মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭

ঝিনাইদহে হত্যাকাণ্ডের সাথে শিবির নেতা এনামুলকে জড়িয়ে পুলিশের বক্তব্যের প্রতিবাদ

ঝিনাইদহে ধর্মান্তরিত হোমিও চিকিৎসক খাজা ছমির উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সাথে শিবির নেতা এনামুল হককে জড়িয়ে পুলিশি মিথ্যাচার ও রিমান্ডের নামে জোর পূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন বলেন, ঝিনাইদহ পুলিশের একের পর এক মিথ্যাচারে পুরো জাতি আজ বিস্মিত। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, "শিবির নেতা এনামুল হক শনিবার পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে ছমির উদ্দিন হত্যায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন। পরে তার দেখিয়ে দেওয়া স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়"। যা চরম মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট নাটক ছাড়া কিছু নয়। আমরা পুলিশের এই মিথ্যা ভিত্তিহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মূলত গতবছর ঝিনাইদহে পুলিশি বর্বরতাকে আড়াল করতেই এই মিথ্যা নাটকের অবতারণা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গতবছর পুলিশি বর্বরতায় ঝিনাইদহ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। মুলত: একের পর এক সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ ছাত্রশিবিরের উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১০ শিবির নেতা কর্মীসহ প্রায় ৩৪ জন নিরপরাধ মানুষ। এছাড়া পুলিশের গণগ্রেপ্তার ও গুমের শিকার হন আরো অনেকেই। কিন্তু হলি আর্টিজান হামলার পর ঝিনাইদহে সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খুলতে থাকে। হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গি নিবরাস দীর্ঘদিন ঝিনাইদহে অবস্থান করে বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় বাড়ির মালিক। যা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ, পুলিশ তাদের এই জঘন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বৈধতা দিতে নির্যাতন চালিয়ে জোর পূর্বক স্বীকারোক্তি নাটকের অবতারণা করে। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ দেড় বছর পর গত ১৮ জুলাই পুলিশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এনামুলকে ছমির খাজা হত্যা মামলার সাথে জড়িয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। পুলিশ রিমান্ডের নামে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের ব্যর্থ হলে গতকাল ২৪ জুলাই তাকে আবারো আদালতে হাজির করে রিমান্ড চায়। কিন্তু আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে। কিন্তু রিমান্ড চলাকালীন সময়ে পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় বলে এনামুল তার আইনজীবীদের জানায়। এই স্বীকারোক্তির প্রক্রিয়া ও বক্তব্য পুরোটাই পুলিশের সাজানো এবং জঘন্য মিথ্যাচার, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, দেশের জনগণ সজাগ এবং সচেতন। পুলিশের এসব নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা জনগণ ভুলে যাবে না। সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি গুম খুনের জন্য নীতিহীন দোষী পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় বা অন্য কোন উপায়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।

আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দীর্ঘ পথ চলায় কোন প্রকার জঙ্গিবাদের সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম সম্পর্ক কেউ দেখাতে পারেনি বরং সকল মত ও পথের মানুষের প্রতি শিবির সর্বাবস্থায় সহানুভূতিশীল। জঙ্গিবাদ ছাত্রশিবিরের আদর্শের বিরোধী। হঠাৎ করে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে এই নিকৃষ্ট মিথ্যাচার জনগণ বিশ্বাস করবে না উল্টো পুলিশের প্রতি জনগণের ন্যূনতম আস্থার জায়গাটিও ধ্বংস করবে। আমরা পুলিশ কর্মকর্তার দেয়া এই মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। 

সংশ্লিষ্ট