দেশ গড়ার সকল কাজ অব্যাহত রেখেছে। গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে এই সংগঠন ছাত্রসমাজের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি সফল হয়েছে। সামনের দিনেও ছাত্রশিবিরের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ।

সংশ্লিষ্ট