বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০১৭

ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কাছে সারাদেশে সাধারণ ছাত্ররা জিম্মি হয়ে পড়েছে

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, একের পর এক নজিরবিহীন অপকর্মের ঘৃন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এখন পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসের দৃষ্টান্তমূলক কোন বিচার হয়নি। উল্টো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে প্রশ্রয় দিয়ে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাস গুলোতে তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কাছে সারাদেশে সাধারণ ছাত্ররা জিম্মি হয়ে পড়েছে।

তিনি আজ কুমিল্লার এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির কুমিল্লা অঞ্চলের সদস্য প্রার্থী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কলেজ সম্পাদক মারুফুল ইসলামের পরিচালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, কুমিল্লা মহানগরী সভাপতি শাহাদাত হোসেনসহ মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ।

শিবির সভাপতি বলেন, দেশজুড়ে খুন, হত্যা, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ণে এখন এক ত্রাসের নাম ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও তান্ডবলীলায় ক্যাম্পাসগুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টেন্ডারবাজি,প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস, শিক্ষক লাঞ্চনা মাদক, ইভটিজিং, অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাস ও অপকর্মের চারণ ভূমিতে পরিণত করেছে। সরকারের মদদপুষ্ট ও পুলিশের বলয়ে থাকা এই গুটি কয়েক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে রেখেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেপরোয়া ছাত্রলীগ পুলিশ ও প্রশাসনের অনৈতিক সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে ভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন, হামলা, নির্যাতন করে যাচ্ছে। যখন তখন হামলা করছে নিরপরাধ ছাত্রদের উপর। বহু ছাত্রনেতা ও সাধারণ ছাত্রকে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। নির্বিচারে লুটপাট করছে ছাত্রদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা আরিফুল ইসলামকে নির্মম নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এর আগেও রাবি’তে ১৩জন নিরপরাধ ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রদেরকে বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে ছাত্রলীগের ইচ্ছামতই সাধারণ ছাত্রদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। যা ক্যাম্পাস গুলোকে ভীতির উপত্যকায় পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের পরিবর্তে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ঘৃন্য হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তারা ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়ে উল্লাস করেছিল। মারধর ও অপদস্ত করেছে অনেক সম্মানিত শিক্ষকদে। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গুলোতে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বার বার বন্ধ হয়েছে। এদের তত্ত্ববধানেই বার বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত জড়িত, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী বহুবার দেখেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব অপকর্মের কোন বিচার হয়নি। সরকার, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতি অব্যাহত মদদ ও সহযোগিতায় প্রমাণ হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে।

তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও মদদ দাতাদের সব কর্মকান্ডই ছাত্রজনতা দেখছে। ছাত্রসমাজ কোন ভাবেই এই অপতৎপরতা মেনে নেবে না। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ক্যাম্পাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসে ডিজিটাল জালিয়াতিতে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্যাম্পাসে সবার সহবস্থান ও শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

শিবির সভাপতি বলেন, ছাত্রশিবির বরাবরই সাধারন ছাত্রদরে অধিকাার আদায়ে সোচ্চার। ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন, বেতন বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি সহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে শিবির সব সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আগামী দিনেও সাধারণ ছাত্রদের যেকোনো অধিকার আদায়ে ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ

সংশ্লিষ্ট